চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়েরের পর বিপাকে রয়েছেন দিনমজুর পিতা। প্রকাশ্যে আসামীরা গুরে বেড়াচ্ছে আর আগাম জামিন নিয়ে ফোনে হুমকি দিচ্ছে বলে দিনমজুর পিতার অভিযোগ।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত প্রায় ৮ বছর পূর্বে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩নং কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের তারাপাল্লা গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে সুমি আক্তারকে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নাগদা গ্রামের হান্নান ঢালীর ছেলে নূরে আলমের সাথে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে কয়েক বার মারধর করলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি শেষে সুস্থ হওয়ার পর কিছু টাকা দিয়ে পূণরায় বাবা মা স্বামীর বাড়ীতে পাঠায়। এভাবে সংসার জীবন চলমান অবস্থায় দুইটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।
চলতি বছরের ২৯ মে শনিবার দিনমজুর কামাল হোসেনের স্ত্রীর কাছে শুশুর বাড়ীর লোকজন ফোন করে বলে আপনার মেয়ে বিষ খেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এ খবর শুনে মেয়েটির বাবা ও মা পাগলের মত ছুটে যায় স্বামীর বাড়ীতে এবং এক প্রকার বিষয়টি আপোষ মিমাংসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তখনি আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে ঘটনার বিবরন জানতে পেয়ে দিনমজুরের মাথায় আত্মহত্যা না এটা হত্যাকাণ্ড বলে মাথায় ঘুরপাক খায়।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে গত ৯ জুন ২০২১ ইং তারিখে দিনমজুর কামাল হোসেন বাদী হয়ে মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে ৩০২ ধারায় চাঁদপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ৮৬। এতে আসামিরা হলেন, স্বামী নূরে আলম, শুশুর হান্নান ঢালী, দেবর খোরশেদ ঢালী, ননদ হাওয়া বেগম ও খাদিজা বেগম এবং শাশুড়ী আফরোজা বেগম। এর মধ্যে স্বামী ও শুশুর ছাড়া বাকীদের আগাম জামিন হলেও আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং মেয়ে হত্যার বিচার চাওয়া দিনমজুর কামাল হোসেনের ফোনে হুমকি দিচ্ছেন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য।
সরেজমিন তদন্তে মেয়েটির স্বামীর বাড়ী মতলব দক্ষিণ উপজেলার নাগদা গ্রামের ঢালী বাড়ীতে গেলে কথা হয় দিনমজুরের বড় নাতি শুভ, বাড়ীর বাসিন্ধা সোবাহান ঢালী, সাথী বেগম, মাহিন ও আল-আমিনের সাথে। তারা বলেন, ঘটনার দিন সকালে কিস্তি উঠানোর জন্য স্বামী তার স্ত্রী সুমিকে বলপ্রয়োগ করে। স্ত্রী তা পারবে না বলে জানালে তখন বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য গালাগালি করে।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মারধরের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এর পর স্বামী নূরে আলম ঘর থেকে বের হয়ে কাজে চলে যায়। পরে বিকাল বেলায় সুমি বিষ খেয়েছে মর্মে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেছে বলে আমরা শুনেছি। বর্তমানে মামলা হয়েছে শুনে ঘরে তালা মেরে আসামীরা সবাই আত্নগোপনে আছে।
এ বিষয়ে দিনমজুর কামাল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন সকাল ১০ টার দিকে আমার মেয়ের ননদ হাওয়া বেগম ফোন করে বলে আপনাদের মেয়ে কিস্তি উঠানো নিয়া চরম ঝগড়া করে। এক পর্যায় শাশুড়ী আফরোজা বেগম ফোনে বলে আপনার মেয়েকে বলেন কিস্তির আবেদন ফরমে সই দিতে না দিলে আপনারা আমার ছেলেকে ৫ লাখ টাকা দেন। এ কথা শুনার পর আমার স্ত্রী ফোন কেটে দেয়। তার পর আমরা মেয়ের ফোনে কল দিয়ে সাড়া পাইনি।
বিকেলে সাড়ে ৪ টার দিকে আমার জামাই নূরে আলম ফোন করে বলে আপনার মেয়ে বিষ খেয়েছে, এখন চাঁদপুর সদর হাসপাতালে আছে। এ কথা শুনার পর আমাদের হিতাহিত জ্ঞান ছিলনা।
এক পর্যায় সেই বাড়িতে গেলে তারা জোরপূর্বক আপোষ মিমাংসার কথা বলে বল প্রয়োগ করে। বিষয়টি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলে নানা প্রশ্নের জন্য নেয়, ঠিক তখনি আমি চাঁদপুর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছি। বর্তমানে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমার ফোনে গত ২৬ জুন থেকে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য । আমি প্রশাসনের কাছে মেয়ে হত্যার সুষ্ঠ বিচার চাই।
নিজস্ব প্রতিবেদক