আড়াই শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে বহিরাগত ওয়ার্ড বয় ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দৌরাত্ম্য দেখা দিয়েছে। আর এসব বহিরাগতদের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
জেলার এ সরকারি হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে এসব বহিরাগত স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে সাধারণ রোগীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হলেও স্থায়ী ও কঠিনভাবে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খবর নিয়ে জানা গেছে, আড়াই শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে সরকারি ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত
স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিছন্নকর্মী রয়েছে সর্বমোট ১৪ জন। এছাড়া গত মাস থেকে জনবলের মাধ্যমে রয়েছে ৮২ জন। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালে নির্দিষ্ট এবং বহিরাগত যেসব স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন সব মিলিয়ে তাদের সংখ্যা হবে দেড় শতাধিকের উপরে। প্রতিদিন হাসপাতলে বহিরাগত দালাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কারণে প্রায় সময় বিভিন্ন ঘটনার বদনাম তাদের ঘাড়ে ও নিতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্য করা গেছে হাসপাতালটিতে জনবল এবং সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী থাকা সত্ত্বেও সেখানে বহিরাগত কিছু স্বাস্থ্য কর্মী ও দালালদের আনাগোনা প্রতিনিয়ত দেখা যায়। এসব বহিরাগতরা দালাল ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন সকাল থেকে হাসপাতালে বিচরণ করে রোগীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে দালালিতে জড়িয়ে পড়েন। অনেক বহিরাগত স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে পর্যন্ত টাকা রুজির ধান্দায় স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ শুরু করেন।
প্রথমে তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হাসপাতালে নির্দিষ্ট ব্রাদার এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে রোগীদের চিকিৎসা সেবার কাজে সহযোগিতা করেন তারপর সেখান থেকে ট্রলিতে করে রোগীকে হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়ে যান এর বিনিময়ে তারা রোগীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা কিংবা ১০০ টাকা পর্যন্ত দাবী করে টাকা চেয়ে নেন। আর সাধারণ রোগীরা কিছু না বুঝেই তারা হাসপাতালে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মী ভেবে একটু ভালো সেবা পাবার আশায় তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে বাধ্য হন। এসব বহিরাগত স্বাস্থ্যকর্মীদের কারণে প্রায় সময় হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।
গত কয়েকদিন পূর্বেও এক বহিরাগত ওয়ার্ডবয় হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাসপাতালের স্টাফরা তাকে আটক করেন।
আরও পড়ুন… চাঁদপুরে অক্সিজেন সিলিন্ডার চুরির সময় ধরা খেল ওয়ার্ডবয় সাগর
অপরদিকে দালালরা হাসপাতালের টিকেট কাউন্টার, আউটডোর এবং ইনডোরসহ বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ঘোরাফেরা করে থাকেন। আর সেখান থেকেই তারা চিকিৎসা সেবার কাজে সহযোগিতা করে রোগীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। এরপর ডাক্তাররা রোগীদেরকে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন সেসব পরীক্ষা করার জন্য তারা রোগীদেরকে হাসপাতাল সংলগ্ন বিভিন্ন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যান। আর এর বিনিময়ে তারা সেখান থেকে কমিশন পেয়ে থাকেন। এভাবেই প্রতিদিন প্রতিনিয়ত চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চলছে বহিরাগত স্বাস্থ্য কর্মী ও দালালদের দৌরাত্ম্য।
বহিরাগত এসব স্বাস্থ্যকর্মী ও দালালদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলেও অদৃশ্য কারণে দুই এক দিন পরে তারা পুনরায় একই ভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব বহিরাগত দালাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আসিবুল আহসান চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, কিছুদিন পূর্বেও আমরা বেশ কয়েকজন বহিরাগত দালালও স্বাস্থ্যকর্মীদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দেখা গেছে তারা সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে দু-তিনদিন পরই আবার বিভিন্ন অজুহাতে হাসপাতালে বিচরণ করছেন।
তিনি আরো জানান,এসব বহিরাগত দালাল ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের কিংবা আত্মীয় স্বজনদের শারীরিক যেকোনো সমস্যা দেখিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। তারপর তারা রোগীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে কৌশল খাটিয়ে তাদের কাজ করে থাকেন। দেখা গেছে কেউ যদি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসেন সেক্ষেত্রে তেমন কিছু বলাও যায়নি। এ জন্য তারা অনেকেই বুদ্ধি খাটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে আমরা চাঁদপুর মডেল থানায় বহিরাগত দালাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নামের একটি তালিকা জমা দিয়েছি।
এছাড়াও আমরা মডেল থানা পুলিশকে বলে রেখেছি তারা যেনো অন্তত দুই-তিন দিন পর পর সিভিল বেশে হাসসপাতালে এসে তাদের প্রতি নজরদারি করে তাদেরকে আটক করেন।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ২৩ আগস্ট ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur