কৃষি ও গবাদি

বেইজিং হাঁস পালনে চাটমোহরের ‘হিরো’

২০১৬ সালে ১৮০টি বাচ্চা দিয়ে শুরু হওয়া খামারটিতে বর্তমানে এক হাজার ৭০০টি হাঁস রয়েছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ আর সঠিক তত্ত্বাবধানে হাঁসগুলো ডিম দিচ্ছে এবং সেই ডিম থেকে ফুটছে বাচ্চা।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই ফোন করে বাচ্চার অগ্রিম বুকিং দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা। প্রতিটি বাচ্চার মূল্য ৭০ টাকা। এভাবে হাঁসের পাশাপাশি মাছ চাষ করেছেন আবু বিন হিরো। তাঁকে দেখে চাটমোহরের অনেকেই বেইজিং হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার আড়িংগাইল গ্রামের ছেলে আবু বিন হিরো দাবি করেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই উন্নতজাতের বেইজিং হাঁসের পালন শুরু হলেও তিনিই এ দেশে প্রথম হাঁস পালন ও ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন শুরু করেন। এরই মধ্যে অনেকে এই হাঁসের খামার করেছেন।

হিরো জানান, ২০০৮ সালে তিনি সস্ত্রীক থাইল্যান্ড সফরে যান। সেখানে স্থানীয় এক হোটেলে খাবার সময় ভাতের সঙ্গে খেতে দেওয়া হয় হাঁসের মাংস। সুস্বাদু হওয়ায় হোটেল মালিককে মাংসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বেইজিং হাঁসের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেন। এরপর কৌতূহলবশত হোটেল মালিককে সঙ্গে করে স্থানীয় এক হাঁসের খামারে বেড়াতে যান। সেখান থেকেই ‘বেইজিং হাঁস’ পালনের চিন্তা বয়ে নিয়ে আসেন। দেশে ফিরে বিভিন্ন হ্যাচারিতে খুঁজতে থাকেন বেইজিং হাঁসের বাচ্চা। কোথাও না পেয়ে অবশেষে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে ১৮০টি এক দিনের বেইজিং হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করে গ্রামের বাড়িতে প্রতিপালন শুরু করেন। খামারের নাম দেন ‘ইউনিড্স অ্যাগ্রো খামার’।

তিনি আরো জানান, খামারে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০টি ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এই ডিম বাছাই করে তুষ পদ্ধতিতে হারিকেনের আলোর উত্তাপে প্রতি পাঁচ দিন পর পর পাঁচ হাজার ২০০টি বাচ্চা ফোটানো হচ্ছে। প্রতিটি এক দিনের বাচ্চা পাইকারি ৭০ টাকা করে বিক্রি হয়। এ ছাড়া যে ডিমগুলো থেকে বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব নয়, সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। হ্যাচারির সম্মুখে পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস পালন করে তিনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে জানান।

তিনি আরো বলেন, “প্রাপ্তবয়স্ক ৬০-৯০ দিনের হাঁস ঢাকার গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমণ্ডি, বাড়িধারার মতো অভিজাত সুপারশপ ‘স্বপ্ন’র মাধ্যমে মাংস প্রসেস করে বিক্রি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বেইজিং হাঁসের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।”

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আবু ভাই যত্নসহকারে খামারটি গড়েছেন। মূলত এই বেইজিং হাঁস পালন দেশের মাংসের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এখান থেকে বেকার যুবকরা পরামর্শ নিয়ে এবং আমাদের অফিসে এসেও এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে স্বল্প পরিসরে খামার শুরু করতে পারে। এখানে বড় যে বিষয় সেটা হলো অন্যান্য পশু-পাখির চেয়ে হাঁসের রোগ-বালাই কম হয়। (কালের কন্ঠ)

বার্তা কক্ষ
২০ ডিসেম্বর,২০১৮

Share