Home / বিশেষ সংবাদ / হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কেন্দ্রিক বাজার এলাকাই আজকের ‘হাজীগঞ্জ ’
minar-

হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কেন্দ্রিক বাজার এলাকাই আজকের ‘হাজীগঞ্জ ’

মকিমাবাদের প্রাণকেন্দ্র হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ কেন্দ্রিক বাজার এলাকাই-আজকের হাজীগঞ্জ। যা মকিমাবাদ, হাজীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ থানা, হাজীগঞ্জ উপজেলা এবং হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ নিয়েই কালের পরিক্রমায় পরিশীলিত নামে প্রতিষ্ঠিত হয়-আজকের এ ‘হাজীগঞ্জ’।

এগার’শ পঞ্চাশ বঙ্গাব্দের কাছাকাছি সময়ে পবিত্র আরব ভূমি হতে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে হাজী মকিমউদ্দিন (রহ.) নামে একজন বুজর্গ ওলিয়ে কামেল বর্তমান বড় মসজিদের মেহরাব সংলগ্ন,সে সময়ের বিস্তৃর্ণ বিরান ভূমির একটু উঁচু স্থানে আস্তানা বা বসতী স্থাপন করেন। তিনি পারিবারিক পর্দার বিবেচনায় দু’এক জন নব্য মুসলমান নিয়ে কখনো কখনো‘ ‘’চৌধুরী’ ঘাটে নামাজ আদায় করতেন। ওনার মৃত্যুর পর বর্তমান বড় মসজিদের মেহরাবের ডান দিকের পশ্চিম অংশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তিনি এ এলাকায় প্রথম ইসলামের আবাদ করেন বিধায় তাঁর সম্মানে গ্রামের নামকরণ হয় ‘ মকিমাবাদ ‘।

হযরত মকিমউদ্দিন রহ.এর পুত্র হযরত মতিউদ্দিন রহ.। তারঁই পুত্র হযরত মনিরুদ্দিন মনাই হাজী রহ. এর আদর্শ হিসেবে ব্যবসায়ী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বর্তমান বড় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতার মাজারের পূর্বে এবং মসজিদের দক্ষিণে সে সময়কার নালা খালের উত্তরে পরিত্যক্ত ভূমিতে খড়, ছন ও গোলপাতা দিয়ে মুদি ধরণের দোকান তৈরি করেন। দোকানে চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপণ্য সুলভে বিক্রয়ের ব্যবস্থা ছিল।

সে সময়ে বর্তমান কাওমী মাদ্রাসার স্থানের ‘ হোগলা হাটে ’ নামাজ আদায় করতেন। তার্ঁ মৃত্যুর পর বর্তমান বড় মসজিদের দক্ষিণে কবরস্থানের পূর্বাংশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। মনাই হাজী রহ. এর দোকানের সুনাম এবং সুখ্যাতিতে হাজী সাহেবের দোকান-‘হাজীর দোকান; ‘হাজীর হাট বা বাজার’, যা কালের পরিক্রমায় পরিশীলিত নামে প্রতিষ্ঠিত হয়-‘ হাজীগঞ্জ ’।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বড় মসজিদ কেন্দ্রিক বাজার এলাকাই হলো আজকের হাজীগঞ্জ। এ স্থানকে ঘিরে খাস মহল, তহসীল অফিস, সাব- রেজিস্ট্রি অফিস, পোস্ট অফিস, ডাক-বাংলো এবং ইউনিয়ন বোর্ড গড়ে উঠে। হাজীগঞ্জকে কেন্দ্র ধরে রাষ্ট্রীয় সেবা কার্যক্রমের স্বার্থে শাহরাস্তি, কচুয়া এবং ফরিদগঞ্জের অংশ বিশেষ করে নিয়ে গঠিত হয়ে ছিলো-‘হাজীগঞ্জ “থানা”।

পর্যায়ক্রমে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ধারাবাহিকতায় ‘হাজীগঞ্জ থানা’কে শাহরাস্তি, কচুয়া এবং ফরিদগঞ্জ থেকে বিভক্ত হয়। অত: পর বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নগুলোর সমন্বয়ে হাজীগঞ্জের আওতাভুক্ত এলাকা হিসেবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সীমানা চিহ্নিত হয়ে হাজীগঞ্জ থানা এলাকাকে নিয়ে গঠিত হয় ‘হাজীগঞ্জ উপজেলা”।

সকলের পরম শ্রদ্ধেয় হাজীগঞ্জের হাজী- হযরত মনিরুদ্দিন মনাই হাজী রহ. এর দৌহিত্র হাজী আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.। তিনি তাঁর মালিকানাধীন ‘বাগান বাড়িতে’ খড়ের একচালা এবাদত খানা মসজিদ নির্মাণ করেন। অত:পর খড়, ছন, গোলপাতা এবং টিনের দো-চালা থেকে পাঁকা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা, ওয়াক্বীফ এবং প্রতিষ্ঠাতা মোতাওয়াল্লী।

বড় মসজিদের দক্ষিণে অবস্থিত কবরস্থানের পূর্বাংশে ওনাকে সমাহিত করা হয়। ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় হাজীগঞ্জের সমৃদ্ধি, উন্নয়ন, আধুনিক হাজীগঞ্জ এবং এ অঞ্চলের আলোকিত ‘ ব্র্যান্ড ’-হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স। যা মানুষকে ধন্য এবং গৌরবান্বিত করেছে-আলহামদুলিল্লাহ্। তথ্যসূত্র : স্মারকগ্রন্থ

এক নজরে হাজীগঞ্জ উপজেলা : ভৗগোলিকভাবে সড়ক, রেলপথ আর নদী পথে হাজীগঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিমধ্যে জেলাতে হাজীগঞ্জ বাণিজ্যিক উপজেলার খ্যাতি অর্জন করেছে। বাণিজ্যের সাথে সাথে ভৌগোলিক কারণে হাজীগঞ্জ উপজেলায় জেলার অন্য সকল উপজেলা থেকে যোগাযোগ অনেক উন্নত বলে দাবি করেন হাজীগঞ্জের আম জনতা। প্রায় পৌনে ৪ লাখ বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষিতের হার ৬০% ।

২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী। উপজেলার দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে ফরিদগঞ্জ আর চাঁদপুর সদর, পূর্ব-দক্ষিণ ও পূর্বে শাহরাস্তি উপজেলা, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে মতলব দক্ষিণ উপজেলা, উত্তর ও উত্তর পূর্বে কচুয়া উপজেলার সীমানা দিয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিবেষ্টিত। চাঁদপুর-৫ ( হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নিয়ে জাতীয় সংসদের আসন নং ২৬৪। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ব্যাংক রয়েছে ২৩ টি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে প্রায় ৩০টি। যার অধিকাংশের চিকিৎসার মান বরাবর ভালো অবস্থানে রয়েছে।

Hajigonj-Boro-Masjid

উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে : ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ, আলীগঞ্জস্থ হজরত মাদ্দাহ খাঁ (রঃ) মাজার ও মসজিদ কমপ্লেক্স, প্রায় ৪শ’ বছরের পুরানো অলিপুরের শাহ সূজা মসজিদ ও বাদশাহ আলমগীরী মসজিদ. অলিপুরে ৪ অলির মাজার, নাসিরকোর্টে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল ও উপজেলা পরিষদের সামনের পুকুরে বিজয় স্তম্ভ। হাজীগঞ্জ বাজারের বড় বড় মার্কেট ছাড়াও রয়েছে মান সম্মত খাবার হোটেল গাউছিয়া হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট এন্ড চাইনিজ, নারগিস ফুড প্যাভিলিয়ন, বসুন্ধরা চাইনিজ, নিউ তৃপ্তি হোটেল, হোটেল রাজ, হোটেল প্রিন্স, আল মদিনা হোটেল এন্ড চাইনিজ মিলিয়ে প্রায় ৫০টি খাবার হোটেল, স্বপ্ন, ওয়েলকাম, চাঁদের হাট ও প্রিন্স বাজার সুপার সপ। পুরানো স্থাপনার মধ্যে রয়েছে বলাখাল চৌধুরী বাড়ি, বড়কুলের জমিদার বাড়ি, বাকিলা জমিদার বাড়ি।

গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে রয়েছে ধেররা আবেদীয়া মুজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফ, দেশে আগাম ঈদের প্রবক্তা সাদ্রা দরবার শরীফ, হাটিলা ইউনিয়নের লাউকরা গ্রামে ১৯৭১ সালের সবচে’ বড় যুদ্ধস্থল, চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর সদর দপ্তর, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট, পুলিশ সার্কেল সদর দপ্তর, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদ সরণী, ধেররা ও বেলচোঁ বাজারে জেলার সেরা মাছের আড়ত, কেন্দ্রীয় শহীদ মিদার, বাকিলা বাজারস্থ বিসমিল্লাহ কফি হাউজ, মনিহারের গফুর হাজীর রাস্তা, বাকিলা ত্রি-মোহনা থিম পার্ক, কাঠালী শিশু পার্ক, নদী বাড়ি ক্যাফে, ডাকাতিয়ার ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন বলাখাল-নাটেহরা সেতৃ, হাজীগঞ্জ সেতু, টোরাগড়-বড়কুল সেতু (নির্মাণাধীন) ও মোহাম্মদপুর স্টীল সেতু।

উপজেলার অফিস পাড়া খ্যাত আলীগঞ্জে সরকারের প্রশাসনিক ২৭ কর্মকর্তার কার্যালয় ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বীমা, এনজিওসহ বিভিন্ন দপ্তর । হাজীগঞ্জে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো রয়েছে ১টি, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে ১টি, পৌর বাস টার্মিনাল রয়েছে ১টি, রেল স্টেশন রয়েছে ২টি। যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে রয়েছে ঢাকাগামী বিআরটিসি বাস, আল আরাফাহ, পদ্মাসহ শতাধিক পরিবহন সার্ভিস ব্যবস্থা।

