চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ স্পিনিং জুট মিলটি অর্থাভাব ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বছরজুড়ে বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৪শ’শ্রমিক বেকার হয়ে বসে আছে। মিলটিতে এখন বিদ্যুৎ সংযোগ বিছ্ন্নি থাকায় ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। চুক্তিভিত্তিক বেতনে ৮-১০ জন গার্ড দিন রাত পাহাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
২০০১ সালে স্থানীয় জনৈক শিল্পপতি হাজীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক শাখা থেকে নিলামে ক্রয় করার পর কিছুদিন মিলটি চালানোর পর বন্ধ করে দেন। প্রায় ৩-৪ বছর বন্ধ থাকার পর তিনি ভাড়ায় মিলটি চালাতে অপর একজন ব্যক্তিকে ভাড়ায় দেন। অত:পর তিনিও কিছুদিন চালানোর পর মিলটি আবার বন্ধ হয়ে যায় ।
এভাবে খোলা-বন্ধ পর্ব চলার পর পুনরায় জনৈক সালাউদ্দিন ও রনি নামের দু’ব্যবসায়ী মাসিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাড়ায় চালানো পর মালিকের ভাড়া, ক্রয়কৃত পাটের মূল্য, শ্রমিকের বেতন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করতে পেরে মিলটি সচল রাখতে ভাড়াটিয়া দিশেহারা হয়ে পড়ে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করতে পারায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার কারণেই মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর অপর একজন ব্যবসায়ী আবার ৪ মাস ভাড়ায় চালানোর পুনরায় মিলটি বন্ধ হয়ে যায় ।
গার্ডদের প্রধান ও বর্তমান তদারকির দায়িত্ব মোস্তফা কামাল শুক্রবার (৬ এপ্রিল) চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘ অর্থাভাব ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় হাজীগঞ্জ স্পিনিং জুট মিলটি একখন বন্ধ রয়েছে। ১৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিভাগে আগাম জমা দিয়ে মিলটি চালানো হয়েছিলো । বর্তমানে বিদ্যুৎ বিভাগে আগাম হিসেবে ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জমা থাকলেও প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে পাট কেনা যাচ্ছে না। এ ছাড়া মালিককে সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যুৎ বিভাগ পুনরায় আগাম হিসেবে আরো ১৫ লাখ টাকা জমা দেয়ার কথা জানিয়েছেন।’
তবে যতোদিন মিলটি চালু ছিলো-ততোদিন পাটের সুতা,কপ,পিজিশন তৈরি হচ্ছিলো। বাজারে এর বেশ চাহিদাও ছিলো। ১শ’৫০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজে নিয়োজিত ছিল। এদের কাজ করার প্রচুর ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও ভাড়াটিয়া মিলটি অর্থাভাবে ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় মিলটি চালাতে পারছেন না বলে সূত্রটি জানান। পাট ব্যবসায়ীরাও মিলে পাট বাকিতে দিতে রাজি হচ্ছে না। মিলটি চালু না থাকায় প্রায় ৪শ’ শ্রমিক এখন বেকার ।
বর্তমানে দেশের ১৮ টি উৎপন্ন দ্রব্যের বাজারজাত করণে প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে চটের তথা পাটের ব্যাগ বা বস্তা ব্যবহার সরকার বাধ্যতামূলক করে।
এদিকে সরকারিভাবে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় পাটের ব্যবহৃত ব্যাগ বা বস্তার চাহিদা বাজারে প্রচুর। সরকারিভাবে ধান,চাল ও চাষীদের আলুর মৌসুমে মিলটির উৎপন্ন পণ্যের চাহিদা রয়েছে। কিন্ত মিলটি বন্ধ থাকায় শ্রমিকরাও এখন বেকার জীবন যাপন করছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের টোরাগড় এলাকায় ১৭ একর জমির ওপর হামিদিয়া জুট মিল নামে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ এটিকে ‘হাজীগঞ্জ স্পিনিং জুট মিলস ’ নামকরণ করা হয় ।
স্বাধীনতার পর মিলটি চালানোর জন্য অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকটি দীর্ঘদিন চালানোর পর বিভিন্ন কারণে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের বাজার আর্ন্তজাতিকভাবে হ্রাস হওয়ায় সারাদেশের পাটের মিলগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। যার নেতিবাচক প্রভাব দেশের সব জুট মিলগুলোর ওপর পড়ে। এক সময় আমাদের দেশের এশিয়ার সর্ববৃহৎ আদমজী জুট মিলটিও নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় ।
প্রতিবেদক:আবদুল গনি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬ :১০ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৮,শুক্রবার
এজি