Home / উপজেলা সংবাদ / হাজীগঞ্জ / হাজীগঞ্জের ধেররা বাজারটি অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে উৎপাদিত মাছ বিপণন কেন্দ্র
fish 21
ফাইল ছবি

হাজীগঞ্জের ধেররা বাজারটি অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে উৎপাদিত মাছ বিপণন কেন্দ্র

হাজীগঞ্জের ধেররা বাজারটি চাঁদপুর জেলার এখন বর্তমানে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে,পুকুর ,দীঘি, ডেবা ,নালায় উৎপাদিত বা চাষকৃত দেশীয় মাছের অন্যতম বিপণন কেন্দ্র পরিচিতি লাভ করেছে। বিপুল সম্ভাবনাময় মৎস্য ব্যবসার উম্মুক্ত দ্বার হলো এখানে।

চাঁদপুর জেলার মধ্যস্থিত বাণিজ্যিক কেন্দ্র নামে খ্যাত হাজীগঞ্জের ধেররা বাজারের এ মাছের আড়ৎগুলো বা বিপনণ গুলো প্রতিরাতে বিদ্যুতের ঝলকানি আর পাইকারদের পদ-চারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। দিনের ধেররা মাছ বাজার আর রাতের বাজারের চিত্রই আলাদা।

হাজীগঞ্জ বাজারের প্রায় ১ কি.মি.পশ্চিমে কুমিল্লা রোডের দু’পাশে গড়ে উঠেছে এ ধেররা মাছ বাজারটি। বাজারটি পৌরসভার ভেতরে হলেও ব্যাক্তিমালিকানাধীন স্ব স্ব উদ্যোগে গড়ে উঠা একটি মৎস্য আড়ৎ কেন্দ্র। এটি এখন চাঁদপুর জেলার সবচাইতে বড় দেশি চাষকৃত মাছ পাইকারি বেচা-কেনার হাট হিসেবে দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

মাছ পরিবহনে চমৎকার যাতায়ত ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় দিন দিন বাজারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতি রাতের বৈদ্যুতিক বাতির ঝলকানিতে আর ক্রেতা-বিক্রেতা-দিন মজুরদের পদ-চারণায় মুখরিত হয়ে ঊঠে প্রতিনিয়তই ধেররা বাজার এলাকা।

যতদূর জানা গেছে – প্রায় ২০-২৫ বছর আগে সর্বপ্রথম একতা আড়তের মালিক রাধা দাস নামক একজন ব্যবসায়ী বা ব্যাক্তি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করে। বর্তমানে এর সুখ্যাতি ও নাম-ডাক সারা দেশে প্রসার লাভ করছে। এখানে পুকুর বা জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে যারা মাছ চাষ করে বিক্রির জন্যে আর শহর-বন্দর-গ্রামের প্রতিটি বাজারে যারা খুচরা বসে বসে মাছ বিক্রি করে-তাদেরই একটি অন্যতম মাছ বাজার এটি।

মূলত: বাজারটিতে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা যথা- রামগঞ্জ,ফেনী,নোয়াখালী,কুমিল্লা ও এর বিভিন্ন উপজেলা,ফরিদগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, হাইমচর, মতলব, কচুয়া, দাউদকান্দি, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ,শরীয়তপুর, ফরিদপুর, ভোলা, বরিশালের হিজলা, চরফেশংসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষকৃত মাছ সারারাত পি-কাপ,ভ্যান .ট্রাক, অটো, রিকসা এমনকি নাইট বাসে করে মাছ চলে আসে এ ধেররা বাজারে। রাত ৮টা-৯টার পর থেকে মাছভর্তি পরিবহনগুলো আসতে থাকে অনবরত।

এদিকে চাঁদপুর- হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দেশিয় মাছের অভ্যয়রণ্য নামে খ্যাত ডাকাতিয়া, মতলবের মেঘনা ধনাগোদা ও হাজীগঞ্জ-কচুয়ার বোয়ারজুরি খালে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ও আহরিত সব মাছও এখানে আসে।

