হাজীগঞ্জে এক ত্যাগী নেতাকে জড়িয়ে শুকুর আলম শুভর স্ট্যাটাস

বর্তমান হাজীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনু ভাই যে মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন (ছবিতে) তাকে সরকারি আমলের বর্তমান নেতাকর্মীরা খুব একটা চিনবে না…

বিরোধী দলের তকমা থেকে আজকের ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ সরকারি দলের রূপদান পেতে যেসকল নেতাকর্মীর তাজা রক্তকনিকায় রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে-

জেল-জুলুম- হামলা-মামলা সহ নির্মম শারীরিক নির্যাতিন মোকাবিলা করার পরেও দুঃসাহসিক ভুমিকা নেয়া যেসকল কর্মীর ত্যাগের বিনিময়ে একটানা ৩ টার্ম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আজ আওয়ামী লীগ!
সেই সংগ্রামী মানুষগুলোর মধ্যে (মাইনু ভাই জড়িয়ে ধরে তোলা ছবিতে) এই মানুষটিও অন্যতম একজন!
যার পুরো নাম #শাখাওয়াত_হোসেন_টিপু- (বাড়ী হাজীগঞ্জ উপজেলার ১১ নং হাটিলার ধড্ডা গ্রাম)

যেহেতু আমি সেই স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে পদার্পণ করি- আমার পরিবারও রাজনৈতিক পরিবার-তাই বয়সের তুলনায় একটু আগেভাগেই রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল আমার।
তো সেই স্কুল জীবন থেকেই দেখেছি- হাজীগঞ্জে আওয়ামীলীগ-বিএনপির রাজনৈতিক সংঘাত সংঘর্ষে আওয়ামীলীগের পক্ষে যে ক’জন হাতেগোনা তৎকালীন ছাত্রনেতা বিএনপি জামায়াতকে প্রতিরোধে রাজপথের অগ্রভাগে অকুতোভয় বিপ্লবীর ভুমিকায় থাকতো-
টিপু ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম একজন সংগ্রামী…

আওয়ামীলীগের সরকারি আমলে অবমূল্যায়িত এই টিপু ভাই আ”লীগের সেই বিরোধী আমলে চরম নির্যাতিত হওয়ার জাস্ট সামান্য একটা ঘটনা আপনাদের জ্ঞাতার্থেঃ তুলে ধরছি,…

২০০৪ সালের মার্চে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের ডাকা হরতালে পিকেটিং করার সময় ঢাকার রাজপথ থেকে টিপু ভাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে যেদিন তুলে নিয়ে যায় খালেদা নিজামীর পেটুয়া বাহিনী-
তখন থেকে একটানা ৪৪ দিন জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে রিমান্ডের নামে নিষ্ঠুর ও নির্মম শারীরিক নির্যাতন করে জোর করে রেকর্ড করা স্বীকারোক্তির ভিডিও বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভিতে) একটানা ৬ মাস প্রচার করে তৎকালীন খালেদা নিজামীর জোট সরকার!!
“”উদ্দেশ্য ছিলো আওয়ামীলীগকে জনগনের সামনে বোমা হামলাকারী একটা দল হিসেবে তুলে ধরা””
পরবর্তীতে সেই মামলায় আরও ৫০/৬০ জন শীর্ষ নেতাকে আসামি করে বহু নেতাকে গ্রেফতার করে বিস্ফোরক মামলা ও দ্রুত বিচার আইনে দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দী করে রাখে শেখ হাসিনা ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে রাজপথে যেনো নামার সাহস কেউ না করে!!
সাখাওয়াত হোসেন টিপু ভাইকে সেই বিস্ফোরক মামলায় প্রধান আসামি করে ২ নাম্বার আসামি করা হয় জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, ৩ নং আসামি করা হয় মির্জা আজম এমপি ৪ নং আসামি করা হয় ঢাকার মেয়র সাঈদ খোকনকে, ৫ ও ৬ নাম্বার আসামি করা হয় যথাক্রমে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি লিয়াকত শিকতার ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি সহ বহু কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে…

দুঃখের বলবো!! না-কি কষ্টের বলবো! বুঝতে পারছি না…
২০০৪ সালের হরতাল কর্মসূচি পালনকালে রুজু হওয়া সেই মামলাটির প্রত্যেকটা আসামি আজ (একমাত্র টিপু ভাই ব্যাতিত) কেউ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা, কেউবা সংসদ সদস্য!
অথচ নব্য আওয়ামীলীগার নামধারী লুটেরা এবং আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া চাটুকার নির্ভর নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে হাজিরা দিয়ে তেলবাজি না করায় আ’লীগের জন্য সব হারানো নিবেদিত এই মানুষটি (সাখাওয়াত হোসেন টিপু ভাই) আওয়ামীলীগের কোনো লেভেল থেকেই নূন্যতম অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক প্রাপ্য মূল্যায়নটুকু আজও পায়নি!!
দুর্দিনের টিপুদের প্রতি সুদিনে এই অবমূল্যায়ন (আল্লাহ না করুক) আগামীতে যদি কখনো আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে ফিরে যায় তখন আজকের ত্যাগী অবমূল্যায়ন কতটা ভয়ংকর পরিনতি ডেকে আনবে এবং নেত্রী ও দলের ডাকে তখনকার তৃনমূল মাঠকর্মীরা কতটাই বা রিস্ক নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচী পালনে মাঠে নামার আগ্রহ দেখাবে!!
তা কি আওয়ামীলীগের বর্তমান নীতিনির্ধারক মহল একবারও ভেবে দেখেছেন ?

আওয়ামীলীগের বিরোধী আমলে এই টিপুদের ঠিকানা ছিলো রাজপথ-টু কারাগার!
সেদিনকার সেই বিরোধী দল আওয়ামীলীগ আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ১৪ বছর শেষ করে ১৫ বছরে পড়লো!!
টিপু’দের কিন্তু ঠিকানা মাগার আজও পরিবর্তন হয়নি!
আজও টিপুদের ঠিকানা সেই একটাই-
রাজপথ- টু কারাগার-আদালতের বারান্দা!!
হায়রে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ!! হায়রে শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ!!

সারমর্ম…
গত ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সম্মেলনে মাইনু ভাই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের এই ছবিটি হলো বিগত দিনগুলোতে আমার দেখা (শীর্ষ নেতা ও তৃনমুল কর্মীর) সেরা ছবি, তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনু ভাই এবং দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব হেলাল ভাইয়ের কাছে বিনীত অনুরোধ,
বিরোধী আমলের জেল-জুলুম নির্যাতন মোকাবেলাকরা শাখাওয়াত হোসেন টিপুদের মতো শেখ হাসিনা প্রশ্নে আপোষহীন কর্মীদের সাংগঠনিকভাবে প্রাপ্য নূন্যতম মূল্যায়নটুকু করুন প্লিজ!!
আমার বিশ্বাস স্বয়ং সৃষ্টি-কর্তা আপনাদের এই ত্যাগী-মূল্যায়নের পুরস্কার দিবেনই দিবেন ইনশাআল্লাহ্…

বিনীত…
মোঃ শুকুর আলম শুভ
১/১১তে শেখ হাসিনার গ্রেফতারের প্রতিবাদে জরুরি অধ্যাদেশ (সেনাকার্ফু) ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করায় চট্টগ্রাম বিভাগে একমাত্র এবং সারাদেশে সর্বপ্রথম যৌথবাহিনীর হাতে আটক হওয়া তৎকালীন ছাত্রনেতা।

প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

Share