হাজীগঞ্জে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলো টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলো আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন একটি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ । যা চাঁদপুরবাসীর গর্ব করার মত একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ । জেলার শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন মাত্রায় যোগ হলো এটি । এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায়মান তালিকাভূক্ত হয়ে আছে ।

হাজীগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ২০ আগস্ট। শেষ হলো ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ৩০ জুন। চাঁদপুরের শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী স্বপন কুমার সাহা ২০ আগস্ট দুপুরে চাঁদপুর টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তাঁর দেয়া তথ্য মতে,হাজীগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজটি ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ বাজারের দক্ষিণে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ ব্রিজ এর পর সড়কের পূর্ব পাশে রায়চোঁ মৌজায় ১.৬২ একর অধিগ্রহণকৃত ভূমির উপর নির্মিত হলো। ভূমির অধিগ্রহণকৃত মূল্য ব্যতীত একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন,ওয়ার্কশপ সহদুটো ৫ তলাভীতের সকল আধূনিক সুযোগ-সুবিধাসহ এর নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অধীনে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১ টি করে কারিগরি বিষয় অর্ন্তভুক্ত থাকবে এ প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স এখন চালু হবে। অত্যাধুনিক এ টেকনিক্যাল কলেজটি একাডেমিক ৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের ২৫টি কক্ষ,৩০টি উন্নত মানের টয়লেট ও প্রশাসনিক ৪ তলা বিশিষ্ট ভবনের ১৮টি কক্ষ ও ২৩টি উন্নত মানের টয়লেট বা ওয়াশব্লক,দুটো ফটক ও চারপাশঘেরা ওয়াল,পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রয়েছে।

চাঁদর্পুধসঢ়; শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপ-প্রকৌশলী স্বপন কুমার সাহা বলেন,‘এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে জেলার কারিগরিশিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বৈপ্লিক পরিবর্তন হবে লেখাপড়ার মানন্নোয়নে যথেষ্ঠ সহায়ক ভূমিকা পালন রাখবে।

শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ও উন্নত পরিবেশে পড়াশুনার সুযোগ পাবে। এর ভৌতিক সুবিধা প্রাপ্তিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকগণ পাঠদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। শিক্ষার্থীগণ পাবে একটি মনোরম পরিবেশ। যা দক্ষ জাতিগঠনের সহায়ক।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই প্রকৌশলী বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য’র ডিও লেটারের সাথে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের নামের প্রস্তাবটি আমাদের দপ্তরে আসা মাত্র সরেজমিন পরিদর্শন করার পর প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়। এরপর ঊর্ধ্বতন প্রকল্পটি প্রেরণ করার পর অনুমোদন প্রাপ্ত হলেই চাঁদপুরের শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ বাস্তবাযনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’

তিনি আরো বলেন,‘ বাংলাদেশ সরকার সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে আরোও ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ তৈরির মেঘা প্রকল্প অনুমোদন করেছে ২০২১-২২ অর্থবছরে। এ গুলোর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। বর্তমানে কারিগার শিক্ষার্থীও হার ১৮%। এর লক্ষ্য হলো-২০৪১ এর মধ্যে ৫০% ভাগে উন্নত করা।’

হাজীগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো.সিকান্দার বলেন,‘ হাজীগঞ্জ- শাহরাস্তি উপজেলা মেজর অবসরপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপি’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় সরকারি অর্থায়নে হাজীগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজটি স্থাপিত হয়। বর্তমানে ৪ টি কোর্স নিয়ে এর যাত্রা হলো।

প্রথম শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শেষ। প্রথম ব্যাচে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন,‘এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে যা যা প্রয়োজন তা পর্যায়ক্রমে তাই হবে। ৬ষ্ঠ হতে দ্বাদশ পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী বাংলাদেশের সাথে যে যে দেশের বৈদেশিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে-সে সব দেশে কর্মসংস্থানসহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে নি: সন্দেহে।’

বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে   উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আগামি দিনের স্মার্ট নাগরিক হতে ও দেশের শিক্ষার্থীদের ৫০% কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন নাগরিক হওয়ার জন্যে এর গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে সারাদেশে প্রথম পর্যায়ে ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণের ঘোষণা দেন।

এরই ধারাবাহিতায় ২০১৬-১৭ সালে এটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে দেশের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পায় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ, চাঁদপুর এবং ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব দেয়া হয়-জেলা প্রশাসন চাঁদপুরের রাজস্ব বিভাগকে।

হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির উন্নয়নের রূপকার, সংসদ সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর  অবসরপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সার্বিক আন্তরিকতায় হাজীগঞ্জ- শাহরাস্তির প্রায় ৬ লক্ষাধিক অধিবাসীদের নতুন প্রজন্মের স্মার্ট নাগরিক হতে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজটি এ স্থানে নির্মিত হলো।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বেশিরভাগ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস, মেকানিক্যাল, অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশন মেইনটেনেন্স, পোশাক কারখানার ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুইং চালনা, ওয়েল্ডিং, প্লাম্বিং এর মত বিষয়সমূহ পড়ানো হয়।

বাংলাদেশে বেকারত্ব দূরীকরণে বহু বছর ধরে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী- সারাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ মানুষ। সেই সঙ্গে প্রতিবছর দেশের শ্রমবাজারে নতুন করে ১৮ লাখ মানুষ যুক্ত হয়।

আবার এ মূহুর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন।যাদের বড় অংশটি যায় স্বল্প দক্ষ বা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে। দক্ষতা বাড়ানোর সরকারি এ উদ্যোগের ফলে প্রবাসে কাজ করতে যেতে চান এমন মানুষের উপকার হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।

তবে সাধারণভাবে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার প্রতি অনেকেরই এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সমাজের কম আয়ের মানুষের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়তে যায় এবং যারা পড়তে যায় তাদের মেধা অন্যদের চেয়ে হয়তো কম। এ ধারণার সামাজিক ভিত্তি নেই।

এখনো স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যত শিক্ষার্থী পড়েন,তার ১৮% কম শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন।মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেসব কাজের চাহিদা, সে বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। সরকারি হিসেবে দেশে এখন ৮ হাজারের মতো কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এর ৯০% হচ্ছে বেসরকারি।

এসব প্রতিষ্ঠানে চার বছর মেয়াদী থেকে শুরু করে তিনমাস মেয়াদী পর্যন্ত নানা ধরনের কারিগরি কোর্স পড়ানো হয় কিংবা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন,কারিগরি শিক্ষার প্রতি ঢাকার বাইরে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেসব কাজের চাহিদা রয়েছে।

আবদুল গনি
২৪  আগস্ট   ২০২৩

Share