চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পরকীয়ার জেরে প্রবাসী স্বামী ইমরান হোসেনকে জবাই করা প্রেমীক ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আশেক এলাহী বাবুকে যশোর থেকে আটক করে পুলিশ। খুনের ৪ দিনের মাথায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হাজীগঞ্জ থানার পুলিশের টিমসহ গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা যশোরের নোয়াপাড়া থেকে বৃহস্পতিবার সকালে আটক করা হয়। হাজীগঞ্জ থানার এসআই আব্দুর রহমান ও এ এস আই সুজনের নেতৃত্বে পুলিশ ব্যাটিলিয়ানের সহযোগিতা খুনি আশেক এলাহী বাবু ভারতে যাওয়া সুযোগের সময় আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুনি আশেক এলাহী বাবুকে হাজীগঞ্জ নিয়ে আসলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বাজারের ট্রাক রোডে সিঙ্গাপুর বিল্ডিং ঘটনাস্থল বাসায় নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও ঘটনাস্থল থেকে তেমন কোন দৃশ্যমান আলামত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পরে খুনি আশেক এলাহী বাবুকে হাজীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ কুমার দে ও থানার ওসি আব্দুর রশিদ পুনরায় আসামী বাবুর সাথে কথা বলেন।
আরও পড়ুন… হাজীগঞ্জে পরকীয়ার জেরে প্রবাস ফেরত স্বামীকে হত্যা, স্ত্রী আটক
থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ আসামী থেকে খুনের বর্ণনা আংশিক প্রকাশ করে বলেন, সে বলেছে প্রথমে গলায় কোপের মাধ্যমে অধ্যেক অংশ আলাদা করে ফেলে। মৃত্যুর আগে ইমরান আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করলে বুকে ৪/৫ টি কোপ দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে সহজে পালিয়ে যায়। তার কাছ থেকে আলামত উদ্ধারের বিষয়ে আরো তদন্তের কাজ বাকি রয়েছে। তবে এ কাজে স্ত্রী ফারজানা আক্তারের সহযোগিতা বিষয়ে তাকেও রিমান্ডে আনার পর বিস্তারিত জানতে পারবো।
এদিকে সকাল থেকে হাজীগঞ্জে খুনি আশেক এলাহী বাবুকে কখন নিয়ে আসা হবে এ অপেক্ষা সবার নজরে ছিল। পুলিশ যখন খুনিকে নিয়ে যে বাসায় প্রবাসীকে খুন করা হয়েছে সে বাসায় পরিদর্শনে গেলে দূরদর্শী মানুষ খুনিকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। এ সময় জনতা খুনি আশেক এলাহী বাবুর ফাঁসি দাবি করেন।
নিহত প্রবাসী ইমরান হোসেনের বড় ভাই আব্দুল কাইউম বলেন, আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ছোট ভাইকে খুন করার অপরাধে খুনি বাবুর ফাঁসি দাবি করছি।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর রবিবার হাজীগঞ্জ বাজারে ট্রাক রোডে সার্কেল অফিস সংলগ্ন সিংগাপুর ভবনে সৌদি প্রবাসী ইমরান বাশার (৪০) কে জবাই করে হত্যা করে হত্যা করে খুনি আশেক এলাহী বাবু। ইমরান বাশার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের দালাল বাড়ির আবুল বাসারের পুত্র। দুই মাস পূর্বে সে দেশে আসেন। ট্রাক রোড সংলগ্ন ভাড়া বাসায় তার পরিবারসহ বসবাস করতেন। ১৮ অক্টোবর সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
রবিবার রাত ৮ টায় নিজ বাসায় শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুকের আশেক এলাহি বাবু এই হত্যাকান্ড ঘটায় বলে জানান নিহতের স্ত্রী ফারজানা আক্তার । স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের হাতেই জীবন গেলো ইমরান বাশারের।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ফারজানার সাথে ইমরান বাশারের বিয়ে হয় দশ বছর পূর্বে। স্বামীর প্রবাসে থাকার সুযোগে আপন বড় বোনের দেবর আশেক এলাহীর সাথে দু’বছর যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে স্ত্রী ফারজানার।
কয়েক মাস পূর্বে স্বামী স্বর্নালঙ্কার ও টাকা পয়সা নিয়ে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায় ফারজানা।
স্বামীর চাপে পড়ে ফারজানার বাবা জাকনীর জসিম উদ্দিন তার মেয়েকে পুলিশের সহযোগীতায় ঢাকা মিরপুর থেকে পরকীয়া প্রেমিকের কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেয়। স্বামী একমাত্র সন্তান আফনানের দিকে তাকিয়ে সব কিছু মানিয়ে নেন। স্ত্রীকে বিশ্বাস করে এই মানিয়ে নেয়াটাই যেন কাল হলো ইমরানের।
স্ত্রী ফারজানা দাবী করেন, দীর্ঘ দিন যাবৎ বাবু তাকে উত্তপ্ত করে আসছে। ঘটনার সময় আশেক এলাহী বাবু ও তার স্বামী ইমরান নিজ বাসায় কথা বলছিলেন। তিনি নামাজের অযু করতে গেলে এই সুযোগে ইমরানকে বাবু জবাই করে। তিনি চিৎকার শুনে এসে দেখেন ইমরান রক্তাক্ত জখম অবস্থায় পড়ে আছেন। সাথে সাথে ডাক চিৎকার করে স্বামীকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় নিহতের ৬ বছরের পুত্র আফনান বাসায় ছিলেন।
এ অভিযান ও খুনের বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা যশোর থেকে খুনি আশেক এলাহী বাবুকে হাজীগঞ্জ এনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তার তথ্যমতে সে বলেছে প্রথমে গলায় কোপের মাধ্যমে অধ্যেক অংশ আলাদা করেছে। মৃত্যুর আগে ইমরান আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করলে বুকে ৪ টি কোপ দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে সহজে পালিয়ে যায়। তার কাছ থেকে আলামত উদ্ধারের বিষয়ে আরো তদন্তের কাজ বাকি রয়েছে। এই হত্যাকান্ডের আরেক আসামী ইমরানের স্ত্রী ফারজানাকে চাঁদপুর আদালতের মাধ্যমে জেল খানায় রয়েছে। তাকেও রিমান্ড দাবি করেছি।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ১২ অক্টোবর ২০২৩