হাইমচর

হাইমচর স্কুল-মাদ্রাসায় টাকার বিনিময়ে বই বিতরণ!

সরকারের বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণের নির্দেশনা অমান্য করে হাইমচর উপজেলার আল-আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় সরকারিভাবে বিনামূল্যের বই টাকার বিনিময়ে বিতরণ করা হয়েছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এখনো বই পায়নি। সরকারের মহৎ কর্মসূচিতে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

হাইমচরের আল আমিন মহিলা মাদ্রাসা, হাইমচর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও হাইমচর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলার অধিকাংশ স্কুল ও মাদ্রাসায় বই নিতে গিয়ে অগ্রিম সেশন ফি, ভর্তি ফি ও মিলাদ ইত্যাদি বাবদ প্রায় ৫শত থেকে ১ হাজার টাকা পরিশোধ করে রিলিজ স্লিপ জমা দিলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়।

এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।

সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ না করে হাইমচর উপজেলা সদর আলগীবাজার সংলগ্ন আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, হাইমচর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও হাইমচর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলার অধিকাংশ স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করে বই বিতরণ কর্মকান্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকগণ।

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আল-আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় বিনামূল্যের বই নিতে গিয়ে প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অগ্রিম টাকা দিতে হয়েছে। নবম শ্রেণিতে ৫শ’ টাকা, ৬ষ্ঠ হতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী প্রতি ৪শ’ টাকা এবং ইবতেদায়ী শাখায় শিক্ষার্থী প্রতি ২শ’ টাকা হারে চাঁদা নেয়া হয়েছে।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী অভিভাবকরা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, সরকার আমাদেরকে বিনামূল্যে বই দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে, আর মাদ্রাসার হুজুররা আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে বই দিয়েছে এবং এ সকল টাকার কোনো রসিদও দেয়নি। যারা অগ্রিম টাকা দিতে পারেনি এখন পর্যন্ত তাদেরকে বই দেয়া হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করায় আমাদের সন্তানদের মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। বইয়ের নামে আমাদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়ার জন্য দাবি করছি।

অভিযুক্ত আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা সুপার মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, টাকা গ্রহণের মাধ্যমে বই বিতরণের বিষয়ে বলেন মাদ্রাসার উন্নয়ন ফি, সেশন ফি, খেলাধুলার চাঁদা, মিলাদ মাহফিল ফি বাবদ ৯ম শ্রেণি থেকে ৪ শ’ টাকা, ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত ৩শ’ ৫০ টাকা, ইবতেদায়ী ১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণি ১শ’ টাকা, ৫ম শ্রেণিতে ২শ’ টাকা শিক্ষার্থী প্রতি ফ্রি বই বিতরণকালে নেয়া হয়েছে। তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে রসিদ দেয়া হয়েছে।

কেভিএন উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আমিন বলেন, সেশন ফি বাবদ ৫শ’ টাকা পরিশোধের রিসিট জমা দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে।

নীলকমল ওচমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, বই বিতরণ বাবদ কোনো টাকা নেয়া হয়নি।

বাজাপ্তি রমণী মোহন উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক এমএ মান্নান বলেন, বই বিতরণের সময় কোনো টাকা নেয়া হয়নি।

উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বই বিতরণে টাকা গ্রহণের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ উপজেলার শিক্ষকদের অনৈতিকতার ফলে বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের মহৎ এ উদ্যোগটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে।

অভিযোগ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আল-আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ক’জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিযোগ করেছেন টাকা গ্রহণ করে বই বিতরণ করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে বই বিতরণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হাইমচর করেসপন্ডেন্ট || আপডেট: ০৬:২৪ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০১৬, শনিবার

এমআরআর  

Share