Home / সারাদেশ / ১৫ বছর আগে রাতে দেখা শ্রমিক নান্নুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে
১৫ বছর আগে রাতে দেখা শ্রমিক নান্নুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে

১৫ বছর আগে রাতে দেখা শ্রমিক নান্নুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে

কথায় আছে, স্বপ্ন (খোয়াব) আর বাস্তবতা এক জিনিস নয়। কিন্তু বাস্তবেও স্বপ্নপূরণ হয়, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন খেটে খাওয়া হতদরিদ্র এক শ্রমিক।

প্রায় ১৫ বছর আগে ঘুমের মধ্যে হজে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে তিনি ২০ আগস্ট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হজের উদ্দেশ্যে বিমানে করে রওনা হয়ে যাবেন।

তাঁর নাম মো. নান্নু গাজী (৫০)। বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শৌলা গ্রামে। বাবার নাম কাঞ্চন আলী গাজী। পেশায় নান্নু গাজী একজন শ্রমিক।

নান্নু গাজী বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। কোনো এক রাতে তিনি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তখন স্বপ্নে দেখতে পান দুজন হুজুর এসে তাঁকে বলছেন, “নান্নু ওঠো, তোমাকে নিয়ে আমরা মদিনায় হজে যাব। তোমার সবকিছু তুমি গুছিয়ে নাও।” তখন আমি বলি, “হুজুর, আমার তো সামর্থ্য নেই। আমি নিতান্তই গরিব, কী করে যাব?” তখন তাঁরা (হুজুরদ্বয়) বললেন, নিয়ত করো, আল্লাহ তোমায় বরকত দেবেন।’

এরপর তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। এরপর আর ঘুমাননি তিনি। সারা রাত শুধু জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করেছেন। ফজরের নামাজ পড়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবেন। অভাবের সংসার। কী দিয়ে কী করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না। হাতে ছিল মাত্র ১৬০ টাকা। সেই টাকা দিয়ে হজের নিয়তে দুটি ছোট মুরগি কেনেন। প্রায় ছয় মাস পালন শেষে বাজারে বিক্রি করেন ৭০০ টাকা। ওই টাকা দিয়ে ওই দিনই কেনেন একটি ছাগল। এক বছর পর ছাগলটি বিক্রি করেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়। ওই টাকা দিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে কেনেন একটি গাভি (ছোট) গরু। প্রায় সাড়ে চার বছর পালন শেষে গরুটি বিক্রি করেন ৪০ হাজার টাকায়। তারপর ওই টাকা দিয়ে কেনেন দুটি মহিষের বাছুর। এ দুটি লালন-পালন করেন প্রায় আট বছর। এরই মধ্যে একটি মহিষ একটা বাচ্চা দেয়। মোট তিনটি মহিষ ২০১৬ সালে তিনি বিক্রি করেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। পুরো টাকা তিনি আমানত হিসেবে রাখেন স্থানীয় সমাজসেবক শাহাবাজ হোসেন খান ওরফে মিল্টন মিয়ার কাছে। তাঁর কাছে নান্নু গাজী সব ঘটনা খুলে বলেন। নান্নুর আগ্রহ ও একাগ্রতা দেখে মুগ্ধ হন মিল্টন মিয়া। পরে তিনি (মিল্টন মিয়া) এ বছর নান্নু গাজীকে হজ পালনের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

মিল্টন মিয়া বলেন, ‘নান্নু গাজী খেটে খাওয়া একজন গরিব মানুষ। কিন্তু তাঁর একাগ্রতা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। আমার কাছে মনে হয়েছে এঁরাই প্রকৃত মানুষ। এ রকম একজন মানুষকে সাহায্য করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।’

স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নান্নু গাজী একজন ভালো মানুষ। বিষয়টি আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। তিনি এ বিষয়ে আমার কাছ থেকে সব সময় পরামর্শ নিয়েছেন। আমি তাঁর জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁর মনের আশা পূরণের পর আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনেন।’ (প্রথম আলো)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১: ৫০ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ

Leave a Reply