Home / উপজেলা সংবাদ / হাজীগঞ্জ / হাজীগঞ্জে পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা’ ঘোষণার পরেও ভিক্ষুকের ছড়াছড়ি  
ভিক্ষুকমুক্ত

হাজীগঞ্জে পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা’ ঘোষণার পরেও ভিক্ষুকের ছড়াছড়ি  

প্রায় দুই বছর পূর্বে চাঁদপুর জেলার একমাত্র হাজীগঞ্জে দুইশ ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের মাধ্যমে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়। ততকালীন সময়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারি ও জনপ্রতিনিধিদের মাত্র এক দিনের বেতনের টাকায় ভিক্ষুকমুক্ত করা হয় পুরো হাজীগঞ্জ উপজেলা। তাদের এই এক দিনের বেতনের টাকায় হাজীগঞ্জের প্রায় দুশ ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার মাধ্যমে জেলায় প্রথম কোন উপজেলা হিসাবে হাজীগঞ্জকে ভিক্ষুককমুক্ত ঘোষণা করে প্রশাসন।

আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম হাজীগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেন। এর আগে ততকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়ার তত্ত্বাবধানে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন পর্যায়ক্রমে তাদের স্ব-স্ব ইউনিয়নকে ভিক্ষুক মুক্ত করেন।

সর্বশেষ হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ. স ম মাহবুব উল আলম লিপনের ঐচ্ছিক চেষ্টায় ৩৭ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের উপকরণ প্রদান করে হাজীগঞ্জ উপজেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান।

উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হাদী ও বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী জানান, আমরা জনপ্রতিনিধিগণ আগে আমাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে যারা ভিক্ষা করে তাদেরকে চিহ্নিত করি। এর পরেই তাদেরকে পুনর্বাসন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে জরিপ করা হয়।

জরিপে যেসব ভিক্ষুকের নাম এসেছে শুধুমাত্র তাদেরকে নিয়ে তালিকা করা হয়। সে তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়ার পর উনি ওই তালিকা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে যাচাই-বাছাই করেন। সে তালিকার সূত্র ধরেই ভিক্ষুকদেরকে পুনর্বাসনের বন্দোবস্তের লক্ষে রিকশা, ভ্যান গাড়ি, সেলাই মেশিন, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দেয়া হয়।

এরপর পর্যায়ক্রমে উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৫জন, কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নে ১০জন, গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে ৯ জন, হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নে ১৪ জন ও সদর ইউনিয়নে ২৫ জন, হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নে ১০ জন ও দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়নে ১৩জন, বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নে ৪ জন, বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নে ৮ জন ও গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে ১১ জন ও স্বর্বশেষ পৌরসভার ৩৭ জনকে পুর্নবাসনের উপকরণ প্রদান শেষে হাজীগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

বর্তমানে দেখা যায়, ঐসব ভিক্ষুকদের পাশাপাশি নতুন অনেক ভিক্ষুক যোগ হয়ে ভিক্ষাবৃক্তি চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ গুরছে গ্রামে, কেউ বাজারে আবার নতুন নতুন ভিক্ষুকদের দেখা যায় প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে। কিছু ভিক্ষুক মানুষের কাছে গিয়ে এমন বায়না করে যতি নাও থাকে তাহলেও তাদের পিচু যেন কোন ভাবেই ছাড়ছে না। এদিকে বাজারের ব্যবসায়ীরাও তাদের জ্বালায় প্রায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দেখা যায়, দোকানে ক্রেতা থাকে তার পরেও তাদেরকে আগে বিদায় না করলে ক্রেতাদের কাছে পর্যন্ত চেয়ে বসে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ভিক্ষুকের বেশীভাগ বাহিরের উপজেলার। তবে প্রশ্ন হচ্ছে পুনবাসনের পরেও যেসব ভিক্ষুক তাদের স্বভাব পরিবর্তন করতে পারেনি তাদের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন তদারকির নজর নেই। যে কারনে ভিক্ষাভিক্তি কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া বর্তমানে করোনা মহামারির ফলে দিন দিন ভিক্ষুকদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে।

প্রপ্রতিবেদকঃজহিরুল ইসলাম জয়,৯ এপ্রিল ২০২১