চাঁদপুরের হাইমচরে মাকসুদা আক্তার লিজা (১৯) নামের ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূর গলায় ফাঁস দেয়া ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে হাইমচর থানা পুলিশ।
২০ মে শনিবার রাত ৩ টায় আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের গন্ডামারা গ্রামের তার স্বামী ফারভেজ রাঢ়ীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের ফ্যান সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে জানান গৃহবধূর স্বামীর বাড়ির লোকজন।
খবর পেয়ে সকাল ৭টায় হাইমচর থানা পুলিশ গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
গৃহবধূ মাকসুদার বাবা মোসলেম ছৈয়াল বাদী হয়ে স্বামী ফারভেজ রাঢ়ী, শশুর ফারুক রাঢ়ী, শশুড়ি ফাতেমা বেগম, ননদ ফারজানা বেগমসহ ৫জনকে আসামী করে হাইমচর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত দেড় বছর পূর্বে হাইমচর উপজেলার গন্ডামারা এলাকার ফারুক রাঢ়ীর ছেলে পারভেজ এর সাথে রায়পুর উপজেলার চরআবাবিল এলাকার মোরশেদ ছৈয়ালের একমাত্র মেয়ে মাকসুদা আক্তার লিজাকে ইসলামি শরীয়া মোতাবেক বিবাহ দেয়া হয়। বিবাহের কিছুদিন পর জানতে পারা যায় স্বামী ফারভেজ মাদকাসক্ত। সে নেশায় আসক্ত হইয়া প্রায় সময় গৃহবধূ মাকসুদার উপর নির্যাতন করতো।
।বিষয়টি ফারভেজের বাবা, মা, ননদ, ননদের স্বামীকে জানালে তারা পারভেজকে কোন রকম শাষন না করে উল্টো মাকসুদাকে গালমন্দ করতে থাকে। গৃহবধূর পিতা মেয়েকে স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচাতে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। সেখান থেকে ১৫ দিন আগে স্বামী ফারভেজ মেয়ে মাকসুদাকে জোর করে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে নিয়ে আসার পর মাকসুদার উপর আরও বেশি নির্যাতন চালায় এ পাষান্ড স্বামী। সর্বশেষ গত ১৯ মে সন্ধ্যায় স্বামী, শশুর, শাশুড়ি, ননদ ও ননদ জামাইসহ বাড়ির লোকজন গৃহবধূ মাকসুদাকে মারধোর করে। তাকে আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচনা দেয়। ঐদিন রাতেই গৃহবধূ মাকসুদা কস্ট সহ্য না করতে পেরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে (ফাঁস) দিয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করে।
পরে স্থানীয় লোকজন হাইমচর থানা পুলিশকে জানালে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে গৃহবধূ মাকসুদা আক্তার লিজাকে তার বাপের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাপন করা হয়।
গৃহবধূ মাকসুদার পিতা মোসলেম ছৈয়াল জানান, আমার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর থেকে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করতো। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়ে আমার বাড়িতে চলে আসছিল। আমার মেয়ের গর্ভে ৭ মাসের সন্তান ছিল। মেয়েটাকে মেরে পেলার জন্যই আমার বাড়ি থেকে জোর করে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছে। তারা মেয়েটাকে বাঁচতে দিল না। মেয়েটাকে মেরেই পেললো। আমি তাদের বিচার চাই। আমি ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে থানায় তাদেরকে আসামী করে একটি অভিযোগ দিয়েছি। আমি তাদের শাস্তি দেখে যেতে চাই।
হাইমচর প্রতিনিধি,২০ মে ২০২৩