দুই দিন মিলে এক উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তি আর বর্ষবরণ। বাঙালির প্রাণের সাথে মিশে থাকা নানা আয়োজনে ভরা দুটি দিন। একটি বছরের শেষ। আরেকটি বছরের শুরু।
দুই দিনকে ঘিরে ভিন্ন আয়োজন, ভিন্ন ধারার আচার-অনুষ্ঠান। আবার একই আনন্দমেলা বসে দুই দিনকে গেঁথে দেয় একসুতায়।
দুটি দিনই বাংলার উৎসব। সারা বাংলায় এক উৎসব। সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের এক হয়ে যাওয়ার এক শ্রেষ্ঠ আয়োজন।
চৈত্র সংক্রান্তির সবচেয়ে আনন্দের বিষয়টি হচ্ছে হাতে যত কাজ, সব দায়-দায়িত্ব দেনা-পাওনা সবকিছু চুকেবুকে তবে ঝাড়া হাত পা। চাষির পাটের ক্ষেতে নিড়ানি দেয়া শেষ, দোকানির খাতায় হালনাগাদ হয়ে গেছে সব হিসাব নিকাশ। চলে মিষ্টিমুখ, আনন্দে কাটে সময়। এ এক অনিন্দ্য বাঙালিয়ানা।
গৃহস্থের ঘর-দরোজা, উঠোন আঙ্গিনা হয়েছে সাফ-সুতোর। পড়েছে নতুন মাটির লেপ। শহরেও ঘরে ঘরে সাফ-সুতরো চলে, ধোয়া-মোছা হয়।
গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে কোলাহল, হাটখোলা বটতলায় বসে মেলা। ছেলে-বুড়ো সবারই সেই মেলায় যাওয়ার তাড়া। ঘর-গৃহস্থলির নানা উপকরণ কিনে নিতে হবে, চাষির চাষের লাঙল জোয়াল, নিড়ানি, দা-কাস্তে। ছেলে-মেয়েদের হাতে পাতে পড়ে মুড়ি মুড়কি, বাতাসা-সন্দেশ আর খেলনা নানা রকমফেরের- লাটিম, নাটাই-ঘুড়ি। আকাশে উড়িয়ে ঘুড়ি নাটাই হাতে গ্রামের মাঠে মাঠে, শহরের ছাদে ছাদে চলে সুতো কাটার খেলা। গ্রামের খোলা-মাঠ প্রান্তর ঝোপ-ঝাড়ে-কাটাগাছে, শহরের অলি-গলি-ঘিঞ্জি গলিয়ে পা ছিলে ছিঁড়ে ছোটে দামাল খোকারা। সুতো ছেঁড়া ঘুড়ি ধরার পণে।
চৈত্র সংক্রান্তিতে চলে লোকগাঁথা, ধাঁধা, শ্লোক, গীত। গ্রামে দলে দলে ছেলের দল খুব ভোরে নেমে যায় ডাহুক শিকারে। একটি দুটি শিকার হলে তাতেই জমে ওঠে চড়ুইভাতি। তাতে খাবারের যতনা আয়োজন তার চেয়ে আনন্দ আয়োজনই বেশি। হৈ-হুল্লোর চেচামেচি।
ঘরে ঘরেও রান্না হয় নানা পদের খাবার। মাছ-ভাত-ভর্তা, পিঠা-পায়েশ। চৈত্র সংক্রান্তিতে চলে মুড়ি-মুড়কি, নাড়ু, লাড্ডু, খই।
গ্রামে গঞ্জে-হাটে বন্দরে-শহরে যেখানেই যত ব্যবসাপাতি সেখানেই আরেক আয়োজন। দোকানিরা তাদের ব্যবসার সব হিসাব-নিকাশ করে নেন হালনাগাদ। লালখাতায় খোলা হয়ে যায় হালখাতা। বাংলার মানুষের মানসিকতা ও স্বভাবেরও এক দারুণ প্রকাশ এই হালখাতার পদ্ধতিতে। মুখ ফুটে পাওনা অর্থ চাইতে পারেন না দোকানি। কিন্তু বছর শেষ নতুন হিসাবের খাতা খুলতে হবে। এ বছরের পাওনা অন্য বছরে নিয়ে যাওয়াও অশুভ। তাই দোকানি নিজেই আয়োজন করেন মিষ্টি-পান সুপুরির। দেনাদারও নিমন্ত্রিত। তারা আসেন মিষ্টিমুখ করেন। আর পকেটে করে আনা টানা তুলে দেন দোকানিকে। এতে পুরোনো হিসাব নিকাশ চুকে যায়। দোকানি খোলেন নতুন হিসাবের খাতা।
দোকানিরা ভাসেন আনন্দের বন্যায়। মিষ্টি-সন্দেশে ভরা মুখে মুখে ফেরে মিষ্টি কথা, হাসি-ঠাট্টা। সবাই যেনো সব গ্লানি ভুলে মেতে যান আনন্দে। এই আনন্দের রয়েছে আরও এক কারণ।
চৈত্র সংক্রান্তির এইসব নানা আয়োজনে এও থাকে মনে, আসছে নতুন বছর। মনে মনে প্রত্যাশা, হয়তো নতুন কোনও বারতা নিয়েই। মঙ্গলের চিন্তা ধরে থাকে মনে। শুভবোধ আর সুন্দরের ভাবনাকে পূঁজি করে দিকে দিকে বেজে ওঠে গান… এসো গে বৈশাখ এসো এসো…
এর মধ্য দিয়ে পাল্টে যায় ঋতু। ঋতুরাজ বসন্তের সুন্দর মনোরম আবহাওয়া পাল্টে যায়। আসে গ্রীস্মের তপ্তদিন।
এই চৈতের শেষে আর বৈশাখের শুরুর মধ্য দিয়েই এবার বিদায় নিচ্ছে ১৪২৩ শুরু হচ্ছে ১৪২৪ সন। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময়০৪:৪০ পি.এম, ১৩ এপ্রিল ২০১৭,বৃহস্পতিবার
ইব্রাহীম জুয়েল