ভোর ৪ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত ঐ সব মাছ আড়ৎদারগণ পাইকারদের কাছে নিলাম ডাকে বিক্রি করে থাকে। এরা আবার কাক-ডাকা ভোর হতে না হতেই স্ব-স্ব এলাকার স্থানীয় বাজারগুলোতে বসে বসে ডালায় করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। চমৎকার ও সুন্দর পরিবেশে প্রতি রাতেই এমন বেচা-কিনি হয়ে থাকে। এ সব মাছ বিভিন্ন এলাকার পুকুর, ডোবা, নালা, বিল, হাওর এবং নদ-নদী থেকে আহরিত নদীর মাছ এ আড়ৎগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে। লেন-দেন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

মোট কথা-দেশিয় সিআইপির বরোপিট, জলাশয় ও পুকুরে চাষকৃত সব মাছই পাইকারি বিক্রির একটি নির্ভরযোগ্য বাজার এটি। অনেক পাইকার রাত ৭টা-৮টার মধ্যেই চলে আসে। ছোট, বড়,মাঝারী পাংগাশ,রুই,কাতল, মৃগেল,পাবদা, শিং, মাগুর,কালীাবাউস, সরপুটি, ব্রিগেড,চিংড়ী, তেলাপিয়া, বিভিন্ন ছোট ছোট মাছ,বোয়াল, নলা, চিতল, পোয়া, আইড়, টেংরা,নদীর ইলিশ প্রভৃতি মাছের চালান বিভিন্ন পি-কাপ বা ট্রাকযোগে মাছ চাষীরা নিয়ে চলে আসে। এমনকি চট্টগ্রামের সমুদ্রের বিভিন্ন প্রকার মাছও বাসের বক্সে করে চলে আসে।

ধেররা বাজারের এ আড়ৎগুলোতে প্রতি রাতে কোটি কোটি টাকার মাছ কেনা-বেচা হয়ে থাকে। ২৫-৩০টি আড়ৎ গড়ে উঠেছে বর্তমানে। প্রায় দু-থেকে তিনশ মত ডে-লেবার রয়েছে যারা প্রতি যান বাহন থেকে লোড-আনলোড করার কাজ করে থাকে। মালিক, সরকার ও অন্যান্য লেবার মিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের রোটি-রুজির একটি চমৎকার প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এ বাজারটির মাধ্যমে।

পল্লবী মাছ আড়তের সরকার সুমন ২৫ আগস্ট বলেন, ‘ শত শত লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এখানে। আড়ৎ মালিক মাত্র ৪% কমিশন লাভ করে কেবলমাত্র বিক্রেতার কাছ থেকে। একশ্রেণির ছোট ছোট পাইকারগণ এখান থেকে মাছ কিনে তারা আবার তাদের বাজারে বিক্রি করে।

বেলা উঠার সাথে সাথে আড়ৎদারগণ চাষীদের টাকা পরিশোধ করে দেন। কোনো কোনো পাইকার দিনের বেলায় বেচা কেনা করে বেলা শেষে আড়ৎদারের টাকা পরিশোধ করেন। এ ক্ষেত্রে আড়ৎদারদের বড় রকমের পূজিঁ খাটাতে হয়।’

সততা আড়তের ম্যানেজার অরুণ দাস বলেন,‘ এটি জেলার সব চাইতে বড় মাছ বাজার। গ্রামের চাষীদের চাষকৃত মাছ আমাদের আড়ৎদারদের মাধ্যমে বিক্রি হয়। ছোট ছোট পাইকারগণ কিনে নিয়ে তারা হাট-বাজারে বসে বিক্রি করে জীবিকা চালান। ’

তিনি আরো বলেন,‘বাজারটির দিন দিন আড়ৎ সংখ্যা বাড়ছে। পাইকারের সংখ্যাও বাড়ছে। কুমিল্লা রোডের পাশে বাজারটি হওয়ায় ও সব রকমের যান-বাহন দিয়ে এখান থেকে তাৎক্ষণিক যাতায়ত করা যায়্। বেলা উঠার সাথে সাথে বিক্রেতাগণ নিজ নিজ বাড়িতে চলে যেতে কোনোই সমস্যা হয়না।’

আবদুল গনি
৩০ আগষ্ট ২০২৩

এজি