বিশেষ সংবাদ

হাজার হাজার মানুষ কথিত ভন্ডপীরের অপচিকিৎসায় প্রতারিত হচ্ছে 

কথিত এক ভন্ড পীরের অপচিকিৎসায় প্রতারিত হচ্ছে বকশীগঞ্জ এলাকার সহজ সরল হাজার হাজার মানুষ। সকল রোগের মহৌষধ কথিত ভন্ডপীর পিপুল মিয়ার ঝাটা পেটা। ঝাটা পেটা খেয়েই সকল রোগ সেরে যাচ্ছে এমন প্রচার করছে বকশীগঞ্জ উপজেলার উজানকলকীহারা গ্রামের কথিত ভন্ডপীর পিপুল মিয়া ও তার দালালরা।

এই দালাল চক্রের অপপ্রচারের কারণেই প্রতিদিন হাজার হাজার নিরীহ মানুষ চিকিৎসার নামে প্রতারনার শিকার হয়ে আসছে।প্রশাসনের নাকের ডগায় এ সকল কর্মকান্ড চললেও অজ্ঞাত কারণে নীরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, কথিত ভন্ডপীর পিপুল মিয়ার বাড়ি প্রতিবেশি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মদনেরচর গ্রামে। ২ সন্তানের জনক পিপুল মিয়া ভ্যানগাড়ি দিয়ে ফেরি করে মুদির দোকান করতো। অভাবী সংসারে কোটিপতি হওয়ার আশায় পিপুল মিয়া তার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলে পীরের আস্তানা। শুরু করে নানা জটিল রোগের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। বাড়তে থাকে মানুষের ভীড়। তার এসব ভন্ডামীর কারনে মদনেরচর গ্রামের লোকজন গণধোলাই দিয়ে এলাকা থেকে ভন্ডপীর পিপুল মিয়াকে বিতাড়িত করে দেয়।

গণধোলাইয়ের পর নিজ গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলার উজান কলকীহারা গ্রামে শশুড়বাড়িতে আশ্রয় নেয় পিপুল মিয়া । এর পর প্রায় ১ মাস যাবত উজান কলকীহারা গ্রামে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠা করে ভন্ডপীরের আস্তানা। এই আস্তানার স্বঘোষিত পীর পিপুল মিয়া। এর পর থেকেই তার দালালরা চিকিৎসার বিষয়ে নানা অপপ্রচার করতে থাকে।

ভন্ডপীর পিপুল মিয়ার চিকিৎসার মহৌষুধ হল রোগীর কপালে ঝাটাপেটা ও তেলপড়া। দালাল চক্রের এসব নানা গুজবে উজানকলকীহারা গ্রামে প্রতিদিন শিশু ও নারী পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেনীর হাজার হাজার রোগীর ভীড় জমতে থাকে।

ঝাটাঁ পেটা ও তেলপড়ার জন্য প্রতিদিন ভোর বেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে কলকীহারা গ্রামে। চলতে থাকে টাকার খেলা। বিগত এক মাসে ইসলামপুরের সোলাইমান, শ্রীবরদীর হালিমা, কাকিলাকুড়ার আফসার আলী, ঝিনাইগাতীর ফুলু মিয়া, নালিতাবাড়ির ফাতেমা বেগমসহ পিপুল মিয়ার আস্তানায় প্রায় লক্ষাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে প্রতারনার শিকার হয়েছে।

এসব রোগীদের কাছে ভন্ডপীরের দালাল চক্র প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ যাবৎ পর্যন্ত কোন রোগীই আরোগ্য লাভের প্রমান পাওয়া যায়নি। তবে পিপুল মিয়া ও তার দালালদের দাবি এই আস্তানায় যারাই চিকিৎসা নিয়েছে তারাই ভালো হয়েছে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় লাভ জনক ব্যবসায় পরিনত হয় পিপুল মিয়ার আস্তানা।

তাই এই আস্তানা পরিচালনার জন্য কথিত একটি পারিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেরুরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল হামিদকে সভাপতি ও মেরুরচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খবির উদ্দিন খোকা মাস্টারকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিতে উপদেষ্টা রাখা হয়েছে মেরুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মওলাকে। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জানার পরেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।

এ ব্যাপারে আস্তানা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেরুরচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আইড়মারী সরকারি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক খবির উদ্দিন খোকা জানান, প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার লোক পিপুলের চিকিৎসা নিয়ে রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে । এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

আস্তানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেরুরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ জানান, চিকিৎসা নিয়ে মানুষ ভালই হচ্ছে। খারাপ কিছু দেখি নাই। অনেকের এটা সহ্য হচ্ছেনা।

নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৮:৫৮ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

এমআরআর

 

Share