হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদেও ঐতিহ্যে ধন্য ‘পূন্য ভূমি হাজীগঞ্জ’ আজ, শিক্ষা দীক্ষা, ধর্ম-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
আমরা জানি শিক্ষা দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে সমৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক। জনশ্রুতি রয়েছে, চাঁদপুর জেলার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে হাজীগঞ্জ । এখানে হাজীগঞ্জ বলতে হাজীগঞ্জ বাজার এলাকাকে বুঝিয়ে থাকে। হাজীগঞ্জ বাজারের সমৃদ্ধির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার অন্যান্য বাজারগুলো।
সে অনেক দিন আগের কথা। হাজীগঞ্জ বাজারের মধ্য দিয়ে এক সময় চলাচলের জন্য অতি সরু পথ ছিল। যা দিয়ে মানুষ হেঁটেই মাইলের পর মাইল চলতেন। শুক্রবার জুমার পূর্বে সকালে এক বেলার বাজার বসত। কালক্রমে মানুষ বেড়েছে । ফলে পথ আরও প্রশস্ত হয়েছে।
গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, ঠেলা গাড়ি এবং পরবর্তীতে কুমিল্লা- চাঁদপুরের সাথে কদাচিত যান্ত্রিক যান চলতে শুরু করে। সময়ের প্রয়োজনে মানুষের চলাচল বেড়ে যায়। যান চলাচলের বৃহত্তর স্বার্থে হাজীগঞ্জ বাজারের দু’পাশের দোকান-পাট ভেঙ্গে রাস্তা প্রশস্ত করতে হয়। জনসংখ্যা এবং বিভিন্ন মুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির গতির সাথে যান চলাচল বৃদ্ধির হার দ্রুত থেকে দ্রুত বেড়েছে। সে যাত্রায় বর্তমানে হাজীগঞ্জ অনন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাজীগঞ্জ বাজারে হাজার হাজার পুরুষ-মহিলা সম্মানিত ক্রেতা, রিক্সা, সি.এন.জি, ঠেলাগাড়ি, বাস. ট্রাক সহ সকল প্রকার মালবাহী ও যাত্রীগণের যান চলাচল একটি মাত্র প্রধান সড়ক দিয়েই চলতে হয়।
হাজীগঞ্জের পশ্চিমে রয়েছে চাঁদপুর জেলা সদরসহ পাশ্ববর্তী বেশ ক’টি উপজেলা এবং এর সাথে শরীয়তপুর ছাড়াও বৃহত্তর বরিশালের হাজার হাজার যাত্রী যুক্ত হয়েছে।
হাজীগঞ্জের পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া এবং ফেনী তথা যুক্ত রয়েছে আরও একটি বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষ। দু’বৃহৎ অঞ্চলের মানুষ হাজীগঞ্জ বাজারের একটি মাত্র প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করে। থানা প্রশাসন এবং ট্রাফিক সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেন।
তারপরও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যান চলাচলের কারণে হাজীগঞ্জ বাজারে মাঝে মাঝে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়। যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। যানজটের কারণে পরিবহনে ব্যবহৃত তৈল, গ্যাস ও যন্ত্রাংশের ক্ষয় বা অপচয়ের কথা বাদ দিলেও চাঁদপুর জেলার সম্মানিত যাত্রী সাধারণসহ দু’বৃহৎ অঞ্চলের পাশ্ববর্তী জেলা সমূহের যাত্রীগণের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। যা দিনের পর দিন আরও প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে দিনের পর দিন যানবাহন বৃদ্ধি পাবেই। যানবাহনের অস্বাভাবিকতায় ভবিষ্যতে ক’বছরের মাথায় হাজীগঞ্জ বাজারকে আবারও ভেঙ্গে (!) রাস্তা প্রশস্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। যা অতীতেও করেছিল। বিকল্প রাস্তা না থাকলে ব্যাপক জনগোষ্টির স্বার্থে কর্তৃপক্ষ হুকুম দখল করে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বাজারের প্রধান সড়কটি আবারও প্রশস্ত করতে বাধ্য হতে পারেন অথবা অনেক দূর দিয়ে বাইপাস সড়ক নিতে হতে পারে।
এতে করে হাজীগঞ্জ বাজারের সু-প্রতিষ্ঠিত সকল স্তারের সম্পদ-সম্পত্তির মালিক ও ব্যবসায়ীগণ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ হাজীগঞ্জ বাজারের সম্পদ-সম্পত্তির মালিক ও ব্যবসায়ীগণের উপর আবার কখনও যেন বিপর্যয় নেমে না আসে। সে লক্ষ্যে বাজারের স্বার্থ রক্ষা করে বাজার সংলগ্ন বিকল্প পথে যান চলাচলের জন্য এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
একটি রাস্তা তৈরী করার উদ্যোগ নিয়ে যান চলাচল উপযোগি করতে বেশ সময় লাগে। তাই আমি এ’ বিষয়টি নিয়ে আজ থেকে ১৪-১৫ বছর পূর্বে স্থানীয় পত্রিকা ও জন প্রতিনিধিগণের বরাবরে নিজ হাতে বিকল্প রাস্তার নক্সা তৈরী করে প্রস্তাব পেশ করি।
সে সময় প্রস্তাবিত বিকল্প রাস্তার প্রস্তাব গৃহীত ও বাস্তবায়ন হলে আজ ১৪-১৫ বছরের মাথায় বর্তমানে হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট দুঃস্যহ হতো না।
বাজারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে কত যে সময় লাগে তা’ ভূক্তভোগীরাই ভালো যানেন। তাই এখনই বিকল্প রাস্তার উদ্যোগ না নিলে আগামী ৪-৫ বছর পর হাজীগঞ্জ বাজারে যানজটের অবস্থা কি দাঁড়াবে তা’ বলার অপেক্ষা রাখেনা। যার সমাধাণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ এখনই প্রয়োজন।
আজ হোক, কাল হোক, সকল বিবেচনায় বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করতেই হবে। ‘বিকল্প’ রাস্তা হাজীগঞ্জ বাজারকে ছেড়ে অনেক দুর দিয়ে তৈরি করলে সমৃদ্ধ এ’ বাজারের ব্যবসার বিরাট ক্ষতি হবে এবং তা’বাস্তবায়ন অনেক বেশি ব্যয় সাপেক্ষ হবে। সম্পদ-সম্পত্তির মালিক ও ব্যবসায়ীগণের স্বার্থের পরিপন্থি এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা ঠিক হবে না।
হাজীগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়কের দক্ষিণে নদী। প্রধান সড়ক থেকে নদী পর্যন্ত বিকল্প সড়ক বের করার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ রয়েছে, প্রধান সড়কের উত্তর দিকে পরিত্যাক্ত (খালের সম্পত্তি, বড় মসজিদের সম্পত্তি, জেলা পরিষদের সম্পত্তি এবং অতি সামান্য ব্যক্তি মালিকানাধীন) সম্পত্তি আছে। অতি মূল্যবান বিধায় সময়ের আলোকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আত্মসাৎ কিংবা দখলের চেষ্টা করবে, দখল হবে।
দখল হয়ে গেলে প্রয়োজনের তাগিদে পরে রাস্তা তৈরি করতে চাইলে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে এবং আইন প্রয়োগ করে জনস্বার্থে দখলদারদেরকে উঠাতে হবে। তখন ঝামেলা হবে অনেক। কাজেই সকল বিবেচনায় এখনই রাস্তার কার্যক্রম শুরু করলে তুলনামূলক ভাবে কম টাকায় বিকল্প রাস্তা তৈরি করা সম্ভব।
উক্ত রাস্তা তৈরি হলে বর্তমান প্রধান সড়ক দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যানবাহন প্রবেশ করবে। আর বিকল্প সড়ক দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে যানবাহন বের হবে। এক রাস্তা দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করবে। অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি বেরুবে।
এতে রিক্সা, সিএনজি, বাস, ট্রাক ইত্যাদি পরিবহনকে ভাগাভাগি করে চলাচলের ব্যবস্থাও করে দেয়া যাবে। যানজট নিরসন হবে, ক্রেতা-বিক্রেতা এবং বৃহৎ অঞ্চলের যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি কমবে। বাজারের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ ঘটবে।
