হাজীগঞ্জ মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজে আলু মজুদ প্রায় ৫০ হাজার বস্তা, সিন্ডিকেট বাড়াচ্ছে দাম

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজ জেলার সব চেয়ে বড় হিমাগার। দেশের আলুর চাহিদা মেটাতে মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজ বড় ভূমিকা রেখে আসছে। তবে বর্তমানে চাহিদা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছে কোল্ড ষ্টোরেজে কর্তৃপক্ষ। আর এ সুযোগে বাড়তি দামে আলু বিক্রি করছে ১৫ থেকে ১৬ জন সিন্ডিকেট এজেন্ট। সরকারি নির্দশনা না মেনে মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজে কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তাদের হাত করে তারা কেজি প্রতি আলু বিক্রি করে আসছে ৩৭/৩৮ টাকা ধরে। অথচ সরকারের নির্দশনা রয়েছে ২৬/২৭ টাকা ধরে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি করতে।

ইতিমধ্যে চাঁদপুর ভোক্তা অধিকার মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজে কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করা হলেও তাদের কয়েকজন এজেন্টের মাধ্যমে সিন্ডিকেট এখনো ধরে রেখেছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার বস্তা আলু মওজুদ রয়েছে। প্রতিদিন কোল্ড ষ্টোরেজ হিমাগার সেট থেকে প্রায় ৮ থেকে ৯ শত বস্তা আলু বাহির হচ্ছে। কোল্ড ষ্টোরেজ থেকে এসব আলু জেলা ও জেলার বাহিরে আড়ৎদার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছে। যা খুচরা বাজারে গ্রাহক ৫০/৫৫ টাকা কেজিতে ক্রয় করতে হচ্ছে। 

জানা যায়, এ বছর হাজীগঞ্জ মান্নান কোল্ড স্টোরেজ মোট মওজুদ ছিল ৫ হাজার টন আলু। যা ৫০ কেজি ওজনে এক লক্ষ বস্তা আলু। হিমাগারে গড়ে ৭/৮ হাজার বস্তা আলু মওজুদ রাখেন প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে প্রায় দুই হাজার চাষি। আর বাকি টার্গেট পূরণ করেন ২০/২৫ জন এজেন্ট। কৃষকদের বীজ আলু ছাড়া তেমন কোন আলু হিমাগারে নেই। বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার বস্তা আলু মওজুদ রয়েছে ১০/১২ জন এজেন্টের। তারাই এখন দাম পেতে কোল্ড ষ্টোরেজের সাথে মিল করে সিন্ডিকেট করে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এজেন্ট বলেন, মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজে কর্তৃপক্ষের কয়েক হাজার আলুর বস্তা হিমাগারে আছে। যা যদিও কর্তৃপক্ষের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি অস্বীকার করে। 

এজেন্ট কচুয়ার কৃষক আক্তার হোসেন বলেন, আমার তিন হাজার মন আলু মওজুদ রয়েছে। ইতিমধ্যে এক হাজার মন আলু ৩৭/৩৮ টাকা ধরে বিক্রি করেছি। তবে সরকারী নির্দশনা অনুযায়ী ২৭/২৮ টাকা ধরে বিক্রির নোটিশ আজকাল পেয়েছি।

কৃষক হাজীগঞ্জ রাজাপুর গ্রামের কৃষক আবিদ রেজা বলেন, ৫৫ মন আলু দিলে পৌচা ও ছোট আলুর কারনে গড়ে ৪৭/৪৮ বস্তা আলু পাই। গত কয়েক বছর আলুর দাম পাইনি, যা এ বছর পাচ্ছি। 

আলু বাচাইয়ের কাজে নিয়োজিত রিনা ও মুন্নী বেগম বলেন, প্রতি ৫০ কেজি বস্তা বাচ দিয়ে আমরা ১২ টাকা পাই। দৈনিক ৬/৭ শ বস্তা আলু হিমাগারের সেট থেকে বের হয়।

কোল্ড স্টোরেজ ধারয়ান মোরশেদ আলম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, প্রায় তিন শতাধিক কৃষকের রেখে যাওয়া আলু বস্তা প্রতি কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া ২৫০ টাকা।ফালগুন মাস থেকে শুরু করে চৈত্র মাসের মধ্যে  শুরু হয় আলু মওজুদের। বর্তমানে এজেন্টদের আলু হিমাগার থেকে বের হচ্ছে। 

মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজের মহা ব্যবস্থাপক দিলীপ কুমার সাহা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, চলতি বছরে আমাদের হিমাগারে ৯৯ হাজার ৩১৫ বস্তা আলু উঠেছে। বর্তমানে প্রায় ৪৬ হাজার বস্তা আলু মওজুদ রয়েছে। তবে আমাদের নিজস্ব কোন আলু মওজুদ নেই, যা আছে তা প্রান্তিক কৃষক ও কয়েকজন এজেন্টদের। আমরা ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দশনা অনুযায়ী ২৭/২৮ টাকা ধরে আলু বিক্রি করার চার্ট লাগিয়েছি।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, বেশী দামে যেন মান্নান কোল্ড ষ্টোরেজে আলু বিক্রি করতে না পারে সে জন্য প্রয়জনে ট্যাগ অফিসার নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ
করা হবে।

প্রতিবেদক:জহিরুল ইসলাম জয়,২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Share