থানায় ১৫ অভিযোগ
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় অক্টোবর মাসে প্রেম-পরকীয়ার টানে প্রেমিকের হাত ধরে প্রায় ১শ’ নারী ঘর ছাড়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে থানায়ও রয়েছে ১৫টি অভিযোগ।
বিশেষ করে দেখা যায়, এসব নারী পরিবারের অগোচরে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটে আবেগাপ্লুত হয়ে প্রেমিক পরপরুষের সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এর ধরনের সংখ্যা বেশি দেখা যায় প্রবাসী স্ত্রী ও স্কুল-কলেজ পড়–য়া মেয়েরা তাদের পর-প্রেমিকের পরামর্শে বাড়ি থেকে পলায়নের ঘটনা।
জেলার প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত হাজীগঞ্জ বাজার। যেখানে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা-মসজিদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে বিনোদনের সু-ব্যবস্থা। সেখানে জেলার বিশেষ করে কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব, ফরিদগঞ্জ এমনকি চাঁদপুর সদর এলাকার লোকজন হাজীগঞ্জে এসে বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছে। তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার দোহাই দিয়ে প্রবাসী স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে বাধ্য করে একা এক দুইটি সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করছে। গ্রাম থেকে এসব সুন্দরী নারীরা যখন বাজারের শপিংমহল থেকে শুরু করে যাতায়াতের সময় কিছু দুষ্ট প্রেমিক টার্গেট রেখে এসব নারীদের সাথে এক কথা দু’কথা থেকে একপর্যায়ে মোবাইল নাম্বার বিনিময় করে ফেলে। তারপর থেকে তাদের অবিরাম কথার মায়ায় এসব প্রবাসী স্ত্রী ও স্কুল-কলেজপড়–য়া নারীরা অন্ধপ্রেমের মোহে পড়ে বাধ্য হয় প্রেমিকের হাত ধরে অজানায় পাড়ি জমাতে।
এমন দু’চার দিনের সম্পর্কের প্রেমিকের মায়ায় পড়ে স্বজনদের মায়া ছেড়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না এসব নারী। তাছাড়া স্কুল-কলেজপড়–য়া মেয়েরা আবেগের মোহে পড়ে প্রেমিকের হাত থরে দূরে কিছুদিনের জন্যে পাড়ি জমায়।
পরবর্তীতে সম্পর্কের মোহ কেটে গেলে এসব নারীর করুণ পরিণতি সৃষ্টি হয়। তাছাড়া হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জের সুন্দরী মেয়েরাও এসব প্রেম-পরকীয়ায় জড়িয়ে বাবার বা স্বামীর সংসার থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার চুরি করে প্রেমিকের হাত ধরে পাড়ি জমায়।
এসব ঘটনার তেমন কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। তাদের ক্ষণিকের সুখ পরবর্তীতে বয়ে আনে পরিবারের চরম বিপর্যয়।
বছরে কত নারী ঘর ছেড়ে পালিয়েছে তার হিসেব গত অক্টোবর মাসে হাজীগঞ্জ থানায় ১৫টি অভিযোগে ধারণা করা যায়। এসব অভিযোগ বেশিরভাগই হচ্ছে প্রবাসীর স্ত্রী টাকা-পয়সা স্বর্ণ অলংকার নিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ।
পাশাপাশি আবেগের মোহে পড়ে স্কুল-কলেজ পড়–য়া ১৫ থেকে ২৫ বছরের ছাত্রীরা তাদের প্রেমিকের সাথে নগদ অর্থ নিয়ে পাড়ি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
হাজীগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর-জিডি নং ৪৩৭, উপজেলার হুটনী গ্রামের আলুরা বেগম (৪০) পরকীয়ায় টানে প্রেমিকের সাথে উদাও হয়। ৮ অক্টোবর-জিডি নং-৪২১, সোনাইমুড়ি গ্রামের নার্গিস বেগম (২২) পরকীয়ায় টানে প্রেমিকের সাথে উদাও হয়। ৯ অক্টোবর-জিডি নং-৪৪৭, পৌর এলাকার মকিমাবাদের নাছরিন বেগম (৪০) পরকীয়ার টানে উদাও হয়। ৯ অক্টোবর একই দিনে জিডি নং-৪৬৬, উপজেলার পাতানিশ গ্রামের স্কুলপড়–য়া ছাত্রী আমেনা আক্তার (১৫), প্রেমিকের হাত ধরে উদাও। ১৩ অক্টোবর-জিডি নং-৬৯০, উপজেলার কাইজাংগ্রা গ্রামের স্কুল ছাত্রী সুমী আক্তার (১৫) প্রেমিকের হাত ধরে উদাও। ১৮ অক্টোবর-জিডি নং-৯৬৩, উপজেলার ব্রাহ্মণছোঁয়া গ্রামের শাহীনুর বেগম (২৪) পরকীয়ার টানে উদাও। ২২ অক্টোবর-জিডি নং-১১৪৬, স্বর্ণা গ্রামের জোসনা বেগম (২৮) পরকীয়ার টানে উদাও। ২৩ অক্টোবর-জিডি নং ১২১৪, খাটরা-বিলওয়াই এলাকার খাদিজা বেগম (২১) পরকীয়ার টানে উদাও। ২৬ অক্টোবর-জিডি নং-১৩১৩, উপজেলার ধড্ডা গ্রামের তাহমিনা বেগম (২০) পরকীয়ার টানে উদাও। ২৮ অক্টোবর-জিডি নং-১৪২১, উপজেলার হাড়ীয়াই গ্রামের হাওয়া বেগম (২৬) পরকীয়ার টানে উদাও। ২৮ অক্টোবর-জিডি নং-১৪৩১, রান্ধনীমুড়া গ্রামের জেসমিন বেগম (২৬) পরকীয়ার টানে উদাও। ২৯ অক্টোবর-অপহরণ মামলা টোরাগড় এলাকার স্কুল ছাত্রী সানজিদা আক্তার (১৪) প্রেমিকের সাথে পলায়ন এবং ৩০ অক্টোবর-জিডি নং-১৫৪১, বলিয়া গ্রামের রুমা আক্তার (১৮) প্রেমিকের হাত ধরে উদাও।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহআলম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আইনের মাধ্যমে এর প্রভাব নির্মূল করা সম্ভব নয়, এর জন্যে পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুভূতি জাগানোর প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেইসবুকসহ নানা ওয়েবসাইট থেকে এসব নারীকে দূরে রাখতে পারলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা কমে আসতে পারে।
জহিরুল ইসলাম জয়
|| আপডেট: ০৬:৫৬ পিএম,০১ নভেম্বর ২০১৫, রোববার
এমআরআর