জহিরুল ইসলাম জয়, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) : আপডেট: ১১:১৩ অপরাহ্ণ, ২৭ জুলাই ২০১৫, মঙ্গলবার
চাঁদপুর জেলার ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি রাজনীতির মূল মেরুকরণও বলা যায় হাজীগঞ্জ উপজেলাকে, যেখানে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মত বড় বড় দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মকান্ড সতেজতা বিরাজ করে আসছে।
গত ক’বছর ধরে দেখা যায় যে, বিএনপির মত বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলায় যে গ্রুপিং, লবিং ও কোন্দল চলে আসছে। এতে করে সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ, তারা কোনো কূল-কিনারা না পেয়ে ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে এমনটাই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হাজীগঞ্জ-শাহারস্তির হাল ধরার জন্য তৎকালীন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাবেক ৪ বারের সাংসদ এম এ মতিনকে মনোনীত করেছেন বলে জানাযায়। এম এ মতিন সেই থেকে আজ অবধি বিএনপির রাজনৈতির কর্মকান্ডে অংশগ্রহণসহ দলের আর্থিক নানা খরচ বহন করে আসছেন। তবে বয়সের ভারে আর কিছু নেতাদের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি গত ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি বলে ওই সময় এমনটাই মন্তব্য শুনা যায়। ঠিক তার আগ থেকে এমএ মতিনের অনুসারী হয়ে সুযোগে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতির হাল ধরেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক।
২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সাথে নির্বাচনে অনেক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক। ওই সময় এমএ মতিন সমর্থিত নেতারা মমিনুল হকের বিপক্ষে বিরোধিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
সেই থেকে শুরু হল হাজীগঞ্জ-শাহারস্তির বিএনপির রাজনৈতিতে এমএ মতিন গ্রুপ ও ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক গ্রুপ-এর রাজপথে প্রকাশ্য গ্রুপিং রাজনীতি।
২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের প্রায় ২ বছর পর বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে পুনরায় আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেন সাবেক এমপি এমএ মতিন। এদিকে রাজনৈতির মাঠে তখন পুরোপুরিভাবে সক্রিয় হয়ে উপজেলা তথা জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার বিএনপির কার্যালয় স্থাপন করেন। এদিকে সাবেক এমপি এম এ মতিন তার অনুসারীদের নিয়ে হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজার বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
চলতি বছরের শুরুতে আবারো বিএনপির রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ও বিপর্যয় দেখা গেছে। হাজীগঞ্জ-শাহারস্তির বিএনপির কর্ণধার হিসেবে পরিচিত ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের কাছ থেকে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি পদ চলে যাওয়ার ফলে দেখা গেছে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন। পদ হারিয়ে সেই সাথে কিছুটা অভিমান বুকে লালন করে চুপ ছিলেন সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জি. মমিনুল হক।
এ সুযোগে চাঁদপুর জেলা বিএনপির নয়া আহবায়ক শেখ ফরিদ আহম্মেদ মানিক সবার আগে হাজীগঞ্জে সাবেক সাংসদ এম এ মতিন সমর্থিত নেতাদের দিয়ে বিএনপির কমিটি ঘোষণা দেয়।
নয়া কমিটিতে উপজেলা বিএনপির দায়িত্ব পায় ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের মোতওয়াল্লি ও মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির পাটোওয়ারী।
