ইসলাম

পবিত্র হজ্জ ও ওমরার বিধান : পর্ব -১

‘হজ্জ’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা, উপস্থিত হওয়া, মনোনিবেশ করা ইত্যাদি।

ইসলামের পরিভাষায় মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্ধারিত তারিখে ও যথাযথ নিয়মে কা’বা শরীফ ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ জিয়ারত করাকে হজ্জ বলে।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ পঞ্চম স্তম্ভ। এটি আর্থিক ও দৈহিক ইবাদাত। এতে যেমন অর্থ ব্যয় হয়, তেমনি হয় দৈহিক পরিশ্রমও। তাই দৈহিক ও আর্থিকভাবে সার্মথ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ।

অর্থাৎ বাড়ি থেকে মক্কায় যাতায়াতের যে ব্যয়ভার এবং এ সময়ে স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম, দৈহিক ভাবে সমর্থ, প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ অপরিহার্য।

এ ব্যপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ আদায়করে এবং হজ্জের কার্যাবলি আদায় কালে কোনরূপ অশ্লীলতা ও পাপ কাজে লিপ্ত হয় না, সে যেন নবজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করল।’

হজ্জ ফরজ হওয়ার সাথে সাথে তা পালন না করে কেউ যদি মারা যায়, তাহলে সে মারাত্মক পাপের অধিকারী হবে এবং আখেরাতে ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হবে।

হজ্জের পটভূমি ঃ
হজ্জের রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস ও দীর্ঘ পটভূমি। এর প্রতিটি কাজ ঐতিহাসিক স্মৃতিজিড়িত এবং তাৎপর্যপূর্ণ। জান্নত থেকে পৃথিবীতে আসার পর হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অত্যান্ত ব্যাকুল হয়ে তারা একে অপরকে খুঁজতে থাকেন।

অবশেষে আল্লাহর রহমতে তাঁরা আরাফাতের ময়দানে পরস্পর মিলিত হন। তারই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আদম সন্তানগন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর আরাফাতের প্রান্তরে মিলিত হয়ে আল্লাহর দরবারে গুনাহ মাফের জন্য এবং মহান ¯্রষ্টার সন্তষ্টির জন্য কান্নাকাটি করেন।

তাঁরা হৃদয় নিংড়িয়ে আল্লাহর দিদার লাভের জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করেন। এভাবে সাফা মারওয়ার মধ্যে সাঈ করা, মিনায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে কংকর মারা এবং কুরবানির প্রোক্ষাপট, যা হযরত ইব্রাহিম (আ.) বিবি হাজেরা এবং তাঁদের পূর্ণবান সন্তান হযরত ইসমাইল (আ.) দ্বারা রচিত হয়েছিল আজ থেকে চার হাজার বছর আগে।

এভাবে হযরত আদম (আ.) থেকে আজ পর্যন্ত সকল যুগের আল্লাহ প্রেমিক পাগলপারা নেককার বান্দাগণ পরম ব্যাকুলতার সাথে আল্লাহর ঘর তাওয়াফের মাধ্যমে হাজার হাজার বছরের আতœনিবেদনের মাধ্যমে রচিত হয়েছে হজ্জ ও জিয়ারতের সুবিশাল প্রেক্ষাপট।

আবুল ওয়ালীদ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ আযরুকী রচিত আখবারে মক্কা প্রন্থে বলা হয়েছে সর্বপ্রথম হযরত আদম (আ.) আইতুল্লাহ শরীফে হজ্জ আদায় করেন।

এর পর হযরত নুহ (আ.) সহ অন্যান্য নবী-রাসুলগণ সকলই বাইতুল্লাহ জিয়ারত ও তাওয়াফ করেছেন। হাদীস শরীফে বর্নিত আছে, পুনঃনির্মানের পর হযরত ইব্রাহিম (আ.) জিব্ররাঈল (আ.) এর মাধ্যমে আল্লাহর তরফ থেকে কা’বাগৃহে তাওয়াফ ও হজ্জ পালনের নির্দেশ পান।

এ নির্দেশ পেয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) উভয়ে তাওয়াফসহ হজ্জের যাবতীয় কর্মকান্ড সম্পন্ন করেন। এর পর আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে হজ্জের ঘোষণা গোটা দুনিয়ার মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে আল-কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, এবং মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও, তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীনকায় উষ্টের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ্জ আয়াত – ২৭)

পরের পর্ব ক্লিক/টাচ্ করে পড়ুন- পবিত্র হজ্জ ও ওমরার বিধান : পর্ব -২

About The Author

লেখক- মাও. শামছুদ্দিন
Share