সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নারীদের বয়স্কভাতা পাওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ৬২ বছর। অথচ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিদিষ্ট বয়সের আগেই বয়স্ক ভাতা নিচ্ছেন এক নারী প্যানেল চেয়ারম্যান।
জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী গত (২৮ মার্চ) সোমবার পর্যন্ত মোসা. মাহফুজা বেগমের বয়স ৫২ বছর ৭ মাস ২৬ দিন। অথচ তিনি গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মোসা. মাহফুজা বেগম হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের তালুকদার বাড়ির মৃত হাফিজ উদ্দিন তালুকদারের মেয়ে এবং তিনি বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত-৩ (ওয়ার্ড নং- ৭, ৮ ও ৯) ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে দায়িত্বরত আছেন।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গত পরিষদে অর্থ্যাৎ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সফিকুল ইসলাম মীর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে মোসা. মাহফুজা বেগম তার মা মরহুম তফুরেন্নেছার প্রাপ্ত বয়স্ক ভাতার কার্ডটি তার নামে প্রতিস্থাপন করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন।
এরপর তফুরেন্নেছার নামে তার মায়ের বয়স্ক ভাতার কার্ডটি প্রতিস্থাপন হলে তিনি ২০২০ সাল থেকে ভাতার টাকা ভোগ করে আসছেন। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্মতারিখ অনুযায়ী ওই সময়ে তার বয়স ছিল প্রায় ৫১ বছর। এ বিষয়ে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান তফুরেন্নেছার সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ জুনের পর সকল ভাতা অনলাইনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যার ফলে তথ্য গোপন করে নতুনভাবে ভাতা ভোগ করার সুযোগ নেই। কিন্তু এর আগে এনালগ সিস্টেম থাকার কারণে কিছু অনিয়ম হয়েছে। যা পরবর্তীতে চিহিৃত বা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং অনেকের ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সফিকুল ইসলাম মীর বলেন, জানতে পেরেছি মোসা. মাহফুজা বেগমের মা বয়স্ক ভাতা ভোগ করতেন। তাঁর মা মারা যাওয়ার পর তিনি ভাতার কার্ডটি নিজ নামে প্রতিস্থাপন করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি স্বাক্ষর দেইনি। ওই সময়ে মাহফুজা বেগম দায়িত্বরত প্যানেল চেয়ারম্যানের দিয়ে তার কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন।
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ প্রধানীয়া সুমনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নবাগত ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে আমি কিছুদিন আগে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা।
এ দিকে মোসা. মাহফুজা বেগমের ভাতা ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো. ইমান হোসেন বলেন, ওই সময়ে অনলাইন সিস্টেম না থাকার কারনে তার (মোসা. মাহফুজা বেগম) বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও ভাতার কার্ডটি চালু হয়।
হাজীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহদাত হোসেন প্রশিক্ষণে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের রুটিন ওয়ার্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু ইসহাক জানান, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তপূর্বক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বয়স না হলে তাঁর (মোসা. মাহফুজা বেগম) বয়স্ক ভাতার সুবিধাটি গ্রহণের কোন সুযোগ নেই।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২৯ মার্চ ২০২২