চাঁদপুর হাইমচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আ.লীগের মনোনিত চেয়ারম্যান মো. নূর হোসেন পাটওয়ারী ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মোতালেব জমাদার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষে আ.লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেতালেব জমাদার ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতরা হলেন, মনির (২৫), সোহেল (৩৫), রাসেল (২২), সোহাগ (১৯)সহ আরো অনেকে।
আহত মোতালেব জমাদারকে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় পুলিশ পাহারায় তাকে উন্নত চিকিকৎসার চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে প্রেরন করা হয়।
উপজেলার তেলির মোড় এলাকায় ২৩ ডিসেম্বর সোমবার দুপুর ১টায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর বেলা ২টায় নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী নূর হোসেন পাটওয়ারীর সমর্থকরা মিছিল সহকারে উপজেলা সদরে অবস্থান নেয়। অপর দিকে মেতালেব জমাদারের সমর্থকরা অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে উপজেলা সদরে আবারো উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের আজ দুপুরে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে নামেন। বেলা একটায় হাইমচরের তেলির মোড়ে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূর হোসেনের সমর্থকেরা মিছিল বের করে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের মোতালেব জমাদার সমর্থকদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এ সময় নূর হোসেন ও তাঁর সমর্থক নীল কমল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরদারসহ সাত থেকে আটজন আহত হন। এ ঘটনার পর বেলা আড়াইটায় হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিদ্রোহী প্রার্থী মোতালেব জমাদার গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলে নূর হোসেনের সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।
এতে লাঠি ও ইটপাটকেলের আঘাতে মোতালেব জমাদারের মাথা ফেটে যায়। এ সময় উভয় পক্ষে প্রায় আধঘণ্টা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই পর্যায়ে উভয় পক্ষের আরও ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এই ঘটনায় হাইমচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়াও আহত হন।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাইমচর উপজেলা বাজারের দোকানপাট দুই ঘণ্টার মতো বন্ধ থাকে। এ সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ লোকজনও রাস্তায় বের হওয়া বন্ধ করে দেয়।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, হাইমচরের পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হলেও থমথমে পরিস্থিতি কাটেনি। এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা কোনো মামলা হয়নি।
হাইমচরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ নয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। এই মামলায় ইটপাটকেলের আঘাতে তিনি আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজা উদ দৌলা বলেন, মোতালেব জমাদ্দারের বুকের একটি হাড় ভেঙে গেছে। তাঁর মাথাও আঘাত রয়েছে। অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, এই সংঘর্ষের ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূর হোসেনের হাতে আঘাত লেগেছে। এতে তাঁর হাত থেকে রক্ত ঝরে। তবে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর নিজ পক্ষের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পেরেছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী মোতালেব জমাদ্দারের নাতি আকিব জমাদ্দার বলেন, তাঁর নানা উপজেলা হাসপাতালের সামনে এলে ওই হামলার শিকার হন।
এ বিষয়ে মোতালেব জমাদারের জামাতা নাছির গাজী জানান, আমাদের লোকজন গনসংযোগ কালে নৌকার সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরদারের লোকজন আমাদের উপর অন্যায় ভাবে হামলা চালায়।
ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরদার জানান, মোতালেব জামাদার মনোনয়ন না পেয়ে তার ভাগিনা ও বিএনপির সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সংবাদ পেয়ে বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা মোতালেব জামাদার ও তার সমর্থকদের ধাওয়া দেয়।
হাইমচর থানা অফিসার ইনচার্জ একেএম জহিরুল ইসলাম খান জানান, নৌকার সমর্থক ও মোতালেব জমাদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছে। বর্তমানে উপজেলা সদরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে নূর হোসেনকে ফোন দেওয়া হয়। তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ জানুয়ারি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হাইমচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। অন্য প্রার্থী হলেন, বিএনপির ধানের শিষ প্রতীকের ইসহাক খোকন।
বার্তা কক্ষ, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