মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এসডিজি‘র অভিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি ইনোভেশন নিয়ে পুরোদমে কাজ করছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ নির্বাহী কর্মকর্তা বেশাখী বড়ুয়াসহ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টজনেরা।
‘আজকের সুস্থ কিশোরী ও নিরাপদ মাতৃত্বই আগামি দিনের টেকসই উন্নত বাংলাদেশ’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে টেকসই উন্নত বাংলাদেশের সাথে শরীক হতে হাজীগঞ্জে বিশেষ ইনোভেশনে সফলতা আনতে সরকারের এই দুটি দপ্তর তাদের দাপ্তরিক কাজের বাইরে বিশেষ টিম কাজ করে চলেছেন।
এই কার্যক্রমের ফলে ইতিমধ্যে উপজেলা সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে কিশোর কর্নার স্থাপন করে কিশোরী স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল স্কুল ও মাদরাসার ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে স্যানেটারি ন্যাপকিন বিতরণ ও বিদ্যালয় থেকে দূরে বাড়ি কিন্তু তুলনামূলক দুস্থ অসহায় এমন ছাত্রীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই ইনোভেশনের মূল লক্ষ্য হলো সরকারের এসডিজি’র ১৭ অভিষ্টের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর অভিষ্ট বাস্তবায়ন করা। ইনোভেশন নিয়ে হাজীগঞ্জে কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। এসব কাজের বরাদ্দ আসছে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের এলজিএসপির অর্থায়ন থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে ১৭টি অভিষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ নম্বর অভিষ্ট হলো সকল বয়সের মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। ৪ নম্বর অভিষ্ট হলো সকলের জন্য অক্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি, শতভাগ বিদ্যালয়ে পৃথক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ।
৫ নম্বর অভিষ্ট জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন। এই ৩টি অভিষ্ট পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মূলত এই বিষয়গুলো নিয়ে ইনোভেশনের মাধ্যমে কাজ করছে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কর্নধার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখি বড়ুয়া।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, এই ইনোভেশনের মাধ্যমে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নত মানবসম্পদ গড়ে তোলা। সুস্থ শিশু জন্মদানের মাধ্যমে সুস্থ জাতি গঠনের লক্ষ্যে কিশোরী কর্নারসমূহে কিশোরীদেরকে সেবাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই কিশোরী কর্নার থেকে সেবা নিয়ে আজকের কিশোরীরা আগামী দিনে তাদের শারীরিক সক্ষমতা নিজেরা বুঝতে পারবে। এই সেবার মাধ্যমে কিশোরীরা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এতে করে সুস্থ কিশোরী ভবিষ্যতে সুস্থ মা হবে আর সেই সুস্থ মা সুস্থ সন্তান জন্ম দেবে। জাতি সুস্থ সন্তান পেলে সুস্থ জাতি গঠনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে। নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন ও উন্নত, সুস্থ মানবসম্পদ গড়ার প্রয়াসে এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। কিশোরী কর্নারে সেবাদানের পাশাপাশি কিশোরী ও নারীদেরকে নিয়ে ইতিমধ্যে ৪৯৮টি উঠান বৈঠক সম্পন্ন করেছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়। এই সকল বৈঠকে নারীর স্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্ব, যথাসম্ভব সিজার এড়িয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে নরমাল ডেলিভারি করানো বিষয়ে ধারণাসহ পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ইনোভেশননের অংশ হিসেবে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হচ্ছে। স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরনের মাধ্যমে অধিকাংশ মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলোকে কুসংস্কার ও লজ্জার চাদর থেকে কিশোরী বেরিয়ে আসবে। এতে বিপদগ্রস্ত হয় নিরাপদ মাতৃত্বের প্রথম ধাপ। কিশোরী স্বাস্থ্য ও মানসিক সুরক্ষা, বয়ঃসন্ধিকালীন পুষ্টিজ্ঞান, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং রোধে সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক সভা চলমান রয়েছে। মূলত এই সকল সভার মাধ্যমে কিশোরীদেরকে আরো বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতনার লক্ষ্যে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
অপরদিকে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া রোধকল্পে বিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক দুরে বাড়ি ও দুস্থ অসহায় এমন ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে বাইসাইকেল বিতরণ করা হচ্ছে। এই বাইসালে বিতরণ কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার ছাত্রীর মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ শেষ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই বাইসাইলে বিতরণ উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল ছাত্রীদেরকে দেয়া হবে।
এ ছাড়াও ইনোভেশনের কার্যক্রমের মাধ্যমে উপজেলার ৫৭টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, অভিভাবক, সকল ছাত্রীদের উপস্থিতিতে কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মানসিক সুরক্ষা, পুষ্টিজ্ঞান, বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সভা আয়োজন চলমান রয়েছে। উপজেলার ১২টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য আলাদা ওয়াশব্লক কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলার ৯৬টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের তালিকাভুক্তি ও সেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারকরণ করা হচ্ছে। বিশেষ সেবার মাধ্যমে গর্ভকালীন সেবার হার (৪টি ভিজিটে) ৩১ থেকে ৫৭ ভাগে এ উন্নীত করা হয়েছে, সিজার এড়িয়ে নরমাল ডেলিভারির হার ৬ ভাগ থেকে ১৯ ভাগে উন্নীতকরণ করা হয়েছে, সিজার রোধে বেসরকারি হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে ডেলিভারির হার ৩১ ভাগ থেকে ২২ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় সিজারের হার ৫৩ ভাগ থেকে ৪১ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলায় মাতৃমৃত্যুর হার ১৩০ থেকে ৮০ (প্রতি লাখে) নামিয়ে আনা হয়েছে।
ইনোভেশনের বিষয় নিয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ইতোমধ্যে ইনোভেশনের বেশ কিছু দিকে আমরা সফলতা পেয়েছি। আশা করছি অচিরেই আমরা পুরো ইনোভেশনের সফলতা পাবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখি বড়ুয়া বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এসডিজির ১৭ অভিষ্টের ৩ ৪ ও ৫ এর অংশ বাস্তবায়নে আমরা ইনোভেশন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এসডিজি’র ৩, ৪ ও ৫ নম্বর অভিষ্টে সফলতা আনতে বর্তমানে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাজুড়ে যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে আর এতে সফলতা আসলে এই প্রকল্পটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
করেসপন্ডেট,২৭ জানুয়ারি ২০২১