কুমিল্লায় অবশেষে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি শিপন- ইমনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষে চট্টগ্রামের রেলওয়ের কর্মচারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহম্মেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হলো।
আসামিরা হলেন – শিপন হাওলাদার ওরফে শিপন এবং নাইমুল ইসলাম ওরফে মঈন। শিপন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার দক্ষিণ আমবাগানের মৃত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার নন্দনসার গ্রামে। অপর আসামি নাইমুল ইসলাম ওরফে মঈন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার ডেবারপাড় এলাকার মৃত ঈদুন মিয়া সরকারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার রতনপুর গ্রামে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে একসাথে দুইজনের ফাঁসি কার্যকর হয়।
কারা ফটকে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কারাগারে এসে দণ্ডপ্রাপ্ত শিপনের সাথে তার মা-ভাইসহ ৩ জন ও ইমনের সাথে তার ভাই-বোনসহ ৩ জন সর্বশেষ সাক্ষাৎ করে তারা প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন। এ সময় দুইজনই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এর আগে কারা বিধি অনুসারে বিকাল ৫ টা এবং সর্বশেষ রাত ৯টার দিকে কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. রেজা মো. সরোয়ার আকবর দু’দফায় দুই জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তাদেরকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান ডেপুটি জেলার আরিফুর রহমানসহ অন্য কারারক্ষীরা।
উভয়ের ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন, জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ, জেলার আসাদুর রহমান এবং কারাগারের চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ফাঁসি কার্যকরের পর ময়নাতদন্তসহ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, পরে তাদের মরদেহ কারাগারের ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
হত্যা ও আইনী প্রক্রিয়া :
চট্টগ্রামের খুলশী থানার উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের ৩৬/এ বাসায় বসবাস করতেন রেলওয়ে চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী শফিউদ্দিন আহম্মেদ। এলাকায় সন্ত্রাসী, মদ, জুয়া ও রেলওয়ের অবৈধ সম্পদ দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন শফিউদ্দিন।
তার ভূমিকার কারণে প্রশাসন ওই সময় রেলওয়ের জায়গা থেকে চার দফায় অবৈধ বস্তি ও কলোনি উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ২০০৩ সালের ১৪ জুন শফিউদ্দিনের বাসায় ঢুকে গুলি করে তাকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাসুদা বেগম খুলশী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ হত্যা মামলায় দুই আসামি শিপন ও ইমনকে ফাঁসির দণ্ড দেন এবং সাত আসামিকে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেন।
ওই সময় চট্টগ্রাম কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ২০১৯ সালে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে উক্ত সাজার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। কিন্তু ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত রিভিউ খারিজ করে দেয়।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাস্ট্রমন্ত্রণালয়, কারা-২ শাখার স্মারকমূলে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদনটিও নামঞ্জুর করায় সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কুমিল্লা প্রতিনিধি