চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের ইয়াসমিন আক্তারের (২২) মৃত্যু অগ্নিদগ্ধ হয়ে নয়, শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যার পর মরদেহে আগুন লাগিয়ে ফজরের নামাজ পড়তে যায় স্বামী রেজাউল করিম। ঘটনার ১৮ দিন পর এর রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাব।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ডেউয়াতলী এলাকার এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে রেজাউলকে। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ মেজর সাকিব হোসেন।
গ্রেফতার রেজাউলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মেজর সাকিব জানান, ২০১৭ সালের শুরুতে রেজাউল করিম ইয়াসমিন আক্তারের বাড়ির (চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানার ডিংগাভাঙ্গা) এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতো। ওই বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ায় রেজাউলের সঙ্গে ইয়াসমিনের মা বেবী আক্তারের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে আসামি রেজাউল ঋণের কিস্তির টাকা নিতে ইয়াসমিনদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো।
একপর্যায়ে ইয়াসমিনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে আগের স্বামী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ইয়াসমিনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাই খুব দ্রুত তাৎক্ষণিকভাবে কোনও কাবিন ছাড়াই রেজাউল ভিকটিমকে স্থানীয়দের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। বিয়ের পরে সে মালদ্বীপ চলে যায়।
গত ৭ জানুয়ারি রেজাউল মালদ্বীপ থেকে দেশে ফিরে আসে এবং পরিবারের অমতে ১০ জানুয়ারি অনেকটা বাধ্য হয়েই ইয়াসমিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবারও বিয়ে করে। এরপর রেজাউল ইয়াসমিনকে তার বাড়ি বরুড়ার ডেউয়াতলী গ্রামে নিয়ে আসে। একদিকে পরিবারের অমতে বিয়ে, অপরদিকে যৌতুকের চাপের কারণে তাদের পারিবারিক কলহ চরমে ওঠে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গত ১০ মার্চ বিকালে স্বামীর সঙ্গে ইয়াসমিনের বিভিন্ন বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়। রেজাউল তাকে চড়থাপ্পড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আনুমানিক ১০টার সময় রেজাউলের বাবা-মা ঘুমিয়ে গেলে পুনরায় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে গলা চেপে ধরলে ইয়াসমিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিছুক্ষণ পরে রেজাউল বুঝতে পারে তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই। সে সারারাত ভাবতে থাকে, স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি পরিবার ও লোকমুখে জানাজানি হলে সে কী বলবে। একপর্যায়ে ১১ মার্চ ভোর ৫টার দিকে সে মৃত স্ত্রীর শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে ফজরের নামাজ পড়তে চলে যায়। নামাজ শেষে সে পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারতে যায়। সেখানে থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে রেজাউল আগুন লাগার বিষয়ে জানতে পারে এবং বাড়িতে ফিরে আসে।
স্থানীয়দের আগুন নেভানোর সময় রেজাউলও তাদের সঙ্গে আগুন নেভানোর ভান করতে থাকে এবং বলতে থাকে ঘরের ভেতর তার স্ত্রী ও বিদেশ যাওয়ার সব কাগজপত্রসহ টাকাপয়সা রয়েছে। বিষয়টি বলতে বলতে রেজাউল জ্ঞান হারানোর অভিনয় করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। তার স্ত্রীর জানাজা শেষ হলে হাসপাতাল থেকে সে আত্মগোপনে চলে যায়। আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২৯ মার্চ ২০২২