পানের বিপুল উৎপাদন থাকলেও বিক্রি নেই। কারণ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকলেও জনসমাগম নিষিদ্ধ। এতে পানচাষিদের পান বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে পান ওঠালেই পুলিশ ধাওয়া দেয়। পান বিক্রি না করেই ফিরে আসতে হয় চাষিদের। এতে পান বিক্রি বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে পানচাষিরা।
এ চিত্র চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়। পান চাষ ও বিক্রির টাকা দিয়েই এ দু’উপজেলার অন্তত ১২ হাজার পরিবারের বছর পার হয়। করোনাভাইরাসের এ দীর্ঘ সময়ে পান বিক্রি বন্ধ থাকায় দিশাহারা পড়েছেন তারা। এদিকে গাছ থেকে পান সংগ্রহের পর বিক্রি করতে না পারায় খালে কিংবা ডোবায় ফেলে দিতে হচ্ছে। সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়ায় গাছেই পচন ধরেছে পানপাতায়। সব মিলিয়ে ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিদের মাথায় হাত।
সপ্তাহে অন্তত একদিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রশাসনের কাছে পান বিক্রির অনুমতি চাইছেন চাষিরা। পানচাষিদের মতো একই অভিমত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের। উপজেলার হায়দরগঞ্জ ও ক্যাম্পের হাটে পান বিক্রি করতে যান চাষিরা। এ সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পাশের খাল ও ডোবায় পান ফেলে দিতে হয় তাদের। আবার অনেকেই পান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
পুলিশের মারমুখী আচরণে অসহায় চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, প্রান্তিক ওই পানচাষিদের অনেকের ছেলেমেয়ে জেলা ও জেলার বাইরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। তাদের পড়ালেখার খরচ পান বিক্রির টাকা থেকেই মেটাতে হয়। অনেকে পান চাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন।
পান বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পান চাষের সঙ্গে হাজার হাজার মালিক ও শ্রমিকদের পরিবার জড়িত রয়েছে। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়। এর মধ্যে উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে পান চাষ হয়।
এসব পান স্থানীয় হায়দরগঞ্জ বাজার, ক্যাম্পের হাট ও রায়পুরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পান উৎপাদন হয় এ উপজেলায়। পান বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তাকভির হাসান নামে একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। তার ওই লেখায় অসহায়ত্বের কথা ফুটে উঠেছে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পান বিক্রির মৌসুম। এই পান চাষের সঙ্গে প্রায় ১২ হাজার মালিক-শ্রমিক জড়িত। এই জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের তদারকিতে ঝুঁকিমুক্ত কোনো খোলা মাঠে পানের বাজার বসানোর জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি। পানচাষি হরিপদ মহাজন, হরলাল মজুমদার, নিরঞ্জন মাতাব্বর ও মরণ অধিকারী জানান, তারা পান চাষ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করেন না। পান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই তাদের সংসার চলে। করোনায় তাদের পান বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। হাটে পান ওঠালেই পুলিশ তেড়ে আসে। পান বিক্রি করতে না দিলে তাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, হাইমচর।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur