চাঁদপুর জেলার প্রথম সারির হাজীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের পাশে বছরের পর বছর ধরে বর্জ্য ফেলে আসার অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে করে পথচারী, যানবাহনের যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে এলেও পৌরসভা ও বাজার কমিটি কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, আবর্জনার কারণে ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ খালগুলো পানি প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষাক্ত পানি আটকে গিয়ে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে আর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধ প্রকট হয়ে উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ দিলেও আবর্জনার ভাগাড় নিয়ে সুষ্ঠু কোনো সমাধান দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ কচুয়া সড়কের মকিমাবাদ এলাকার রেল সংযোগের খালের পাশে আবর্জনার স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে হাজীগঞ্জ পৌরসভার কর্মচারীরা তাদের ময়লার গাড়িতে বর্জ্য ফেলছেন। একই ভাবে হাজীগঞ্জ রামগঞ্জ সড়কের ডাকাতিয়া নদীর সেতুর সাথে কৌশলে আবর্জনার স্তূপ করে রেখেছে। এতে দুগ্ধে সড়কের যাত্রীসাধারণ ও পথচারীদের হাঁটতে গিয়ে নাকে হাত রেখে দম যায় যায় অবস্থা। এছাড়া চাঁদপুর কুমিল্লা সড়কের পৌর এলাকার বলাখাল পূর্ব বাজার, হাজীগঞ্জ বিশ্বরোড, আলীগঞ্জসহ শাখা সংযোগ রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে এমন ময়লার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে আনা বর্জ্য এসব স্থানে ফেলছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট ও আড়ৎদারদের বর্জ্যগুলোও এসব স্তূপে ফেলছেন।
হাজীগঞ্জ হকার্স মার্কেটের কাঁচামাল বিক্রেতা আব্দুর রহমান জানান, ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে
আবর্জনার দুর্গন্ধে বাজারে বসে থাকা যায় না। ক্রেতা-বিক্রেতা সবারই দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে এসব ময়লার ভাগাড়। বর্জ্য ফেলার স্থান থেকে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষকে নাকে-মুখে রুমাল চেপে চলতে হয়।
হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারের ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ না করার বিষয়ে পৌরবাসী অনেকদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন। পৌরসভার দুই যুগের উপরে বয়স অথচ এ সময়েও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরিবেশ দূষণের শিকার হতে হয়, যা দুঃখজনক।
মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলার প্রতিবাদে কয়েকবার স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালেও কোনো সুফল মিলছে না। তবে গত ৭/৮ মাসে এর মাত্রা বেশী লক্ষণীয়।
হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন দুলাল বলেন, পৌরসভার পরিবেশ ভারসাম্য ফিরে আনার এখনই সঠিক সময়ে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। বিশেষকরে জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খোলা আকাশের নিচে ময়লার স্তূপ, সোডিয়াম লাইটিং ব্যবস্থাসহ আমরা পৌর প্রশাসকের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ হাজীগঞ্জ অফিসের উপ প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, হাজীগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিনা অনুমতিতে মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এতে ভীষণ বেকায়দায় পড়েছি। সড়কের একটা অংশে ময়লা ফেলায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের জানিয়েছি। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিলেও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করতে দেখা যায়নি।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার সচিব নুরে আলম বীনতে শরীফ জানান, ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভার কোনো জায়গা নেই। পূর্বের মেয়রদের সময়ের স্থানগুলোতে ময়লা ফেলা হচ্ছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে আমরা এসব ময়লার স্তূপ পরিশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা গ্রহন না হওয়া পর্যন্ত পৌরসভার ময়লার স্তূপ এসব স্থানে ফেলাতে হচ্ছে। সাময়িক সময়ের জন্য পৌরবাসীকে একটু সচেতনতার মাধ্যমে সঠিক স্থানে ময়লা ফেলার আহবান জানানো হয়।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়,১৯ মে ২০২৫