প্রযুক্তির কল্যাণে হারিয়ে যেতে বসেছে সুন্দর হাতের লেখা। একসময় শুধুমাত্র সুন্দর হাতের লেখার জন্যই পেশাদার লেখক হিসেবে নিয়োগ পেতেন অনেকে।
যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ খোরশেদ আলম ভূঁইয়া। তিনি ১৯৭৪ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সনদ লেখক হিসেবে কাজ করছেন।
উচ্চ শিক্ষিত না হয়েও ৪৪ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন লাখো শিক্ষার্থীর অনার্স মাস্টার্সের সনদ। তিনি আশংকা করছেন দ্রুতই হারিয়ে যাবে এই পেশা।
খোরশেদ আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘স্কুল জীবনে বাঁশের কঞ্চিকে কেটে কলমের মতো করে কাগজে লিখতাম। লেখা যেহেতু সুন্দর তখন আমি পোস্টার লিখতাম। তখন মেম্বার চেয়ারম্যানরা যাদের লেখা সুন্দর তাদের খুঁজে বের করে তাদেরকে দিয়ে পোস্টার লিখিয়ে নির্বাচনী কাজ চালাতেন।’
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কারণে গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসেন মোহাম্মদ খোরশেদ আলম ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘৭৪ এর দুর্ভিক্ষের কথা আমার মতো মানুষেরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে, বুঝতে পেরেছি অভাব কী। তখন মাকে বললাম মা আমরা কী করবো? মা বললো আমরা ঢাকা চলে যাই।’
সুন্দর হাতের লেখার কারণে ঢাকায় আসার কয়েক মাসের মধ্যে চাকরি পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘তবে আমি লিখতে লিখতে এই পর্যায়ে এসেছি। সেজন্য আমার খুব গর্ববোধ হয় যে আমার নিজের না হোক আমি দেশের ভালো ভালো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদ লিখছি।’
নিজে খুব বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু এর মধ্যে লিখে ফেলেছেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষা সনদ।
খোরশেদ আলম বলেন, ‘বিখ্যাত মানুষদের সনদ যে আমি লিখেছি এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সুনির্দিষ্ট করে কারো নাম সেভাবে আমার মনে নেই। তবে ডক্টর নীলিমা ইব্রাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক এর সার্টিফিকেট আমি লিখেছি। বিখ্যাত ব্যক্তিদের সার্টিফিকেট লেখার দায়িত্বটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে দেয়।’
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সনদ লেখার কাজ করেন চারজন। এই পদে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিলো ১৯৭৯ সালে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন মানুষ কম্পিউটার প্রযুক্তির কারণে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার দিয়ে সনদ লেখানো হচ্ছে। প্রযুক্তি এসে স্থান নিয়ে নিয়েছে ফলে আমাদের হাতের লেখার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এখন সুন্দর লেখার জন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। ক্যালিগ্রাফির কোন পদ তৈরি হচ্ছে না। তার মানে বুঝা যাচ্ছে আমরা বিলীন হতে যাচ্ছি।’ (বিবিসি বাংলা)
বার্তা কক্ষ
০৭ অক্টোবর,২০১৮