এএসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা আদায়ের সময় অন্য কোন ফি আদায় করা যাবে না সরকারি এমন নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করেই রশিদ ছাড়াই ফরিদগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনে অতিরিক্ত টাকা আদায় চলছেই।
ফরম পূরনের ফি’র সাথে বিশেষ ক্লাশ/কোচিংসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে কৌশলে এই বাণিজ্য চলছে। উপজেলার বিভিন্ন উচচ বিদ্যালয়ে একই কায়দায় এ রমরমা বাণিজ্যে চলছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ভুক্তভোগীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন অভিভাবকরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পরীক্ষার ফরম ফিলাপের নামে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের রশিদ স্কুল কর্তৃপক্ষ দিচ্ছেন না। কোন কোন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধানের বলে অতিরিক্ত ওইসব টাকা আদায় চলছে।
এনিয়ে অভিযোগ দিলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে এমন ভয় ভীতি ও অসাধু শিক্ষক কর্তৃক হয়রানি থেকে বাঁচতে পরিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা মুখ খুলতে নারাজ। অতিরিক্ত ওই টাকা আদায়ের ধরন দেখে মনে হচ্ছে অসাধু শিক্ষকের কাছে তার প্রতিষ্ঠানটি যেন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে দেখা যায়, গত ৩ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের উপ নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে বোর্ডের নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত কোন অর্থ আদায় করা যাবে না।
শুধু তাই নয় প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য বকেয়া বেতন ও অন্যান্য ফি নির্বাচনী পরীক্ষার সময়ই আদায় করে নিতে হবে। কোচিং মডেল টেস্ট ইত্যাদির নামে ছাত্র ছাত্রীদের নিকট থেকে কোন অর্থ আদায় করা যাবে না। অন্যদিকে দুদক এবারের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষাদের ফরম ফিলামের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে গত বৃহস্পতিবার চিঠি প্রেরণ করেছে ।
সরকার নির্ধারিত ফি’র বাহিরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অসহায় দরিদ্র শিক্ষাথীদের জন্য অতিরক্তি এই অর্থ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এনিয়ে অভিযোগ দিলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে এই ভীতি ও শিক্ষক কর্তৃক হয়রানি থেকে বাঁচতে অভিভাবকরা মুখ খুলতে নারাজ।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ফরম ফিলাপ শুরু করার নির্দেশনা রয়েছ্ ে। বিলম্ব ফি ছাড়া ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ফরম ফিলাপ করা যাবে। তবে ওই তারিখের মধ্যে যারা ফরম ফিলাপে ব্যর্থ হবে তারা আগামী ২২ নভেম্বর মধ্যে বিলম্ব ফি ১০০ টাকা হারে জমা দিয়ে ফরম ফিলাপ করতে পারবে বলে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেন্দ্র ও ব্যবহারিক ফি সহ মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় বোর্ড নির্ধারিত ফি নিয়মিতদের ১৬শ৫০ টাকা অনিয়মিতদের ১৭শ৫০ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগে নিয়মিতদের ১৭শ ৭০ টাকা ও অনিয়মিতদের ১৮শ৭০ টাকা নির্ধারন করেছে শিক্ষাবোর্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ এ আর মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৮শ’ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা, খাজুরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ থেকে ৫ হাজার, পাইকপাড়া ইউজি উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা, ফিরোজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫’হাজার, গাজীপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ থেকে ৬’হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন।
একই কায়দায় উপজেলার আরো বেশ কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসায় অতিরিক্ত হারে পরীক্ষার ফি আদায় করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসছে। কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির কোন লিখিত সিদ্ধান্ত ছাড়াই কতিপয় অসাধু শিক্ষক তার ইচ্ছে মতোই নানা অযুহাত দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার খাজুরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, অতিরিক্ত ফি দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসএসসির ফরম পূরন করা হচ্ছে। এবিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন অভিভাবক এ প্রতিনিধিকে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ফরম ফিলাপ করা হচ্ছে।
এছাড়া কোচিং ক্লাসের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ক’জন অভিভাবক জানান ২ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার কিংবা তার উর্দ্ধে টাকার বিনিময়ে এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ফরম পূরন করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের একটি তালিকা বিভিন্ন মাধ্যমে চড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে এলাকার সচেতন জনসাধারণের মধ্যে হইছই পড়ে যায়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই তালিকা সর্ম্পকে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
এদিকে ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন নান্নু তার স্কুলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে এ প্রতিনিধিকে বলেন, বোর্ড ও দুদকের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্তের বলেই কোন রশিদ দেয়া ছাড়াই অতিরিক্ত ফি আদায়ের ঘটনায় অভিভাবকরা হয়ে উঠছে ক্ষুব্ধ।
এসর্ম্পকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ফরিদগঞ্জ এ আর মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত কোন অর্থ আদায় করা হয়নি। বোর্ড নির্ধারিত ফির বাহিরে কিছু খরচ আছে সে জন্য এক দেড় শ’ টাকা নিতে হয়। টাকা আদায়ের রিচিড না দেয়া প্রসংঙ্গে ওই প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে সন্তেুাষজনক জবাব পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে খাজুরিয়া বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী বিএসসি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘ অতিরিক্ত টাকা আদায়ের তালিকাটি সঠিক নয়। ’
গাজীপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লতিফ বিএসসি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ফরম ফিলাপ শেষ হওয়ার পরে টাকা আদায়ের রশিদ দেওয়া হবে। তবে তার স্কুলে বোর্ডের নির্ধারিত টাকার বাহিরে অতিরিক্ত কোন টাকা আদায় করা হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফিতেই ফরম পুরন করার কথা। কেউ যদি অন্য কোন পাওনা নিতে চায় তা এখন কেন? অন্য পাওনা আগে পরে নিতে পারে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আফরোজ সাংবাদিকদের জানায়, এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের নামে অতিরিক্ত ফি যেনো আদায় করা না হয় এ লক্ষ্যে সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে সভা করা হবে। এরইধ্যে এবিষয়ে সর্তক করে একটি চিঠি সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে। অতিরিক্ত ফি নেয়ার বিষয়ে প্রমান ফেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে বোর্ডে সুপারিশ করা হবে।
প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ
৯ নভেম্বর, ২০১৮