গত ক’বছর ধরে হাজীগঞ্জে বিএনপির এমন পাল্টা-পাল্টি গ্রুপিং রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখে সাধারণ কর্মী সমর্থকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনেতিক কর্মকান্ড ও নিজ উপজেলায় নেতাদের রেশারেশিতে ভবিষ্যত রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্ষমতার কথা চিন্তা করে সাধারণ নেতাকর্মীরা আস্তে আস্তে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলামের হাত ধরে বিএনপির ৪০/৫০ জন করে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়তে দেখা যায়।
বলা যায় গত কয়েক বছরে প্রায় হাজারোও বিএনপির নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের খবর পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ড. আলমগীর কবির পাটওয়ারী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘এটা একটা ভুয়া খবর। বিএনপি বা যুবদল থেকে একজন আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। তাই এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিষয়। দলে বিভিন্ন সমস্যা থাকবেই সেজন্যে দলীয় নেতা-কর্মীরা অন্যদলে যোগদান করবে এটা ঠিক নয়। যেমন মনে করেন আমরা একটা কমিটি দিচ্ছি কিন্তু সেই কমিটির বিরুদ্ধে কেউ কেউ বিষেদগার করবে, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, কেউ কেউ তার যোগ্য পদ-পদবী নিতে চাইবে। এই প্রতিযোগিতা দলের ক্ষেত্রে থাকবেই। কিন্তু তাই বলে যে নেতা-কর্মীরা গণহারে অন্যদলে যোগ দেবে এটা হতে পারে না।’
চাঁদপুর টাইমসকে তিনি আরো বলেন, ‘এই বিষয়ের কোনো সত্যতা নেই। ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের বিষয় থাকবে সেটা সময়ে কেটে যাবে, তাই বলে যে দলে দলে লোকজন অন্য দলে যোগ দিবে এই বিষয়টা মোটেই সত্য নয়। ধরেন আপনি একটা কিছু করছেন, তাতে কারো কারো পছন্দ হতে নাও পারে, তাতে কি সব নষ্ট হয়ে যাবে? যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আমাদের সাথে তা শেয়ার করতে পারে। আমরা আমাদের আচার ব্যবহার দিয়ে নেতা-কর্মীদের মন জয় করবো, ইনশাল্লাহ।’
হাজীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মোল্লা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘এটা একটা ফালতু বিষয়।আসলে কেউ অন্যদলেই যোগ দিচ্ছে না। আমার জানা মতে কেউ বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে এমন বিষয় জানা নেই। এটা একটা বিভ্রান্তকর কথা। আমরা এমএ মতিনের নেতৃত্বে বিগত সময় রাজনীতি করেছি। তিনি একজন বড় ডোনার ছিলেন। ওই সময় তাঁর নেতৃত্বে আমরা রাজনীতিতে এগিয়ে গিয়েছি। তিনি এক সময় রাজনীতিতে থেকে দূরে সরে গেছেন, পরে সেই স্থানে ওই গ্যাপে ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক মাঠ কর্মীসহ রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছেন।মাঠ তার কাছে চলে গেছে। তিনি সেই সুযোগ নিয়েছেন। নবম নির্বাচনে এম মতিন সাহেব রাজনীতিতে অবসর নিয়ে চলে যান। সেই সময় ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল ইসলাম এগিয়ে আসেন। তিনি হাজীগঞ্জের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, এবং তিনি এখন তা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরপর ড. আলমগীর কবির সাহেব হাজীগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক হন। কিন্তু বিএনপি এতো দেউলিয়া হয়নি যে, আলমগীর কবির সাহেবকে আহ্বায়ক বানাতে হবে। যাই হোক এখন যাই হয়েছে, আমরা তার নেতৃত্বেই রাজনীতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের মাঝে কোনো কোন্দল নেই। আর নেতাকর্মীদেরও অন্যদলে যোগ দেবার মতো পরিস্থিতি হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলমগীর কবির পাটোয়ারীর নেতৃত্বে টোড়াগড়ের একটি অংশ আর কটি বাড়ি ছাড়া বাইরে কিছুই নেই। আমরা বাইশটি ইউনিয়ন ওয়ার্ডে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সামান্য কিছু মানুষকে নিয়ে তিনি রাজনীতিতে ভালো করতে পারবেন না। আর বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে নেতা-কর্মীরা যোগ দিচ্ছে এটা ঠিক নয়। আমরা নেতাকর্মীদের হামলা মামলার বিষয়ে খোঁজ রাখছি।’
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি