‘চাঁদপুর ইচলী ফেরীঘাট’ জেলার ঐতিহ্যের সাথে এ স্থানটির পরিচয় অনেক গভীরভাবে মিশে আছে। দেশের সর্ববৃহৎ নদীবন্দর সদরঘাটে আজ থেকে বছরখানেক আগেও বিশালাকৃতির লঞ্চের নামের সাথে এ নামটির দেখা মিলতো। রামগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ কয়েক জেলার মানুষ এ ঘাট দিয়েই লঞ্চে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতো।
এক যুগ পূর্বে ২০০৫ সালে চাঁদপুর-রায়পুর সেতু উদ্বোধন হওযার পরে বন্ধ হয়ে যায় ফেরী চলাচল, সেতুটি উদ্বোধন হওয়ার আগে উল্লেখিত অঞ্চল থেকে চাঁদপুর শহরে আসতে হলে ফেরী পারাপারে প্রয়োজন হতো। তবে ঘাটে কিছুটা স্বাভাবিক গতি থাকে লঞ্চঘাট থাকার কারণে। স্থানীয়রা নদীপথে সংক্ষিপ্ত রাস্তা হিসেবে শহরে আসার ক্ষেত্রে এটিকেই ব্যবহার করতো।
কিন্তু এর সবই এখন রূপকথার গল্পের মতো। আগের মতো যানবাহন, লঞ্চ ও মানুষজন চলাচল না করায় হাঁকডাক আর ঐতিহ্য হারিয়ে বিলিন হওয়ার পথে ঐতিহ্যবাহী ইচলী ফেরিঘাট।
ইচলী ফেরিঘাটে সরজমিনে দেখা যায় এখন থেকে ১৩-১৪ বছর আগেও যে ইচলী ঘাটে ছিলো হাজারো মানুষের সমাগম আর ফেরি পার হওয়ার জন্য যানবাহনের দীর্ঘ লাইন । ছিলো ছোট, বড় বিভিন্ন যানবাহন ও লঞ্চের ঝাঁঝালো হুইসেল। সে ঘাটটি এখন যেনো গায়ের কোন নির্জন স্থানে পরিণত হয়েছে।
খেয়া ঘাটের দু’পাড়ে একসময় যেখানে একাধিক নৌকার সারি সারি ভাবে লাইন ছিলো। সেখানে এখন মাত্র দুই পাড়ে ৫ থেকে ৭টি নৌকা শোভা পাচ্ছে। তাও খেয়া পারা পারে তেমন কোন মানুষ চোখে পড়ছে না। ফেরিঘাটের নিয়মিত নৌকার মাঝি আঃ রাজ্জাক শেখ, মালেক বেপারী, লোকমান শেখ, আলী আরশাদ গাজীসহ বেশ ক’জন মাঝি জানান, তারা যেখানে আগে প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে খেয়া পারাপার করে ৫ থেকে ৬শ, টাকা রোজগার করতো। সেখানে এখন এ ঘাট দিয়ে মানুষের তেমন কোন যাতায়াত না থাকায় সারাদিনে মাত্র এক থেকে দেড় শ’ টাকা রোজগার হয়।
তারা এখন থেকে ১২/১৩ বছর আগে এ ঘাটে প্রতিদিন ৫০/৬০টি নৌকা পর্যায়ক্রমে খেয়া পারাপার হতো। মানুষের তেমন যাতায়াত না থাকাতে সেখানে এখন মাত্র ৭/৮টি নৌকা খেয়া পারাপার করে থাকে। অপরদিকে যানবাহন এবং মানুষের তেমন যাতায়াত না হলেও ইচলীঘাটে চাঁদপুর ও ঢাকা গামী বিভিন্ন লঞ্চ ভিড়তো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে এখন কোন লঞ্চও ভিড়ছে না। লঞ্চ না ভিড়ার কারনে ঘাটটি আরো সহজেই তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
এছাড়াও এ ঘাট দিয়ে একসময় যে পরিমান টোল আদায় হতো, যানবাহন ও মানুষের তেমন যাতায়াত না থাকায় এখন তার ১০ ভাগের ১ ভাগও টোল আদায় হয় না। দু’পাড়ের ছোটখাটো টং দোকানগুলোও এখন লোকসান গুনছে।
টোল আদায়কারী হারুন খান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘এখন থেকে ১২-১৩ বছর আগে যেখানে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকা টোল আদায় হতো , সেখানে বর্তমানে প্রতিদিন টোল আদায় হয় মাত্র ৪-৫ শ’ টাকা।
স্থনীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে গাছতলা এলাকা দিয়ে ডাকাতিয়া নদীর ওপর দিয়ে চাঁদপুর রায়পুর সেতু নির্মাণ হওয়ার পর থেকেই এ ঘাট দিয়ে আস্তে আস্তে যানবাহন এবং মানুষের চলাচল কমে যায়। তারপর কিছুদিন পর ফেরি পারাপার ও বন্ধ হয়ে যায়। এ কারনে দক্ষিন পূর্ব অঞ্চলের মানুষজন এবং বিভিন্ন যানবাহন ওই সেতু দিয়েই চলাচল করার কারনে ইচলী ফেরিঘাটটি অকেজো হয়ে পড়ে।
বর্তমানে শুধুমাত্র বাগাদী, চৌরাস্তা, ইচলী ও ঢালীর ঘাট ও আশপাশের লোকজন এ ঘাট দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে থাকে।
প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ইচলী ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন এবং তেমন কোন মানুষজন যাতায়াত না করার কারণে তা একেবারেই বিলিন হওয়ার পথে।
স্থানীয়দের দাবি একসময়ের এই আলোচিত ফেরিঘাটটি পুণরায় জাগ্রত করতে অন্তত পক্ষে ইচলী লঞ্চঘাট সক্রিয় করা হোক। তাহলে আবার নতুন রূপে তার যৌবন ফিরে পাবে অন্তত শতবছরের ঐতিহ্যের চাঁদপুর ইচলী ফেরীঘাট।
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫৯ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur