হাইমচরে আর্থিক ক্ষতির মুখে হাজারও পানচাষি

চাঁদপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় হলুদ হয়ে যাচ্ছে পান পাতা। পানের বরজে লতা থেকে ঝড়ে পড়ছে পান। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে হাজারও পানচাষি। এই সংকট মোকাবেলায় সরকারিভাবে সহায়তার পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের সাধ্যমত বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে জনবল সংকট ও পান চাষিদের জন্য সরকারিভাবে পর্যাপ্ত কার্যক্রম না থাকায় কাজ কিছুটা ব্যহত হচ্ছে।

সুদীর্ঘকাল থেকে হাইমচর উপজেলা পান চাষের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় অনেক কৃষক জীবিকা নির্বাহ করেন পান চাষাবাদ করে। চলতি মাঘ মাসে পড়া তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কৃষকের কষ্টে উৎপাদিত পান।

হাইমচর উপজেলার মহজমপুর, আলগী উত্তরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানের বরজে লতায় থাকা পান পাতা হলুদ হয়ে যাওয়াসহ ঝড়ে পড়ছে মাটিতে। পান চাষাবাদে খরচ বৃদ্ধির বিপরীতে পান ঝড়ে পড়া সমস্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে হাজারো পানচাষি। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে এখন মাথায় হাত কৃষকদের।

মহজমপুর এলাকার পান চাষি ফজল আলী বলেন, শীতকালে পানের লতা বড় হয় না। তাছাড়া চলতি মাঘ মাসে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি ও ঘন কুয়াশার কারণে পান পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে এবং পাতা ঝড়ে পাটিতে পড়ে যাচ্ছে। হলদেটে ও ঝড়ে পড়া এসব পান বাজারে তেমন দাম পাওয়া যায় না বললেই চলে। ১০০ টাকার পান বিক্রি করতে হয় ২০-৩০টাকায়। এতে করে পান চাষাবাদে লাভ তো দূরে থাক, চালানই উঠে আসে না।

পানচাষি আবু তাহের বলেন, এই শীতে পান চাষাবাদ করে আমরা ক্ষতির সম্মুখিন হলেও কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের কোনো প্রকার বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে না। তাছাড়া সরকারও আর্থিকভাবে আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। এভাবে চললে পান চাষাবাদ ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আমরা চাই সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াক।

এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, শীত ও কুয়াশায় কিছু পান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পান চাষীদের ক্ষতি কমাতে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। তবে লোকবল সংকটে অনেক সময় সব কৃষকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

তিনি আরও জানান, হাইমচর উপজেলা পানচাষের জন্য অনেক আগে থেকেই বিখ্যাত। এখানকার উৎপাদিত পানের বেশ চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আলাদাভাবে পানচাষীদের জন্য কোনো প্রকার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। চাষীদের পানচাষে উদ্বুদ্ধ করতে যা অত্যন্ত প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রকল্প গ্রহণের জন্য সরকারকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। আশা করি, এ ব্যাপারে সরকার সহসায় দৃষ্টিপাত করবে। যাতে করে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা হলেও লাগব করা যায়।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় মোট প্রায় ২৩৭ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়। এরমধ্যে হাইমচর উপজেলার ২২০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কৃষক পান চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত। বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পান কেনা-বেচা হয়ে থাকে এখানে।

হাইমচরে মহানলী, চালতা বোটা ও নলডোগ এই তিন জাতের পান চাষ হয়ে থাকে। উপজেলার মহজমপুর, আলগী উত্তর, আলগী দক্ষিণ ও চরভৈরবীসহ বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি পান চাষ করা হয়।

হাইমচরে উৎপাদিত পান চাঁদপুর ছাড়াও পাশ্ববর্তী ফেনী, নোয়াখালী, শরীয়তপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

Share