উপজেলার মোট আয়তন ৪৬ হাজার ৯শ’ ২৬ একর ও ১শ’ ৮৯.৯০ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে এক ফসলি জমির পরিমাণ ১৫ হাজার ৭০ একর, দো-ফসলি জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৫শ’ ৫৭ একর, তিন ফসলি জমির পরিমাণ ১১হাজার ৮০ একর। মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩শ’ ৮৮ জন, নারী ১ লাখ ৭১ হাজার ৯শ’ ৮৯জন। এর মধ্যে মুসলিম ধর্মাবলম্বী ৩ লাখ ৪ হাজার ৭ শ’ ৮৪ জন, অন্যান্য ২২ হাজার ৫শ’ ৮৩ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব ১ হাজার ৭শ’ ৩২ জন প্রতি ঘন মিটারে।

১২ টি ইউনিয়নের ১শ’ ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে মোট গ্রাম রয়েছে ১শ’ ৫১টি। একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মধ্যে ওয়ার্ড রয়েছে ১২টি। সর্বসাকুল্যে ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭শ’ ২৫ জন। মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭শ’ ১৬ জন। এর মধ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৮ জন। হাজীগঞ্জ উপজেলায় রাস্তার পরিমাণ রয়েছে ৫শ’ ৬৭.৪৮ কিলোমিটার, এর মধ্যে কাঁচা রাস্তা রয়েছে ৪শ’৫ কিলোমিটার, পাকা রাস্তা রয়েছে ১শ’ ৪৫.৪৫ কিলোমিটার, সলিং সড়কের পরিমাণ ৭.১৫ কিলোমিটার, রেল লাইন রয়েছে ১৩ কিলোমিটার, সড়ক ও জনপথের সড়ক রয়েছে প্রায় ২০ কিলোমিটার, নৌ-পথ রয়েছে প্রায় ২০ কিলোমটার।

Hajigonj Masjid

সেচ ব্যবস্থার জন্যে গভীর নলকূপ রয়েছে ১১টি, অগভীর নলকূপ রয়েছে ৭৫টি, যন্ত্রচালিত পাম্পের সংখ্যা রয়েছে ৮শ’ ১৬টি, কৃষি উন্নয়ন সংস্থা রয়েছে ১১টি, সরকারি খাদ্য গুদাম রয়েছে ৬টি, খাদ্যের চাহিদা ৫৩ হাজার ৬শ’ ৩০ মেট্রিক টন। বার্ষিক উৎপাদন ৪৫ হাজার ৮শ’ ৮২ মেট্রিক টন। বার্ষিক ঘাটতি রয়েছে ৭ হাজার ৭শ’ ৭৮ মেট্রিক টন। পানীয় জলের নলকূপ রয়েছে ৪ হাজার ৩শ’ ২৪টি (জুন-২০১৪ সূত্র)।

৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে ১টি, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ৩টি, কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ২২টি, পরিবার কলাণ কেন্দ্র ১১টি, এমবিবিএস চিকিৎসকের সংখ্যা ২২ জন, পল্লী চিকিৎসকের সংখ্যা ৬শ’ ৮৪ জন।

পুরো উপজেলায় কলেজ রয়েছে ৭টি, প্রাইমারী টিচার্চ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) রয়েছে ১টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৬টি, বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে ৪টি ও জুনিয়র বিদ্যালয় রয়েছে ১টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৯৮ টি, নিবন্ধনকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৬টি, নিবন্ধনহীন প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১টি, কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ২৩ টি, মাদ্রাসা রয়েছে ২৩ টি, মক্তব রয়েছে ২শ ১১ টি, কমিউনিটি স্কুল রয়েছে ২০টি, গণপাঠাগার রয়েছে ১ টি, পৌর পাঠাগার রয়েছে ১টি, মসজিদ রয়েছে ৫শ’ ১৬টি, মাজার বা খানকা শরীফ রয়েছে ১৮টি, মন্দির রয়েছে ৬৫টি, উপজেলা ভূমি অফিস ১টি, পৌর ভূমি অফিস ১টি, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ৮টি।

নিবন্ধনকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৮৭টি, নিবন্ধনকৃত এতিমখানা ৮টি। হাজীগঞ্জ উপজেলায় মাছের বার্ষিক চাহিদা ৫ লক্ষ ২ হাজার ১শ’ ১০ মে. টন, উৎপাদন হয় ৫ লক্ষ ৬ হাজার মে. টন। পশু চিকিৎসালয় ১টি ও পশু কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র রয়েছে ৩টি।

সম্পাদনায়
আবদুল গনি ,সহ-সম্পাদক , চাঁদপুর টাইমস , ২৪ জুলাই ২০২৫