Home / উপজেলা সংবাদ / হাইমচর / হাইমচরের শিশু গৃহকর্মীকে ঢাকায় লোমহর্ষক নির্যাতন -ভিডিওসহ
শিশু গৃহকর্মী জান্নাত

হাইমচরের শিশু গৃহকর্মীকে ঢাকায় লোমহর্ষক নির্যাতন -ভিডিওসহ

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় নয় বছরের ছোট্ট এক শিশু অভাবের তাড়নায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিল গাজীপুরে। বাড়ি যেতে তার খুব মন চাইত। গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর কাছে এ নিয়ে আবদার করত।

আর এই আবদারের ‘অপরাধে’ তাকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও ক্ষত নিয়ে সে এখন চাঁদপুরের হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

হাইমচর থানার পুলিশ ও শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ সন্তানকে রেখে শিশুটির বাবা অন্যত্র চলে গেছেন। পরে মা ফিরোজা বেগম শিশুটিকে মানুষের বাসায় কাজের জন্য দেন।

এক বছর আগে হাইমচরের মোস্তফা সরদার নামের একজন শিশুটিকে গাজীপুরের জয়দেবপুরে জনৈক ওমর ফারুক-মনি বেগম দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে যান।

সম্প্রতি শিশুটি বাড়ি যাওয়ার জন্য গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর কাছে আবদার করে। এ কারণে তাঁরা শিশুটিকে প্রচণ্ড মারধর ও নির্যাতন করেন।

শিশুটি চাঁদপুরের হ্ইামচর উপজেলার নয়ানী গ্রামের মো. মন্টু মাতাব্বরের ৯ বছরের কন্যা গৃহকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস।

ঢাকার গাজিপুর বিমানবন্দরে চাকরীরত মো. ওমর ফারুকের বাসায় জিয়ের কাজ করতো ৯ বছরের শিশু। বছরজুড়ে বর্বর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে তার পুরো শরীর।

গত ১৪ সেপ্টম্বর রাতেই এ ঘটনার সাথে জড়িত দালাল মেয়ের খালু মোস্তফা সরদারকে আটক করেছে হাইমচর থানা পুলিশ।

শিশুটি জান্নাতুল ফেরদৌসকে গত বছর মোস্তফা সরদার জোরপূর্বক মেয়ের মা ফিরোজা বেগমের কাছ থেকে ঢাকা গাজিপুরে বসবাসরত তার শালিকা মনি বেগমের বাসায় কাজের জন্য নিয়ে যায়।

কাজে থাকা অবস্থায় অসহায় ৯ বছরের শিশু জান্নাতুল ফেরদৌসের উপর গৃহকর্তা ওমর ফারুক ও তার স্ত্রী মনি বেগম নানা অজুহাতে শরউরে ইলেক্ট্রিক অমানসিক নির্যাতন চালাতো।

মেয়েটির পিঠে ক্ষত চিহ্ন ছাড়াও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনের খবর পেয়ে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, সির্ভিল সার্জেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুর হোসেন পাটওয়ারী মেয়েটিকে উপজেলা হাসপাতালে দেখতে যান এবং তার উন্নত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেন।

নির্যাতিত শিশুর মা’ ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমি বড় অসহায় আমার স্বামী আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয় না। সে থেকেও নেই। আমার বৃদ্ধ মা’ ভিক্ষা করে আমার ও সন্তানদের দু’বেলা খাবার যোগান দেন। আমার এ অসহায় অবস্থা দেখে মোস্তফা সরদার আমাকে মিথ্যে আশ্বাস দেখিয়ে আমার মেয়ে ভালো থাকবে বলে ঢাকায় তার শালীর বাসায় নিয়ে যায়। এক বছর ধরে আমি আমার মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও তারা যোগাযোগ করতে দেয়নি।’

তিনি আরো জানান, ‘গত ১৪ সেপ্টম্বর বুধবার সন্ধায় মোস্তাফা সরদার আমার মেয়েকে বাড়ির সামনে রেখে চলে যায়।’

এ ব্যাপারে মোস্তফা সরদার চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ‘আমি জান্নাতুল ফেরদৌসকে আমার শ্যালিকার বাসায় কাজে নিয়ে দিয়ে ছিলাম। তারা প্রথমে ভালোই ছিলো। হঠাৎ করে আমার শ্যালিকার টাকা ফয়সা হওয়ায় তার অহংকার বেড়ে যায়। তার অহংকারে এ শিশুটির ওপর অমানসিকভাবে নির্যাতন চালায়। শ্যালিকা মনি আমাকে খবর দিয়ে আহত অবস্থায় শিশুটিকে আমার কাছে দিয়ে দেয়। আমি ৭ দিন ঢাকাতে তার প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করে গতকাল (১৪ সেপ্টেম্বর) তাদের বাসায় পৌঁছে দেই।’

নির্যাতিত শিশুর চিকিৎসক হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. দীপন দে চাঁদপুর টাইমসকে জানান ‘শিশুটির অবস্থা খুবই আশংকাজনক। আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বোর্ড থেকে যতোদিন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ না হবে ততোদিন পর্যন্ত তার চিকিৎসা আমরা চালিয়ে যাবো। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা নিবো।’

পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে মোস্তফা সরদার শিশুটিকে ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে গাজীপুরের ওই বাড়ি থেকে হাইমচরে নিয়ে যান। পরে শিশুটির অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। আর মোস্তফা সরদারকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর বলেন, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামছুন্নাহারের নির্দেশে বৃহস্পতিবার(১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিশুটির প্রতিবেশী হাইমচর এলাকার শাহজাহান ভূঁইয়া বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে শিশু নির্যাতন দমন আইনে হাইমচর থানায় মামলা করেছেন।

নির্যাতনের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ওমর ফারুক ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ওমর ফারুক ঢাকা বিমানবন্দরে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রী মনি বেগম একজন স্কুলশিক্ষিকা।

।।আপডটে,বাংলাদশে সময় ০৬:৫৫ পিএম,১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বৃহস্পতিবার
এইউ

হাইমচরের শিশু গৃহকর্মীকে ঢাকায় লোমহর্ষক নির্যাতন -ভিডিওসহ

About The Author

প্রতিবেদক- বি এম ইসমাইল, হাইমচর

Leave a Reply