Home / জাতীয় / হায়েনার দল যেন বাঙালির অর্জন কেড়ে নিতে না পারে: প্রধানমন্ত্রী
হায়েনার দল

হায়েনার দল যেন বাঙালির অর্জন কেড়ে নিতে না পারে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের প্রকৃত ইতিহাস শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘কোনো হায়েনার দল আবার যেন বাঙালির অর্জনগুলোকে কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশে বর্তমানে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তার প্রত্যেকটি ধারার সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে তাদের জন্য কাজ করে যেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (১৮ মার্চ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের দেশের ইতিহাসটা শেখাতে হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা দিবস, বাংলা ভাষার জন্য এ দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে গেছে। যে দিবসটা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এ বিজয় এবং স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে যে আত্মত্যাগ, সেই আত্মত্যাগ সম্পর্কেও সবাইকে জানতে হবে। এটা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে জানাতে এবং শেখাতে হবে। তাহলেই তাদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবসসহ সব জাতীয় দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে দীক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি বলবো- আমাদের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নিতে হবে, সবাই যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই সত্যগুলো জানতে পারে। কারণ ২১টি বছর তো সবকিছুই নিষিদ্ধ ছিল। সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আজকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের যে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ ভাগেরও ওপরে ছিল। সেখান থেকে আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। সেনসাস রিপোর্ট বের হলে এ হার আরও কমে আসতে পারে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়েছে। এর পরপরই পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে। আজকের এ দিনে আমি সবার কাছে আহ্বান জানাবো, নিজ পরিমণ্ডলে কিছু না কিছু উৎপাদন করুন। এ বার্তাটা শুধু আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য নয়, বরং আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সমগ্র দেশের কাছে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যার যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে এবং যে যেখানে যতটুকু পারেন উৎপাদন করবেন। অর্থাৎ কারও কাছে ভিক্ষা চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ চলবে না। কারণ জাতির পিতা বলেছিলেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যে মাটি আছে এবং মানুষ আছে, তাই দিয়েই আমরা নিজেদের দেশকে গড়ে তুলবো। এটাই ছিল জাতির পিতার দেশ গড়ে তোলার সময়কার অঙ্গীকার। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে আমরা দেখিয়েছি, বাংলার মাটি অত্যন্ত উর্বর এবং আমরা চেষ্টা করলেই পারি। কিন্তু সেটাও আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ঘর বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরও দেড় লাখ ঘর তৈরির পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ৫০ হাজার ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডে পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে একটি ফান্ড করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক মালিকরা অনেকে অনুদান দিয়েছেন। যেখান থেকে দুই কাঠা জমিসহ বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। এ কাজে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘প্রত্যেকের এলাকাতেই এ ধরনের ঘর তৈরি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সময় যেমন প্রণোদনা দিয়েছি, পাশাপাশি এ ঘরগুলো নির্মাণকাজে যারা সম্পৃক্ত হয়েছে, তারাও আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়েছে। দেশের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা এবং গৃহহীনদের-দরিদ্র মানুষের পাশে থাকার জন্যও স্ব স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টা সবসময় মাথায় রাখতে হবে।’

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম, দলের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান প্রমুখ।

গণভবন থেকে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।