শীর্ষ সংবাদ

হাইমচরে ৮ বছর ধরে স্কুলকক্ষে ফাঁড়ি : নৌ-পুলিশের দুর্ভোগ

আর কত দুর্ভোগ পোহালে নির্মিত করা হবে চাঁদপুর হাইমচর উপজেলার নীলকমল নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ভবন। নৌ পথের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বছরের পর বছর মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে নৌ পুলিশ সদস্যরা।

অথচ যারা মানুষকে দিনের পর দিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের থাকার নিদিষ্ট কোন জায়গা নেই। নেই কোনো অফিস কক্ষ।

স্থানীয়রা জানান ‘চাঁদপুর হাইমচর উপজেলার নীলকমল এলাকায় প্রায় ৭/৮ বছর পূর্বে খুব মনোরম পরিবেশে নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভবন ছিলো। প্রতিদিন মানুষের আইনের সেবা দিতে সেখাকার কার্যক্রম চলতো অনেক ঝাঁকজমকপূর্ণ সুন্দর পরিবেশে।

আজ থেকে প্রায় ৮ বছর পুর্বে ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিলে বিভিন্ন বাড়ি ঘরসহ নীলকমল নৌ পুলিশ ফাঁড়িটিও নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যায়।

সে থেকে আজও সেখানে কোন নিদিষ্ট ফাঁড়ি ভবন তৈরি করা হয়নি।

নীলকমল নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কোন ভবন না থাকায় নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে আইন শৃঙ্খরা কার্যক্রম পরিচালনা করছে নৌ পুলিশ সদস্যরা।

বিগত ৭/৮ বছর ধরে ওই এলাকার মহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখাযায় ওই স্কুলের দুটি ভবনের মধ্যে একটি পাকা ভবন নীলকমল নৌ পুলিশ ফাঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কুলটি ব্যবহার করার কারণে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে সমস্যা হচ্ছে অন্যদিকে পুলিশ সদস্যরা নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

তাও মাত্র স্কুলের দুটি রুমে ফাঁড়ির সদস্যরা থাকছেন। আর এ দুটি ব্রাক রুমের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে রাত্রিযাপন করছেন ১৮ জন পুলিশ সদস্য।

এ ১৮ জন পুলিশ সদস্যদের জন্য দুটি রুমে ১৭ টি বিছানা রয়েছে। যেখানে ১০ জন থাকার উপযোগী সেখানে ১৮ জন সদস্য জড়োসড়ো হয়ে থাকছেন।

ফাঁড়ির ইনচার্জের নিদিষ্ট রুম বা কোন অফিস কক্ষ নেই। অন্যান্য ফোর্স সদস্যদের সাথে তিনিও ব্রাকের বিছানায় ঘুমিয়ে রাত কাটান।

আর ব্রাকের মধ্যেই চলে নিয়মিত অফিস কার্যক্রম। এছাড়াও রয়েছে আরো নানা সমস্যা।

স্কুলের ওই ভবনটিতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় সৌর বিদ্যুত দিয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হয়। সৌর বিদ্যুত ব্যবহারে কখনো বৃষ্টি বা আবহাওয়া খারাপ হলে সেদিন বিদ্যুতবিহীন রাত কাটাতে হয় পুলিশ সদস্যদের।

এখানেই শেষ নয় এর বাইরে ও বিশুদ্ধ কোন খাবারের পানির ব্যবস্থা নেই। নেই গোসল করার জন্যও কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ খাবার পানি আনতে হলে এক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে তারপর খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়।

ভালো কোনো পুকুর কিংবা স্যানিটেশন ব্যাবস্থা না থাকায় নদীতে গোসল করতে পুলিশ সদস্যদের এক, দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এভাবেই নানা সমস্যার মধ্যদিয়ে চলছে ফাঁড়িবিহীন হাইচর উপজেলার নীলকমল নৌ পুলিশের কার্যক্রম।

স্থানীয় ক’জনের অভিমত প্রকাশ করে বলেন সরকারি চাকরীজীবীদের মধ্যে নীলকমল পুলিশ পাঁড়ির সদস্যদের মতো মনে হয় আর কোন চাকরীজীবীরা এমন চরম দুর্ভোগ পোহায় না।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা নৌ পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হাওলাদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়াটার ও নৌ পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন ওই এলাকায় জমি দেখার জন্য। কিন্তু জমি পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে হাইচরে এসিল্যান্ড এবং ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) না থাকায় কারনে নির্ধারিত কোনো জমি পাওয়া যাচ্ছে না। নিদিষ্ট কোনো জমি না পাওয়ায় আজো নীলকমল নৌ পুলিশ ফাঁড়িটি নির্মাণ করা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভালো হতো।’

চাঁদপুর হাইমচর উপজেলার নীলকমল নৌ পুলিশ সদস্যরা এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে খুব সহসাই একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ভবণ নির্মাণ করা হোক এমন দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যরা ও স্থানীয় লোকজন।

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:০০ এএম, ৬ নভেম্বর ২০১৬, রোবার
ডিএইচ

About The Author

হাইমচর থেকে ফিরে- কবির হোসেন মিজি
Share