হাজীগঞ্জে বন্যার পানিতে গ্রামীণ রাস্তার বেহাল দশা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই গ্রামীণ কাচা রাস্তাগুলোর বেহাল দশা সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বছর উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চল বন্যা প্লাবিত হওয়ায় অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তা পানি উঠে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে করে এসব আধা কাচা রাস্তার জনদূর্ভোগ চরমে পড়তে দেখা যায়। সাধারণ মানুষ বলছে এসব দুর্ভোগের চিত্র যেন দেখার কেউ নেই!

হাজীগঞ্জ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ও একটি আধুনিক পৌরসভা নিয়ে গঠিত। পৌর এলাকার দক্ষিণ অঞ্চলের ১০,১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি রাস্তা ইতিমধ্যে যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পুকুর পাড় কিংবা বিলের তীর দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তার পাশের সাইডগুলো ভেঙ্গে পড়তেছে। কিছু কাচা রাস্তায় ইট কংকেট না পেলায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এদিকে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে বিশেষ করে ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের ৬নং বড়কূল পূর্ব, ৭নং বড়কূল পশ্চিম, ৯নং গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ও ১০ নং গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন, ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাচা পাকা অধিকাংশ রাস্তা অতি বৃষ্টির ফলে চক ধরে ভেঙ্গে পড়া শুরু হয়েছে। এ ভেঙ্গে পড়ার মূল কারন হচ্ছে খাল বিল ও পুকুর পাড় ঘেঁষে রাস্তার দুই পাশে মাটি না থাকার কারন। অনেক রাস্তা বছরের পর বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় অস্তিত্ব নিয়ে টান দিয়েছে।

উপজেলার ৮নং হাটিলা ইউনিয়ন পরিষদের বেশীরভাগ রাস্তা গ্রামের বিলের তীর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর রাস্তার পাশ ভেঙ্গে পড়ছে। এই ইউনিয়নের মৎস্য খামারের কারনে গুরুত্বপূর্ন দুইটি রাস্তা ভেঙ্গে পড়ছে বলে স্থানীয় হাটিলা গ্রামবাসীর অভিযোগ।

উপজেলা জুড়ে এসব বেহাল রাস্তাগুলো দিয়ে চলাচলরত যাত্রীসাধারনের অভিযোগ, কবে নাগাদ কিভাবে কাজ হয়েছে অনেকে তা মনে করতে পারছে না। যেসকল ঠিকাদার কাজ করেছে বেশীভাগ কাজে অনিয়ম হয়েছে। যে কারনে পাকা রাস্তাগুলোর কার্ফেট উঠে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তাছাড়া গ্রামীণ রাস্তাগুলোতে ভারী যানবাহন চলাচল করায় ছোট বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে কাদায় পরিনত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এদিকে স্থানীয় চেয়ারম্যান কিংবা উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগ রাস্তা সংস্কারে তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষের বিষন্নতা দিন দিন বেড়েছে। এর কারণ হচ্ছে এসব রাস্তা দিয়ে সিএনজি বা অটো রিক্সা চলাচল করতে চায় না। গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে এসব ভূক্তভোগী যাত্রীসাধারনের।

কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর থেকে নওহাটা গ্রামের রাস্তায় চলাচল রত মানিক হোসেন, মানিক, আ. কালাম, কলেজ ছাত্রী শাহিনুর আক্তার বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। রাস্তায় বড় বড় গর্ত। হাটতে খুব কষ্ট হয়। অটোরিকশা চলাচলে কোন উপযোগি নেই। এভাবে হেটে গন্তব্য স্থানে যেতে হয়। গায়ের জামা কাপড়ে মাটির কাদা লেগে যায়। আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। আমরা প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ফারুক ও জামাল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামে একটু বৃষ্টি হলে রাস্তার গর্তে পানি জমে কাধায় একাকার হয়ে যায়। তখন রিক্সা বা অটো চলাচল দূরের কথা মানুষ হাটতে খুব কষ্টকর হয়ে যায়। তবে এ বছর বন্যার পানি উঠে যাওয়ার কারনে দুর্ভোগ বেশী পোহাতে হচ্ছে।

বেলচোঁ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, আমাদের সেন্দ্রা উত্তর পাড়া সোয়া এক কিলোমিটার রাস্তা কাঁদা আর খানাখন্দে নিমজ্জিত। রাস্তাটির কোড নাম্বার পড়লেও কাজের তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছেনা। আওয়ামী লীগের এতো বছরেও কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি।

৬নং বড়কূল পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কাচা রাস্তা যার অধিকাংশ রাস্তার কোড উপজেলা পৌকশলী বিভাগে রয়েছে। সামনে বরাদ্দ আসলে হয়তো কাজ দরার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, গ্রামীণ রাস্তাগুলো কাজ করতে গিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। প্রতিবছরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে আমরা যে যে রাস্তাগুলো ভেঙ্গে গেছে কিংবা সস্কার করা প্রয়োজন এসব রাস্তার পরিমাপ নিয়ে উপরস্থ কার্যালয়ে পুণসংস্কার এর জন্য আবেদন দিয়ে থাকি। এ বছর বন্যা হওয়ার কারনে প্রায় শতভাগ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তালিকা দিয়েছি।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাফস শীল বলেন, চলতি বছর এ অঞ্চলের অধিকাংশ রাস্তা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানি ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে। তবে ভারী যানবাহন যাতে গ্রামের রাস্তাগুলোতে না চলাচল করে তার নির্দশনা স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। বর্তমান নতুন সরকারের নির্দশনা অনুযায়ী পরবর্তী কাজের গতিবিধি সম্পর্কে বলা যাবে। সে পর্যন্ত সবাইকে একটু কষ্ট করে চলাফেরা করতে হবে।

প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Share