চাঁদপুর

হতাশার নির্মম পরিহাস : চাঁদপুরে দেড় মাসে ১০ আত্মহত্যা

কবির হোসেন মিজি \
পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থ পরকীয়া এবং পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অতিমাত্রায় হতাশার ভয়ানক প্রতিফলন হিসেবে চাঁদপুরে দিন দিন বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা।

গত দেড় মাসে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ও বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে নারী পুরুষসহ ১০ জন আত্মহত্যা করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ ছাড়াও গত দেড়মাসে অন্তত অর্ধশত আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।

আবার অনেকে বিষপান করে কিংবা গলায় ফাঁসদিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। যাদের আত্মহত্যার খবর হাসপাতাল কিংবা কোন থানা পুলিশের অগোচরেই রয়ে গেছে। আর এসব আত্মহত্যার মূলে রয়েছে, পরকীয়া, যৌতুক, শ্বশুর পক্ষের লোকজনের নির্যাতন, পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থ, পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ইত্যাদি।

এর বাইরেও অনেক কিশোর কিশোরী অভিবাবকদের শাসনের কারনেও রাগে ক্ষোভে অভিমান করে বিষপান করে অথবা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছেন।

চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক কিশোর, কিশোররী, নারী পুরুষ বিষপান করার পর চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর যাদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে সেসব তথ্য থেকে জানা গেছে গত দেড় মাসে ১০ জন বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন।
এরমধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো গত ৩০ ডিসেম্বর চাঁদপুর শহরের পীর মহসীন উদ্দিন পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ফারজানা আক্তার (১৫) ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইক পাড়া ইউ জি পি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ফেরদৌসী আক্তার (১৬)। তারা দু,জনেই পরীক্ষার অকৃতকার্য হওয়ায় একজন বিষপান এবং অন্যজন গলায় ফাঁসদিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

একই দিনে একই কারনে আরো সফরমালী ও বাঘড়া বাজার এলাকার দু,ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে জানাগেছে। নিহত দু’ছাত্রীর মধ্যে ফারজানা আক্তার শহরের প্রফেসর পাড়া গাজী বাড়ির দুলাল গাজীর মেয়ে এবং ফেরদৌসী আক্তার পাইক পাড়া সরদার বাড়ির মানিক সরদারের মেয়ে।

এছাড়া ২৪ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরহোগলা গ্রামের প্রবাসী এমদাদ হোসেনের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪৫) পারিবারিক কলহে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। ৭ ডিসেম্বর একই উপজেলার দেইচর গ্রামের ২৭ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর উপজেলার আলগী পাঁচ গাঁও গ্রামের বোরহান মিয়ার মেয়ে শিরিনা আক্তার (১৯) বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে বিষপানে আত্মহত্যা করেন। ২৬ নভেম্বর শহরের চেয়ারম্যানঘাটা এলাকার ডায়াবেটিক হাসপাতালের কাছে দক্ষিন দাসদী গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মাকসুদুর রহমান (২২) নামের যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

১৪ নভেম্বর বাগাদী এলাকার ওয়ালী উল্ল্যাহর মেয়ে রোজিনা বেগম (২২) স্বামীর সাথে অভিমান করে ট্রেনের নিচে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এবং ১১ নভেম্বর হাজীগঞ্জ উপজেলার সাতবাড়িয়া বড় বাড়ির আলমগীর মোল্লার মেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আখি আক্তার (১৫), ও ১০ নভেম্বর একই উপজেলার পৌর এলাকায় নাছরিন আক্তার (২৫) নামের এক নববধূ যৌতুকের টাকা দিতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
সর্বশেষ গত জানুয়ারি মতলব উপজেলার দক্ষিন নারায়ন পুর চাপাতলী গ্রামের হামিদ মিয়াজীর ছেলে ইউনুছ মিয়াজী (৩৮) তার বড় ভাইয়ের সাথে অভিমান করে বিষাপন করে আত্মহত্যা করেছেন।
হিসেব করে দেখা গেছে গত দেড়মাসে জেলার বিভিন্নস্থানে সর্বমোট ১০ জন নারী, পুরুষ, কিশোর কিশোরী ট্রেনে কাটা পড়ে, গলায় ফাঁস দিয়ে, বিষপান করে এবং গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এর বাইরেও জেলার বিভিন্নস্থানে আরো অনেকে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিজের রাগ ক্ষোভ এবং অভিমান সামলাতে না পেরে তারা বেছে নিয়েছেন মহাপাপের জঘন্যতম আত্মহত্যার পথ।

এভাবেই চাঁদপুরে দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা।

প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫৯ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, রোববার
ডিএইচ

Share