চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা গত কয়েক বছর ধরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভাসমান পর্যায়ে দৃশ্যমান শাকসবজি চাষ। পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব কৃষকরা বিভিন্ন বাজারে লাল সবুজের শাকসবজি বিক্রি করে আসছে। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগের বীজ বা ঋণের সহযোগিতা পেলে ভাসমান সেট আরো বড় আকার করে শাকসবজি উৎপাদন করতে পারতো বলে জানান এখানকার কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়ন অলিপুর, পৌর এলাকার দক্ষিণ বলাখালের পাশ দিয়ে ডাকাতিয়া নদী। সেই নদীর পাশে জমে থাকা কচুরিপানার স্তুপ করে ভাসমান সেট তৈরি করেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের সেটে দেখা যায় লাল শাক, কচি মূলার সবুজ শাক, কুমড়া ও লাউয়ের শাক।
দেখা যায়, দক্ষিণ বলাখাল মুন্সী বাড়ী নাজির আহমেদ মুন্সি ও ছেলে হাবিব নদী থেকে একটি ভাসমান সেটের উপর দাড়িয়ে রয়েছে। সেটে রয়েছে লাল শাক। এগুলো উত্তলন করে বাবা ছেলে বাজারে বিক্রি করার লক্ষে খালের পাশে নিয়ে যাচ্ছে।
অলিপুর গ্রামের কৃষক মোবারক মিয়া ও নুর হোসেন বলেন, আমাদের এলাকা এমনিতে সারা বছর নিচু জমিতে জোয়ার ভাটার কারণে জমি পানিতে জলাবদ্ধ থাকে। ভাসমান কচুরিপানা পানিতে ভেসে থাকত প্রায় বছরব্যাপী। সাধারণভাবে কচুরিপানা বহুমাত্রিক অসুবিধার কারণ। এ জঞ্জাল কচুরিপানাকে তারা ধাপে ধাপে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করে। তারপর সেসব ধাপের উপর টেপাপানা দিয়ে তৈরি করে ভাসমান বীজতলা। এভাবে ভাসমান ধাপের উপরে বিভিন্ন রকম সবজির দৌলা দিয়ে মনের মাধুরি দিয়ে সাজায় নান্দনিক ভাসমান বীজতলা। এসব ভাসমান বীজতলায় কোনোটায় লাউশাক, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক বা সাদা শাকের চাষও করেন। তাছাড়া লাউ, কুমড়া, শিম, বরবটি, টমেটো, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সবুজ ফুলকপি, শসার চারা গাছ উৎপাদন করা হয়।
এসব ভাসমান বীজতলাগুলো যাতে ভেসে না যায়, সেজন্য তারা শক্ত বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। শুকনো মৌসুমে পানি সরে গেলে সেসব কচুরিপানার ধাপ জমিতে মিশে জৈব পদার্থের অতিরিক্ত জোগান দেয়। জমি হয় উর্বর। শুকনো মৌসুমে এখানকার মানুষরা চাষ করে বোরো ফসল। এত দিন তারা ভাসমান বীজতলায় কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করত না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে অল্প পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন। আগে যেখানে সবজির চারাগুলো ছিল কিছুটা লিকলিকে দুর্বল এখন আধুনিক ব্যবস্থা অবলম্বনে আর মানসম্মত বীজ ব্যবহারে শক্ত সবল স্বাস্থ্যবান চারার ফলনে সুফল পাচ্ছেন।
কযেকজন কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউনিয়ন উপ কৃষি কর্মকর্তা কখনো সরকারি বীজ বা কোন সুযোগ সুবিদা দেয়নি। যদি সরকারী ভাবে পেতাম তাহলে আমরা ভাসমান সেট সারাবছর এ ডাকাতি নদীর উপর থেকে শাকসবজি উৎপাদন করে আসতে পারতাম।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বেশি ভাসমান সেটের মাধ্যমে শাকসবজি উৎপাদন হয়ে আসছে দক্ষিণ বলাখাল ও অলিপুর গ্রামে। মূলত নদীর তীরে এসব ভাসমান সেট তৈরি করার সুবিধা রয়েছে। আমাদের উপ কৃষি কর্মকর্তা এগুলো পর্যবেক্ষণ করে আসছেন।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