হাজীগঞ্জে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে কোলের সন্তানসহ এক নারী আত্মহত্যা করেছে। বুধবার বিকালে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা সাগরিকা এক্সপ্রেসের নিচে এক বছরের শিশু সন্তান আ. রহমানকে নিয়ে আত্মহত্যা করে তাহমিনা আক্তার (২৩) নামে এই নারী।

জানা যায়, ঐ নারী উপজেলার ধড্ডা দেওয়ানজি বাড়ির রফিকুল ইসলামের মেয়ে। গত ৫ বছর পূর্বে একই উপজেলার বাকিলা স্বর্ণা এলাকার প্রবাসী মাসুদুজ্জামের সাথে বিয়ে হয় তার। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। কিন্তু স্বামীর বাড়ীতে থাকার কোন ভাল পরিবেশ না থাকায় বিয়ের পর থেকে দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতো।

বিভিন্ন সময় কুয়েত প্রবাসী স্বামী ফোনে নানা বাজে কথা বলে আসতো। যা বিরক্তির কারন হয়ে গত এক মাস পূর্বে স্বামীকে তালাক দেয় তাহমিনা। তার পর থেকে স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

তালাক দেওয়ার পরেও প্রবাসী মাসুদুজ্জামান দেশে এসে তার বিরুদ্ধ নানা আপত্তিকর কথা ও ভয় ভীতি হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাহমিনা থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহ পায়নি। বিচার না পেয়ে এক প্রকার লজ্জা অপমানের ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয় বলে জানাযায়।

আত্মহত্যার আগমুহূর্তে তার ফেইসবুক আইডিতে লিখে যান, আমি তাহমিনা আক্তার রিমা, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি না। আমার মেয়েটারে সবাই দেখে রাখবেন যেন ভালো থাকে,সুস্থ থাকে। আমার বাবা মাকে কেউ দোষারোপ করবেন না, আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই নিয়েছি। মা আব্বু, রিপা, জুবায়ের, সুফিয়ান ভাই, মামা মামানি আমার মৃত্যুর পর আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবেন।

নিহত নারীর মামা জসিম উদ্দিন বলেন, থানায় অভিযোগ দিয়ে সঠিক কোন সুরাহা না পেয়ে মূলত স্বামীর কথার অত্যাচার থেকে বাচঁতে এ আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।

আত্মহত্যার সময় এক প্রতীক ট্রেনের সামনে থেকে সরে যাওয়ার জন্য হাত টানাটানি করে এবং ব্যর্থ হয়ে ডাকচিৎকার করে। তার পর আশপাশের মানুষ এসে দেখে ঐ নারী ও তার অবুঝ সন্তানের দ্বিখণ্ডিত লাশ হয়ে পড়ে আছে।

এদিকে খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ ওসি (তদন্ত) মিন্টু দত্ত জানান, বুধবার সাড়ে ৩ টার দিকে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা মেঘনা ট্রেনের নিচে সন্তানসহ নারী আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাস্থলে আসার পূর্বে রেলওয়ে পুলিশকে অবহিত করা হয়। এর মাঝে সাধারণ মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে মা ছেলের লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুর মর্গে নিয়ে যায় রেলওয়ে পুলিশ।

এ দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌ. জাকির হোসেন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন সোহেল।

এদিকে নিহত পরিবারের সাথে কথা বলে কোন মামলার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তারা পরে সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানান।

প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Share