চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পরকীয়ার জেরে প্রবাসী স্বামী ইমরান হোসেনকে জবাই করে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ১৪ অক্টোবর শনিবার হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের সামনে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী এবং বাজারের সচেতনমহলের উপস্থিতিতে উক্ত মানববন্ধনে নিহতের খুনি আশেক এলাহী বাবু ও ফারজানা আক্তারের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা।
নিহতের বড় ভাই আব্দুল কাইউম মানববন্ধনে বলেন, ছোট ভাই ইমরানকে জবাইকরে রির্মম ভাবে হত্যা করেছে খুনি আশেক এলাহী ও ফারজানা আক্তার। ইতিমধ্যে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু তারা যেন কোন ভাবেই আইনের ফাঁকে পার পেয়ে না যেতে পারে সে জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করে খুনিদের অতিদ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধনে দাবি জানাচ্ছি। এ সময় নিহত ইমরানের মা, বোন, একমাত্র সন্তানসহ এলাকাবাসী খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান।
উক্ত মানববন্ধনে হাজীগঞ্জ বাজারের মানুষ এ পরকীয়ার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে খুনিদের অতিদ্রুত ফাঁসি দিলে সমাজের এ অভক্ষ্য অনেকটা দূর হবে।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর রবিবার হাজীগঞ্জ বাজারে ট্রাক রোডে সার্কেল অফিস সংলগ্ন সিংগাপুর ভবনে সৌদি প্রবাসী ইমরান বাশার (৪০) কে জবাই করে হত্যা করে হত্যা করে খুনি আশেক এলাহী বাবু। ইমরান বাশার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের দালাল বাড়ির আবুল বাসারের পুত্র। দুই মাস পূর্বে সে দেশে আসেন। ট্রাক রোড সংলগ্ন ভাড়া বাসায় তার পরিবারসহ বসবাস করতেন। ১৮ অক্টোবর সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
রবিবার রাত ৮ টায় নিজ বাসায় শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুকের আশেক এলাহি বাবু এই হত্যাকান্ড ঘটায় বলে জানান নিহতের স্ত্রী ফারজানা আক্তার । কিন্তু পরে অবশ্যক জানাযায়, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের হাতেই জীবন গেলো ইমরান বাশারের।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ফারজানার সাথে ইমরান বাশারের বিয়ে হয় দশ বছর পূর্বে। স্বামীর প্রবাসে থাকার সুযোগে আপন বড় বোনের দেবর আশেক এলাহীর সাথে দু’বছর যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে স্ত্রী ফারজানার।
কয়েক মাস পূর্বে স্বামী স্বর্নালঙ্কার ও টাকা পয়সা নিয়ে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায় ফারজানা।
স্বামীর চাপে পড়ে ফারজানার বাবা ঝাকনীর জসিম উদ্দিন তার মেয়েকে পুলিশের সহযোগীতায় ঢাকা মিরপুর থেকে পরকীয়া প্রেমিকের কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেয়। স্বামী একমাত্র সন্তান আফনানের দিকে তাকিয়ে সব কিছু মানিয়ে নেন। স্ত্রীকে বিশ্বাস করে এই মানিয়ে নেয়াটাই যেন কাল হলো ইমরানের।
ঘটনার চার দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার খুনি আশেক এলাহী বাবুকে যশোরের নোয়াপাড়া থেকে আটক করে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হাজীগঞ্জ থানার পুলিশের টিমসহ গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা যশোর থেকে বৃহস্পতিবার সকালে আটক করা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুনি আশেক এলাহী বাবুকে হাজীগঞ্জ নিয়ে আসলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বাজারের ট্রাক রোডে সিঙ্গাপুর বিল্ডিং ঘটনাস্থল বাসায় নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও ঘটনাস্থল থেকে তেমন কোন দৃশ্যমান আলামত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পরে খুনি আশেক এলাহী বাবুকে হাজীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ কুমার দে ও থানার ওসি আব্দুর রশিদ পুনরায় আসামী বাবুর সাথে কথা বলেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ আসামী থেকে খুনের বর্ণনা আংশিক প্রকাশ করে বলেন, আসামী আশেক এলাহী বলেছে, প্রথমে গলায় কোপের মাধ্যমে অধ্যেক অংশ আলাদা করে ফেলে। মৃত্যুর আগে ইমরান আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করলে বুকে ৪/৫ টি কোপ দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে সহজে পালিয়ে যায়। তার কাছ থেকে আলামত উদ্ধারের বিষয়ে আরো তদন্তের কাজ বাকি রয়েছে। তবে এ কাজে স্ত্রী ফারজানা আক্তারের সহযোগিতা বিষয়ে তাকেও রিমান্ড চাওয়া হবে।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়,১৪ অক্টোবর ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur