হাজীগঞ্জ

হাজীগঞ্জে ক্লাস বন্ধ রেখে মাদরাসা শিক্ষকদের কর্মবিরতি

হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং পশ্চিম বড়কুল ইউনিয়ন রামচন্দ্রপুর কাশেমিয়া ছিদ্দিকীয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্টালগ্ন থেকে ভালো চললেও বর্তমানে কিছু অন্য মতাদর্শের শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে মাদ্রাসাটি।

এ শিক্ষকদের কাছে হার মানতে হয়েছে মাদ্রাসার বিভিন্ন কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীর পড়া লেখার মানসহ প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত এলাকাবাসী। শিক্ষকরা একের পর এক কোন ধরনের অযুহাত ছাড়াই ঝামেলার মধ্যে পেলছেন প্রতিষ্ঠানটিকে।

এমনকি শিক্ষকদের মধ্যে হট্রগোলের সৃষ্টিসহ সাধারণ লোকদের মাঝে হাসাহাসির মত ঘটনাও ঘটিয়েছেন তারা। তাদের এসকল কর্মকান্ড নিয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

সর্বশেষ বুধবার (১৮ জুলাই) ক্লাস বন্ধ রেখে ইস্যুবিহীন কর্মবিরতি পালন করেছেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তাদের এমন ঘটনা সম্পর্কে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহআলী রেজা আশ্রাফীসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের কিছুই জানানো হয়নি।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বয়স্ক হওয়া সকল হর্তাকর্তা হলেন ভাইস প্রিন্সিপাল মো. সামছুদ্দিন, বাংলা প্রভাষক মো. জসিম উদ্দিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শহীদুল্লাহ, মৌলভী আহসান হাবিব ও সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন।

তারা যখন যে সিদ্ধান্ত নিবেন অন্যান্য শিক্ষকদের সেই সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করানো হচ্ছে। বুধবারের কর্মবিরতি পালনের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানিয়েছেন প্রতিদিনের ন্যায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে মাদ্রাসা এসছেন। কোন প্রকার যোগাযোগ ছাড়াই এরা কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কি জন্য এমনটি করতে হবে কাউকে কিছু না বলে সারাদিন তারা কর্মবিরতী পালন করেন।

তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষক এবং কর্মচারিরা জিম্মি রয়েছে। যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত তারা হাতে নিবেন তাদের ওই সিদ্ধান্তগুলো মেনে নিতে অন্যাদের বাধ্য করাচ্ছে জামায়াতপহ্নী দুই শিক্ষক জসিম উদ্দিন ও আলমগীর হোসেন।

বুধবারের কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্তও এই দু’জনের ইঙ্গিতেই হয়েছে। যে কারনে দুপুর পর্যন্ত ক্লাস না হওয়া শিক্ষার্থীরা স্ব-ইচ্ছায় বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়। শিক্ষকদের কান্ডকহীন ঘটনার সম্পর্কে জানেনি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহআলী রেজা আশ্রাফী, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ ও অধ্যক্ষ মো. শফিকুর রহমান।

প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার, সবুজ ও দিদার হোসেন কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আজকে আমাদের কোন শ্রেণীর ক্লাস হয়নি। কেন হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীরা দিতে পারেননি। তাই ক্লাশ না হওয়া (দুপুর ১টায়) আমরা এখন বাড়ি চলে যাই।

মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল সামছুদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি কর্মবিরতি পালন সম্পর্কে সদোত্তর দিতে পারেননি। শুধু বলেছেন এটা আমাদের অব্যন্তরিন বিষয়।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. শফিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাদ্রাসার কাজে ঢাকা আছি। তবে ঢাকা আসার পথে ঘটনাটি শুনেছি। শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন কতটুকু আইনসম্মত হয়েছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সম্পূন্ন বে-আইনী। আমি সভাপতির সাথে কথা বলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

মাদ্রাসার সভাপতি মো. হারুন অর রশিদের মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। ম্যানেজিং কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহআলী রেজা আশ্রাফি’র সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষকদের এমন ঘটনায় জানার পর পরই সভাপতির সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন (বৃহস্পতিবার) থেকে চাকুরিতে শিক্ষকরা যোগদান করবেন।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েতো শিক্ষার্থীদের জিম্মি করতে পারবে না। এটি সম্পূর্ন বে-আইনী কর্মবিরতি পালন।

তবে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষকরা সাময়িক পরীক্ষার হল ডিউটি, পরীক্ষার্থীদের খাতা দেখা বাবদ বিল, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আলাদা সন্মানিসহ অহেতুক অযক্তিক ইস্যু নিয়ে এ কর্মবিরতি পালন করেছেন।

প্রতিবেদক : জহিরুল ইসলাম জয়

Share