হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফটকেই অবৈধভাবে চলছে গ্রীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাকের ডগায় মূল ফটকের সামনেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে গ্রীন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে সেটি বন্ধ ঘোষণার পরেও আজও অবৈধভাবে চলে আসছে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। এতে যেনো কারোরই কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাই যা হবার তাই হচ্ছে। ওই ডায়াগনস্টিকে নির্দিষ্ট চিকিৎসকের সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও মাঝে মাঝে ডিউটি করছেন অন্য চিকিৎসক।

এক্সরে বিভাগে টেকনিশিয়ান ছাড়াই অনাবিজ্ঞ লোক দিয়ে রোগীদের এক্সরে করানো হচ্ছে। এছাড়াও একই ভাবে আরো বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক চলে আসছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মুল প্রবেশ পথের সামনেই একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিহিন গ্রীন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার পর থেকেই নানা অনিয়মের মধ্যদিয়ে আজো অবৈধ ভাবে চলছে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। যেখানে নেই কোন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র, নেই কোনো সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অনুমোদিত কাগজ, নির্দিষ্ট চিকিৎসক, ভালো, ধক্ষ ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান। একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের যে-সকল প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের প্রয়োজন। তার কোনো কিছুই নেই গ্রীন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তপক্ষের। তবে এই বিষয়ে চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় কিছুই জানেন নি বলে জানা গেছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, এমন অবৈধ ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে প্রায় এক দেড় মাস পূর্বে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদেরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সাথে গ্রীন ডায়াগনস্টিক টি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া তাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ বৈধতা নিয়ে সেটি চালানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু গ্রীন ডায়াগনস্টিকের পরিচালক জহিরুল ইসলাম অনিকসহ অন্যান্য সবাই মিলে প্রশাসনের সেই নিষেধকে অমান্য করে নানা অনিয়মের মধ্যদিয়ে ডায়াগনস্টিকের সকল কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।

জানা গেছে, যেখানে খসরু জাহান চৈতী নামের একজন পুরাতন চিকিৎসকের সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। সেখানে ওই চিকিৎসক এখন আর সেখানে না আসলেও পুরনো সাইনবোটেই নতুন চিকিৎসক দিয়ে তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া এক্সরে করার জন্য যেখানে উপযুক্ত কক্ষ এবং ধক্ষ্য টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন। সেখানে তেমন কোনো উপযুক্ত কক্ষ ব্যবহার ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান না নিয়েই অনাবিজ্ঞ লোক দিয়ে এক্সরে বিভাগ পরিচালনা করছেন। এমনকি এই দুজন নতুন লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেখানে চাঁদপুর সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবগত করার কথা। সেখানে তেমন কোনো নিয়মই মানছেন না তারা।

এ বিষয়ে গ্রীন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম অনিকের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, এক দেড় মাস পূর্বে আমাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌখিকভাবে আমাদেরকে এটি চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। তবে লিখিত কোনো কিছুই নেই। এছাড়া আমাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে সেগুলো প্রক্রিয়া দিন রয়েছে।

এ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কে এম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাদের ডায়গনস্টিকের বিরুদ্ধে মাস খানেক পূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলো। তখন তাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত এটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও তারা যেহেতু ডায়াগনস্টিক টি পরিচালনা করে আসছেন এজন্য আমি গত মিটিংয়ে এ বিষয়ে উপস্থাপন করেছিলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ বিষয়ে অচিরেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন।

তিনি আরো বলেন, শুধু গ্রীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার নয় এরকম আরও বেশ কয়েকটি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রয়েছে। আমরা সহসাই তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিবো।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ৩ জুন ২০২৪

Share