Home / উপজেলা সংবাদ / হাজীগঞ্জ / হাজীগঞ্জে ৩৭ বছর ধরে মরদেহ বহন করে চলছে মোস্তফার সংসার
বছর

হাজীগঞ্জে ৩৭ বছর ধরে মরদেহ বহন করে চলছে মোস্তফার সংসার

মো. মোস্তফা মিয়া, বয়স চলছে বায়ান্ন বছর। বাবা মৃত মোবারক মিয়ার ছিলনা কোন সম্পদ। যে কারণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাসহ মৌলিক চাহিদার বাহিরে ছিল মোস্তফার জীবন। সংগ্রামী জীবনে বর্তমানে ঘরে স্ত্রীসহ ৩ মেয়ে ২ ছেলে মিলে ৭ জনের সংসার চালাতে গত প্রায় ৩৭ বছর ধরে বহন করে আসছে মরা লাশ।

সরেজমিন গিয়ে এমন লাশবহনকারী ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন কংগাইশ গ্রামের ফকির বাড়ীতে। যদিও মোস্তফা মিয়া বেশীরভাগ সময় থাকেন হাজীগঞ্জ থানা এরিয়ার ভিতরে। নিজ সংসার থাকলেও ঘর নেই, থাকেন বউয়ের ভাইয়ের ভাড়া বাড়ীতে।

বিয়ের আগ থেকেই হাজীগঞ্জ থানায় লাশ বহনের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন মোস্তফা। দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছরে আনুমানিক ৩ হাজার লাশ বহন করেছেন তিনি। এসব লাশের মধ্যে বেশীভাগ অজ্ঞাত, ফাঁসি, বিষ খাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা, মারামারি ও সন্ধেহজনক আঘাতপ্রাপ্ত লাশ।

এসব লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পুলিশের সাথে অনেক সময় ময়নাতদন্তের কাজে চাঁদপুর- লাশ ঘরে পর্যন্ত যেতে হয়। ময়নাতদন্তের কাজ শেষে লাশের স্বজনদের বাড়ীতে পর্যন্ত মরদেহ পৌচে দেওয়ার পর হয়তো ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পায় মোস্তফা। আর এতে করে চলে তার সংসার।

লাশ বহনে স্মৃতিময় কথা উল্লেখ করে মোস্তফা বলেন, অনেক সময় ময়না তদন্তের সময় লাশ কাটা ঘরে ভিতরে গিয়ে দেখি, কেউ যদি মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে থাকে তাহলে মাথার সামনের অংশ কাটে, বিষ খাওয়া লাশ হলে কলিজা, গুদ্দা, ফুসফুসের কিছু অংশ কেটে পরীক্ষার জন্য রাখা হয়। প্রথম প্রথম একটু ভয় পেতাম। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজারের উপরে লাশ বহন করতে গিয়ে গভীর রাতেও তেমন কোন ভয় কাজ করেনি।

তিনি আরো বলেন, লাশ প্রতি ৫০০ ও ১ হাজার টাকা পেয়ে থাকি। মাসে ৩০/৩৫ টি লাশ বহন করার রেকর্ড রয়েছে। আর এতে করে আমার ৭ জনের সংসার মোটামুটি চলে আসছে। কিন্তু বাবার জমি না থাকায় ঘর করতে পারিনি। থাকি শালার বাড়ীতে।

অনেক সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বলে আসলেও তেমন কোন আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। সরকারি ভাবে যদি একটি ঘর পেতাম, তাহলে বউ বাচ্চাদের নিয়ে মাথা গোছাবার ঠাই হতো।

প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২