করোনা ভাইরাস এটাই প্রমাণ করলো যে, সবার জন্য উন্মুক্ত বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এটা দেখিয়ে দিয়েছে জিন ম্যাপিং, ভ্যাকসিন তৈরি আর বিজ্ঞানের গুরুত্ব কতটুকু। তবে, করোনা মহামারিতে এতসব কিছুর মধ্যে প্রমাণিত হলো সাংবাদিকতা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ এ প্রাদুর্ভাবের সময় যদি সাংবাদিকরা না থাকতেন তাহলে আরো বহু মানুষের মৃত্যু হতো। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় হাজীগঞ্জে সাংবাদিকদের নানা উদ্যোগ ।
আর সেখানে সাংবাদিকরা রোদ-বৃষ্টি, হুমকি উপেক্ষা করে সংবাদ তুলে ধরেন। যেখানে ছিলো মৃতের সংবাদ, আপনজন হারানোর সংবাদ, চিকিৎসকদের ত্যাগ, রোগীদের অবস্থা, বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ, রোগ নিয়ে গবেষণা, ধনী দেশগুলোর অবস্থান, অসহায়দেরকে সহায়তা ইত্যাদি সংবাদ।
‘সাংবাদিকতা ছাড়া গুজব লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে। পুলিশ হয়তো তার ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহার শুরু করতে পারে। মানুষ হয়তো মনের আনন্দে সৈকতে ছুটে যাবে, ফলে ঘটবে আরো সংক্রমণ, আরো মৃত্যু।
সাংবাদিকরা যে সংবাদ প্রকাশ করে. তা প্রথমে তারা বিশ্বাস করে নেন না। তারা এটা তদন্ত করেন, নিশ্চিত হয়েই খবর তৈরি করেন। এরপর তা দ্বিতীয়, তৃতীয়বার পর্যন্ত সম্পাদনা করা হয়।
এটিই হচ্ছে সাংবাদিকতা, যখন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ মানুষ সচেতনতার অভাবে দলে দলে বাজারে, চায়ের দোকান, অলিতে-গলিতে, পাড়া-মহল্লায় জমায়েত হয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন এই সাংবাদিকরাই গণসচেতনতার জন্য লিফলেট নিয়ে নামেন, গ্রামগঞ্জ ঘুরে সচেতন করেন। আবার কেউ কেউ হ্যান্ড মাইকিং করে প্রচার চালান পুরো উপজেলাজুড়ে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সারাদেশে লকডাউন, সরকার ঘোষিত সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা পর হাজীগঞ্জের এই সাংবাদিকরাই ঘরে বসে থাকেনি। যে যার অবস্থান থেকে, সাংবাদিক সংগঠন প্রেসক্লাব, সাংবাদিক কল্যাণ সমিতি ও ব্যক্তি উদ্যোগে লিফলেট, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, স্যাভলন বিতরণের মাধ্যমে করেছেন সচেতনতা।
আবার কেউ কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে দুস্থদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। অনেক সাংবাদিক সংকটে থাকা তার সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছেন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে।
করোনায় হাজীগঞ্জের মানুষকে ঘরে রাখতে চালু করেছেন একঝাঁক সংবাদকর্মী ফ্রী হোম ডেলিভারি। যা প্রশংসিত হয়েছে সর্বমহলে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই মহামারি দুর্যোগে হাজীগঞ্জ উপজেলাবাসীকে সামান্য সেবা দিতে একঝাঁক সাংবাদিকের প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ আপামর জনসাধারণ।
আবার ‘ নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ এই সাংবাদিকরাই দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষকে ঘরে ফিরাতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, আড্ডা থেকে বিরত রাখতে, সরকারি নিষেধ অমান্য করে জমায়েত হওয়া থেকে বিরত থাকতে, দোকানপাট বন্ধে প্রশাসনকে সহযোগিতা, করোনা উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউন বাস্তবায়ন, হ্যান্ড মাইকিং করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নিজ ও নিজের পরিবারের মায়া, সুখ, বিলাসিতা উপেক্ষা করে ছুটছেন গ্রামের পর গ্রামে। ভুক্তভোগীরাও আমাদের রাত-দিন ফোনে, মেসেঞ্জারে অনবরত তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও তাৎক্ষণিক তাদের তথ্যগুলো গুরুত্বের সাথে দেখছি।
অনেক সাংবাদিক করোনা সচেতনায় লিখনির মাধ্যমে সরব রয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমে। তারা নিয়মিত তুলে ধরছেন উপজেলার করোনা আপডেট। ত্রাণের অনিয়ম, হাট বাজারে জনসমাগমসহ নানা তথ্য দিয়ে।
অন্তত দুমুঠো ডালভাত খেয়ে হলেও করোনার ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত থাকতে আপনি ও আপনার গোটা পরিবারকে নিয়ে ঘরেই থাকুন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহির না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কেউ সর্দি-কাশি বা জ্বরে আক্রান্ত হলে আতংকিত না হয়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা হটলাইনে যোগাযোগ করবেন। আপনারা করোনার ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে যার যার ঘরে অবস্থান করবেন।
প্রিয় হাজীগঞ্জবাসী আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে নিরাপদে রাখতে আপনি ঘরেই থাকুন। আপনার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিবে সাংবাদিকরা।
বার্তা কক্ষ, ১৪ এপ্রিল ২০২০