Home / বিশেষ সংবাদ / হাটহাজারী মাদ্রাসা ও জিহাদীদের খবর পাচার করতেন ফয়সাল

হাটহাজারী মাদ্রাসা ও জিহাদীদের খবর পাচার করতেন ফয়সাল

ধারাবাহিক প্রতিবেদন- পর্ব-৩ :

সেবা সংস্থার আড়ালে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন ড. মোস্তফা ফয়সাল। তাদের গোপন কথাবার্তা আর পরিকল্পনা পৌঁছে দিতেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ এর কাছে। একই লক্ষ্যে তিনি হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার খবর ব্রিটিশদের কাছে পাচার করতেন।

গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল জানান, ‘বাংলাদেশের মাদ্রাসায় বিদেশী কোনো ছাত্র আছে কি-না, বা থাকলে কোন দেশের?’ ‘মাদ্রাসাগুলোতে জিহাদ সম্পর্কে কিছু শেখানো হচ্ছে কি-না?’ —এমন সব তথ্য তিনি পৌঁছে দিতেন এমআই-৬ এর কাছে। তিনি গিয়েছিলেন হাটহাজারীর বিভিন্ন মাদ্রাসায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েও সেখানে জঙ্গিবাদের খবরাখবর নিতেন। আর পৌঁছে দিতেন এমআই-৬ এর কাছে।

ফয়সালের সেই কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হল—

আচ্ছা, বাংলাদেশে আপনার এ্যাসাইনমেন্টের প্রাথমিক উদ্দেশ্য কী?
এখানে মাদ্রাসাগুলোতে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছিলাম। ‘হারাজাত’ (হাটহাজারী) এবং চট্টগ্রামের একটা মাদ্রাসা।

হাটহাজারী?
হ্যাঁ, হাটহাজারী একটা। আরেকটা হল পটিয়া।

‘ইউরেকা, রাবেতা হসপিটাল?’ এবং ‘আরা খান’ অর্গানাইজেশন; সেখানকার বর্তমান অবস্থা কী?
এটা জানতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম আমি। কয়েকদিনের ভ্রমণ, তথ্য সংগ্রহ। বেশকিছু কন্টাক্ট আমি ইতোমধ্যে ব্যবস্থা করে ফেলেছি সেখানে। তারা আমাকে বিশেষ তথ্য দিয়েছেন।

আপনি এখন পর্যন্ত কাদের কাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন এখানে?
আমি যার সাথে কথা বলেছি তিনি এখানে তাদের সাথে কাজ করছেন না। কক্সবাজারে এক হাসপাতালের চিকিৎসক তিনি।

তার নাম?
আমি তার নাম মনে করতে পারছি না। সৌদি আরবের অনুদানে কক্সবাজারে করা এক হাসপাতালের চিকিৎসক তিনি। আমি চট্টগ্রামের মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। ঢাকা ও সিলেটেও গিয়েছি আবু বকর নামে একজনের খোঁজে। সম্ভবত তিনি হুজির সদস্য।

আপনি আবু বকরের সাথে দেখা করতে কোথায় গিয়েছিলেন? সিলেটে? কোন স্থান?
সিলেট শহরে বিদেশী টাকায় করা এক মাদ্রাসায়। অনুদান দাতার নাম মনে নেই।

আপনি যে এ-সব জায়গায় গেলেন এবং এ-সব মানুষের সাথে দেখা করলেন, এর কারণ কী?
এক. তারা বিদেশী অর্থ সাহায্য পাচ্ছে কি-না, পেলে কোন দেশ থেকে পাচ্ছে। দুই. এ-সব মাদ্রাসায় বিদেশী কোনো ছাত্র আছে কি-না, থাকলে কোন দেশের? এ-সব মাদ্রাসায় জিহাদ সম্পর্কে কিছু শেখানো হচ্ছে কি-না— আমার এ্যাসাইনমেন্ট হল এ-সব মাদ্রাসা সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা। যে-সব অনুদানদাতা এখন অর্থ দিচ্ছেন, তাদের ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনা রয়েছে।

আপনি কি আপনার এ্যাসাইনমেন্ট ঠিকভাবে করেছেন ?
হ্যাঁ, আমি রিপোর্ট প্রস্তুত করেছি। আমাকে ও-সব জিনিস মাথায় জমা রাখতে হয়েছিল।

আপনার যোগাযোগের মাধ্যম কী ছিল?
আমি প্লেনে করে ব্যাংককে গিয়েছিলাম। সেখানে দু’জন এজেন্টের সাথে দেখা করি। তারা প্রশ্ন করে আমার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য টুকে নিয়েছেন।

ইন্টারভিউ করে, নাকি ইন্টারোগেশন করে আপনার কাছ থেকে তারা তথ্য নিয়েছেন?
হ্যাঁ, সেটি অবশ্য ইন্টারোগেশনের চাইতেও বেশী কিছু।

ইন্টারোগেশন?
হ্যাঁ, তারা খুব বিশদভাবে সব তথ্য নিয়েছে। তারা অবশ্য আনন্দিত। তারা বলেছে, এই কাজটা আমার জন্য ভালই ছিল। আমি মনে করি, এক বছর পর তারা আমাকে আবার কক্সবাজার-ঢাকায় পাঠাবে হুজির সদস্যদের সাথে দেখা করতে। তারা জানতে চায়— কারা হুজির সদস্য? তাদের অর্থ দিচ্ছে কে? তারা কোথায় যাচ্ছে জিহাদ করতে? তাদের নেতারা কী পরিকল্পনা করছেন ভবিষ্যতের জন্য?… ইত্যাদি।

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৬:২২  পিএম, ০৩ নভেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

এমআরআর