হাইমচর

হাইমচরে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূর লাশ নিয়ে নাটকীয়তা

চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিমচর কৃষ্ণপুর গ্রামের বসবাসরত ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য রাবিয়া বেগমের পুত্র সুমনের স্ত্রী খাদিজা বেগম (২০) শ্বশুর বাড়ির নির্মম নির্যাতনে সইতে না পেরে নিজের গায়ে কেরাসিন ঢেলে আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে নানা নাটকীয়তা থাকায় ওই গৃহবধূর মৃত্যুকে রহস্যজনক বলে মনে করেছে এলাকাবাসী।

এদিকে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ খাদিজার লাশ বিভিন্ন নাটকীয়তা শেষে গায়েবের খবরও শোনা যাচ্ছে।

জানা যায়, গত ১৮ অক্টোবর রাত ৮টায় খাদিজা বেগম তার স্বামী ও শাশুড়ীর সাথে খাবার নিয়ে ঝগড়া হলে স্বামী ও শাশুড়ীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজের গায়ে কেরাসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তার স্বামী তাকে বাঁচানোর জন্য জড়িয়ে ধরে পুকুরে নেয়ার পথে উভয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়।

স্থানীয় লোকজন উভয়কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্মরত ডাক্তার রোগীদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।

খাদিজা ও তার স্বামী সুমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। অগ্নিদগ্ধ খাদিজা ওই হাসপাতালে ৩দিন যাবত জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে অবশেষে মঙ্গলবার মারা যায়।

অন্যদিকে তার স্বামী সুমনের অবস্থা আশংকামুক্ত হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ক’বছর পূর্বে সুমনের মা ইউপি সদস্য রাবেয়া বেগম তার আপন ভাই মচু মিজির মেয়ে খাদিজাকে পুত্রবধূ করে নিয়ে আসেন। বিবাহের পর থেকে পুত্রবধূ খাদিজার উপর শুরু হয় নির্মম অত্যাচার। অত্যাচারের পরিমাণটা এতটাই বেশি হয়েছিল, যা আপন ফুফু বলে বাবা-মা’র কাছে বলতে না পারায় নিজেই হজম করে নিতেন। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে খাদিজা নিজেকে শেষ করে দেবে বলে প্রায় সময় আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। সবশেষে উপায়ন্তর না পেয়ে খাদিজা দরজা বন্ধ করে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী জানান, ওইদিন খাদিজা তাঁর স্বামীকে বাজার থেকে সিঙ্গারা কিনে দেয়ার জন্য বলে। তাঁর স্বামী কিনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিনিময়ে তাকে তাঁর স্বামী ও শাশুড়ী গালমন্দ এবং গায়ে হাত তুললে মনের কষ্টে রাতে নিজের গায়ে কেরাসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

তারা আরও জানান, প্রতিনিয়ত খাদিজাকে নানান কথার প্যাঁচ ধরে স্বামী ও তার শ্বাশুড়ী নির্মমভাবে অত্যাচার করে আসছিল। নির্মম অত্যাচার সহ্য করেও প্রাত্যাহিক সাংসারিক কাজ করতো খাদিজা বেগম। কিন্তু শাশুড়ীর অত্যাচারে অকালে প্রাণ দিতে হলো গৃহবধূ খাদিজাকে।

এ ব্যাপারে খাদিজার বাবা মচু মিজি জানান, আমার মেয়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে, এ ব্যাপারে আমার কোনো অভিযোগ নেই।

খাদিজার বাবা মচু মিজি তাঁর আপন বোনকে মামলা-হামলা থেকে বাচাঁনোর জন্যে নির্মম নির্যাতনের শিকার তার মেয়ের বিষয়ে আত্মহত্যার অভিযোগ না করে ঘটনাটি ভিন্নদিকে প্রবাহের লক্ষ্যে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

এ ব্যাপারে ছেলের বাবা দুদু মিয়া ঢালী বলেন, কী কারণে খাদিজা নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে তা আমি জানি না। তবে মেয়ের বাবা কোনো অভিযোগ করবে না বলে কাগজে সই করে তাঁর মেয়ের লাশ শরীয়তপুর নিয়ে গিয়ে দাফন করেন।

এ ব্যাপারে ১নং গাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইসমাইল হোসেন গাজী জানান, আমি ঘটনাটি মুখে বলে শুনেছি। ওই পরিবারের সাথে আমার কোনো ধারণা নেই কিন্তু লোকজনের কাছ থেকে শোনা, খাদিজার শাশুড়ী ও স্বামী সুমন মিয়া ঢালী তাঁকে অত্যাচার করতো।

এ ব্যাপারে হাইমচর থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওয়ালি উল্লাহ অলি জানান, আমাদের কাছে কোনোপ্রকার অভিযোগ আসেনি।

তিনি আরো জানান, লোকজনের কাছ থেকে শুনে এধরনের একটি ঘটনার কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

বাংলাদেশের বহু অসহায় মেয়েরা শ্বশুর বাড়ির নির্মম নির্যাতন মুখ বন্ধ করে সহ্য করে আসছে। কবে নাগাদ সভ্যতার নতুন আবির্ভাব ঘটবে, আসবে সুখি সমৃদ্ধ একটি আদর্শ পরিবার।

খাদিজার লাশ নিয়ে নাটকীয়তা শেষে নিজ এলাকা ছেড়ে লাশ নিয়ে গিয়ে শরীয়তপুরে দাফন করেছে বলে পরিবারের লোকজন জানান।

এলাকায় লাশ না আসায় লোকজন হত্যার রহস্য লুকানোর জন্যে বাড়িতে না এনে শরীয়তপুরে দাফন করেছে বলে সন্দেহ করছে। এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।

বিএম ইসমমাইল

 

|| আপডেট: ০৮:২৩ পিএম,২০ অক্টোবর ২০১৫,মঙ্গলবার

 এমআরআর

Share