চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৫:৫৮ অপরাহ্ন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
সদ্য প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীকে হারানোর শোক কাটেনি এখনও। তবে এর মধ্যেই শুরু হয়েছে নানা কানা-ঘুষা। কে ধরবেন সৈয়দ মহসীন আলীর হাল? কে পূরণ করবেন তার শূন্যস্থান?- এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ইতোমধ্যে শূন্য হওয়া মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অর্ধডজনেরও মুখ। তাদের নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে নীরব ও সরব আলোচনা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস পাড়া সবখানেই একটিই প্রশ্ন কে হাল ধরবেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের? কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন?
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যু হয়। এরপরেই মৌলভীবাজার-৩(সদর-রাজনগর) আসনটি শূন্য হয়ে যায়। বিধি মোতাবেক শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে এ আসনে উপনির্বাচন করতে হবে। স্পিকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক পত্র পাওয়ার পরেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণ করবে।
আগামী তিন মাসের মধ্যেই সৈয়দ মহসীন আলীর আসনে অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গণে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন অনেক নেতা ও দলীয় সমর্থকরা। সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু করেছেন নির্বাচনী তৎপরতাও। নিজ নিজ প্রিয় নেতাকে প্রার্থী হিসেবে দেখার আশা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় তুলছেন অনেকেই। তাছাড়া ভোটার, দলীয় নেতাকর্মী ও কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করছেন অনেকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আলোচনার মূল কেন্দ্রে রয়েছেন প্রয়াত মন্ত্রীর সহধর্মিনী সৈয়দা সায়রা মহসিন ও তার মেয়ে সাবরিনা শারমিন। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় বিশেষভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তাদের নাম। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরো যারা আলোচনায় উঠে এসেছেন তারা হলেন- বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক ও সাবেক হুইপ আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ফিরুজ, সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, পুলিশের সাবেক এআইজি ও জনতা ব্যংকের পরিচালক সৈয়দ বজলুল করীম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কামাল হোসেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা এমএ রহিম শহীদ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ।
সূত্রমতে, সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুর পরে তার শূন্যস্থান পূরণ করতে তার স্ত্রী সৈয়দা সায়লা শারমীনকে প্রার্থী কারার বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ইতোমধ্যে শলাপরামর্শ করছেন। এমনকি প্রয়াত মন্ত্রীর দুই মেয়ে সৈয়দা সায়লা শারমীন ও সৈয়দা সাবরিনা শারমীন পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়য়টি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছেন বলে জানান মন্ত্রীর ছোটভাই সৈয়দ সলমান আলী।
এদিকে, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ছোট মেয়ে সৈয়দা সাবরিনা শারমিনের ফেসবুকে আবেগময়ী স্ট্যাটাস লেখা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা চলছে। মন্ত্রীর মেয়ে সাবরিনা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাবা, তোমার পরিচিতমহলে আমাকে পরিচয় দিতে ছেলে বলে। সে আমি তোমার স্বপ্ন পূরণে তোমার ভালোবাসার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবসেবায় দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
সাবরিনা এ ধরনের স্ট্যাটাস দেয়ার পর থেকে তাকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকার মানুষের জল্পনা-কল্পনা ডালপালা ছড়াচ্ছে।
সূত্রমতে, ১৯৯৮ সালে কাউন্সিল ও সম্মেলনের পর থেকে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। বিভক্তির শুরুতে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদ্য প্রয়াত সৈয়দ মহসিন আলীর নেতৃত্বে দুভাগ হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ।
তবে রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন আজিজুর রহমান। জেলা পরিষদ প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণের পর আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। বর্তমানে তার অনুসারীরা সৈয়দ মহসীন আলীর শূন্যস্থানে তাকে পেতে ও দেখতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে।
এছাড়া ইতোমধ্যে রাজনীতির মাঠে তৎপর হয়ে ওঠা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ উপনির্বাচনে প্রার্থীতার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। বাংলামেইলকে নেছার আহমদ বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। আমার তীক্ষ্ম অভিজ্ঞতা থেকেই এখন মন্ত্রীর শূন্যস্থান পূরণ করতে চাই।
অপরপ্রার্থী পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক(এআইজি) সৈয়দ বজলুল করিম বলেন, ‘প্রয়াত মহসিন আলী আমার চাচাতো ভাই। আমরা একই পরিবারের সদস্য। এ ছাড়া আমরা একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি সবই করেছি। এলাকার লোকজনকে দেয়া কমিটমেন্ট থেকে আমি প্রার্থী হতে চাই।’
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি কামাল হোসেন মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করলেও আর বেশি কিছু বলতে নারাজ। তবে তার অনুসারীরা ইতিমধ্যে তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় থাকা মো. ফিরুজ, সুব্রত পুরকায়স্ত ও এমএ রহীম শহীদও রয়েছেন বেশ আলোচনায়।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে প্রায় ৩৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে বিজয়ী হন সৈয়দ মহসীন আলী। এর আগে এ আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চার চারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক ওই অর্থমন্ত্রী। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ মহসিন আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।