ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সীমান্তবর্তী সিরিয়ার অঞ্চলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ হাজার ৭০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে তুরস্কেই নিহত হয়েছে ২০ হাজার ২১৩ জন।
আর প্রতিবেশী সিরিয়ায় তিন হাজার ৫০০ জন নিহত হয়েছে। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এর মধ্যে রয়েছেন তুর্কি তরুণ ইউনুস এমরে কায়ার বাগদত্তা গুলচিন।
ভূমিকম্পের সময় তাকে ও তার পরিবারকে বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছিলেন ইউনুস। কিন্তু পারেননি। তার আগেই শত-সহস্র স্বপ্ন ভেঙে যায় এ তরুণের। মারা যান তার প্রিয়তমা।
ঘটনাটি তুরস্কের কাহরামানমারাস শহরের। গত সোমবারের (৭ ফেব্রুয়ারি) ভয়াবহতায় হবু স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন ইউনুস। গুলচিনের জন্য বিয়ের যে পোশাক তিনি কিনেছিলেন, সেটি এখন আর ব্যবহার করতে পারবেন না তিনি। বরং প্রিয়তমাকে পরাতে হবে কাফনের কাপড়।
তুর্কি সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বিয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন ইউনুস-গুলচিন। কিন্তু গুলচিনের বাবা বিদেশে থাকায় বিয়ে পিছিয়ে দিতে হয়। পরে তাদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয় আগামী এপ্রিলে।
দুজনের বাড়িও ছিল প্রায় কাছাকাছি। সোমবার ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি টের পেয়ে নিজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইউনুস দৌড়াতে থাকেন গুলচিনের বাড়ি লক্ষ্য করে। কিন্তু তার আগেই শেষ হয়ে যায় গুলচিনের প্রাণ। ছোট বোনের সঙ্গে এক ভবনেই চাপা পড়েন তিনি।
ইউনুস বলেন, আমার তাকে বিয়ের পোশাক পরানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন তাকে কাফন পরিয়ে দিতে হবে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
কাহরামানমারাস শহরের স্টেডিয়াম-পার্কিং লটে গুলচিনের মরদেহ রাখা হয়েছে। ইউনুস তার প্রেমিকার দেহটি আগলে ধরে রেখেছিলেন। তার চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। বার বার গুলচিনের কপালে চুম্বন করছিলেন ইউনুস। এ সময় তিনি বলেন, এখন আমি শুধু তার কপালে চুম্বন করছি। তারে রাখা ব্যাগটি খুলে মুখেও চুমু খেয়েছি। মনে হচ্ছে এত সুন্দর গন্ধ আর কোথাও নেই। এর মতো সুন্দর গন্ধ আর নেই।
তিনি আরও বলেন, গুলচিনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় আমার সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সময়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৭। প্রথম দেখায় আমরা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সে আমার চার বছরের ছোট। আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো। সেটি এত বেশি ছিল, আমি কোথায় এমনটি খুঁজে পাবো না। গত বছরেই আমাদের বিয়ের কথা ছিল। কিন্তু সেটি পিছিয়ে ২৮ এপ্রিল নির্ধারিত হয়েছিল।
আমি গুলচিনকে কথা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, যা কিছু হয়ে যাক আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না। কিন্তু এখন কি হয়ে গেল! আমি কল্পনাও করিনি। মনে কেউ আমার হাত-পা বেঁধে রেখেছে। আমি উঠতে পারছি না। খাবার নেই, পানি নেই, বাতাস নেই; আমাকে হয়ত এভাবেই থাকতে হবে। আমি হাঁটতে থাকা মৃতের মতো।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলো থেকে স্টেডিয়াম-পার্কিং লটে প্রচুর মরদেহ এনে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটি মরদেহ বডিব্যাগে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। চারপাশের পরিস্থিতি এমন, কোথাও কবর খোঁড়ার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় গণকবর দিতে হচ্ছে নিহতদের। শেষ বিদায়ের আগে তাই অস্থায়ী মর্গে এসে প্রিয়জনকে দেখে যাচ্ছেন স্বজনরা। কেউবার আবার লাশ নিতে এসেছেন।
বার্তা কক্ষ, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