বিষয়টি স্পষ্ট যে, হাজীগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশে অবস্থিত পরিত্যাক্ত খাল দিয়ে প্রস্তাবিত নক্সা মোতাবেক বিকল্প রাস্তা বের করলে সমৃদ্ধ এ বাজার এবং বাজারের সম্পদ-সম্পত্তির মালিক ও সম্মানিত ব্যবসায়ীগণ বিশাল ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবেন।
উপরন্তু ১) হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট দ্রুত নিরসন হবে, ২) বিকল্প বা প্রস্তাবিত বাইপাস রাস্তার পাশে বহু সংখ্যক নতুন মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আধুনিক নির্মাণ শৈলীতে গড়ে উঠবে, ৩) হাজীগঞ্জ বাজারের পরিধি দ্রুত সম্প্রসারিত হবে।
বাজারের দক্ষিণ নদী এবং উত্তর রেল সড়ক এর মাঝে পুরো এলাকা বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হবে। ৪) ব্যবসার গতি আরও বৃদ্ধি পেয়ে শুধু হাজীগঞ্জ বাজারেরই নয় বরং হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নতুন মাত্রা যোগ হবে।
সম্পদ-সম্পত্তির মালিক এবং ব্যবসায়ীগণ দয়া করে একটু ভেবে দেখবেন অদূর ভবিষ্যতে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ফোর লেন রাস্তা করতে গিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারকে সম্পূর্ণ বাইপাস করে অনেক দূর দিয়ে নতুন ভাবে বাইপাস সড়ক যদি চলে যায়। তাহলে আমার দেখা মতে হাজীগঞ্জ বাজার চান্দিনা বাজারের মত ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
প্রসঙ্গত, বলা প্রয়োজন এক সময় চান্দিনা বাজার ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ রমরমা ছিলো। যানজট নিরসনের স্বার্থে বাজার ছেড়ে বাইপাস সড়ক দূর দিয়ে নেয়ার কারনে চান্দিনা বাজারের অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে যায় এবং তুলনামূলক ভাবে উন্নয়ন ও সম্বৃদ্ধির গতি হ্রাসপায়। এমন অবস্থা আমাদের যেনো না হয়।
সময়ের প্রেক্ষাপটে যদি কখনও বাজারের অনেক দূর দিয়ে বাইপাস রোড করতেই হয়। তবে বাজার বাচাঁতে আগে দরকার-বাজারের নিকটবর্তী বাইপাস রোড তৈরি করা। সে লক্ষ্যে প্রয়োজন যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ। কোনো ধরনের অবহেলা এবং শৈথিল্যতা দেখালে এক দিন এর দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারবেন না।
কাজেই-সম্বৃদ্ধ হাজীগঞ্জ বাজার রক্ষায় এবং উত্তরোত্তর বাজারের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে “বাজারের অতি নিকটবর্তী স্থান দিয়েই” বিকল্প রাস্তা তৈরির বিষয়টি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে- জনপ্রতিনিধিগণের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সুধীবৃন্দসহ সবাই বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করি।
হাজীগঞ্জ বাজারের দু:সহ যানজটের যন্ত্রণা নিরসন, বাজারের উত্তোরাত্তর সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ, ব্যবসায়ীগণের স্বার্থ রক্ষা এবং চাঁদপুরসহ পাশ^বর্তী এলাকার যাত্রীসাধারণের যাতায়াত তথা সকল বিবেচনায় ‘ স্বল্প ব্যায়ে ’ বাজারের উত্তর দিকে অবস্থিত পূর্ব পশ্চিমের ‘পরিত্যাক্ত খাল বরাবর’, প্রস্তাবিত নক্সা মোতাবেক কিংবা প্রয়োজনীয় সংশোধন করে হলেও বিকল্প রাস্তা তৈরির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণপূর্বক বাস্তবায়ন করা-জনস্বার্থে অতি জরুরি।
লেখক-অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির, গবেষক ও শিক্ষাবিদ।
।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ১০ : ২৯ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ সোমবার
এজি/এইউ