চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে চলতি বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে যে কারনে সংরক্ষণের জন্য যায়গা নেই হিমাগারে। দেখা যায় গত এক মাস ধরে হাজীগঞ্জ মান্নান কোল্ড স্টোরেজে প্রতিদিন ৫ হাজার বস্তা করে ঢুকছে আলু। যা ইতিমধ্যে ধারন ক্ষমতার বাহিরে চলে এসেছে।
জানা গেছে, এ বছর উপজেলা পর্যায়ে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্র ছিলো ১৩ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৮শ হেক্টর জমিতে এবং আলু উৎপাদন হয়েছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অর্থ্যাৎ ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায়, শীতে কুয়াশা না পড়ায় এবং রোগ-বালাই না হওয়ায় আশানূরূপের চেয়ে রেকর্ড পরিমান আবাদ হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, চলতি মৌসুমে আলুর আবাদ রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছে। কারণ, বর্তমানে প্রতিকেজি আলু পাইকারি দরে ১২-১৩ টাকা এবং খুচর পর্যায়ে প্রতিকেজি ১৮ -২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২৫ টাকা। মাঝখানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। এ অবস্থায় কৃষককে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
কথা হয়, উপজেলার কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের তারপাল্লা গ্রামের কয়েকজন আলু চাষীর সাথে। এর মধ্যে জসিম নামের এক চাষী ১২০ শতাংশ, আব্দুল হাই ১৫০ শতাংশ, মুছা ১৩২ শতাংশ ও আব্দুল জলিল ১২০ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। তারা সবাই জানান, বীজ, সার, কীটনাশক, স্প্রে, শ্রমিক, সেচ, জমি প্রস্তুতকরণ ও ফসল উত্তোলন, পরিবহনসহ প্রতিকেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২৫ টাকা।
তারা বলেন, ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচের নিচে অর্থ্যাৎ অর্ধেক দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। কোল্ডস্টোরেজ খরচও বেশি। সরকারি হিসেবে প্রতিকেজি আলু কোল্ডস্টোরে খরচ ৬ টাকা ৭৫ পয়সার কথা বলা হলেও রাখা হচ্ছে ১০ টাকা করে। তারপরও অনেকে ভালো দামের আশায় কিছু আলু কোল্ডস্টোরে রেখেছেন। আবার অনেকে খরচ বৃদ্ধির কারণে সনাতন পদ্ধতিতে ‘আলু ঘর’ সংরক্ষণ করছেন।
এদিকে খরচ বেশি হলেও ভালো দামের আশায় কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করতে চাইলেও প্রয়োজনীয় কোল্ডস্টোর না থাকায়, তাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই, বাধ্য হয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ‘আলু ঘর’ এ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। জসিম উদ্দিন নামের একজন চাষী জানান, কোল্ডস্টোরেজ খরচ বেশি হওয়ায় তারা আলু ঘরের মাধ্যমে সংরক্ষণ করছেন। আর এভাবে ২-৩ মাস আলু সংরক্ষণ করা যায়। দাম কিছুটা বেশি হলেই, আলু ছেড়ে (বিক্রি) দিবেন।
এ বিষয়ে কথা হয় পাইকারি বিক্রেতাদের সাথে।তারা জানান, সরাসরি চাষির কাছ থেকে আলু ক্রয় না করে তারা বেপারীদের কাছ থেকে কেনেন। সেখান থেকে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে দুই-তিন টাকা লাভে বিক্রি করেন। তবে বাজার দর কমের কারণে, এবার কৃষকরা আলুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে তারা স্বীকার করেন।
স্টোরেজ খরচ বেশি রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে মান্নান কোল্ডস্টোরেজ ম্যানেজার দীলিপ কুমার সাহা জানান, তারা সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্যেই অর্থ্যাৎ প্রতি কেজি ৬ টাকা ৭৫ পয়সা দরে আলু সংরক্ষণ করেছেন। এ পর্যন্ত (১৬ মার্চ) তারা ১ লাখ ১ হাজার ৭’শ বস্তা অর্থ্যাৎ ৫ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিলরুবা খানম বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। যার ফলে বাজারে দাম কিছুটা কম। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, কোল্ডস্টোরে ধারণ ক্ষমতার সবটুকুই পূরণ হয়েছে। তাই কৃষকদের সনাতন পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছি।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২৩ মার্চ ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur