হজের গুরুত্ব ও ফজিলত

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম। হজ শব্দের অর্থ হলো ইচ্ছা করা, দৃঢ় সংকল্প করা। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সান্নিধ্য লাভের আশায় নির্দিষ্ট কার‌্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে পবিত্র কাবা ঘর জিয়ারত করাই হলো হজ। প্রত্যেক সম্পদশালী প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর হজ একটি ফরজ ইবাদত। হজ তিন প্রকার।

১. হজে ইফরাদ : শুধু হজের মৌসুমে হজের নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে হজের করণীয় কাজ সমাপন করাকে হজে ইফরাদ বলে।

২. হজে কিরান : হজের মৌসুমে একসঙ্গে ওমরাহ ও হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে প্রথমে ওমরাহ (পরে ইহরাম না খুলে) একই ইহরামে হজের যাবতীয় কার‌্যাবলি সম্পন্ন করাকে হজে কিরান বলে।
৩. হজে তামাত্তু : হজের মৌসুমে প্রথমে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ করার পর, পরে ইহরাম খুলে নতুনভাবে হজের নিয়ত করে হজের যাবতীয় কার‌্যাবলি সম্পন্ন করাকে তামাত্তু হজ বলে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,‘আর প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে তবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তো নিশ্চয়ই সৃষ্টিকুলের প্রতি মুখাপেক্ষী নন’ (সুরা আলে ইমরান-৯৭)। এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ আদায় করতে হবে। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তুমি মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা প্রচার করে দাও, যাতে তারা তোমার কাছে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় দুর্বল উটের পিঠে করে আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে’ (সুরা হাজ-২৭)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনোরূপ অশ্লীল কথা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ আদায় করল, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এলো’ (বুখারি) সুবহানাল্লাহ। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ, আমরা (মহিলারা) জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। সুতরাং আমরা কি জিহাদে শরিক হব না? তিনি বললেন- না, বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে হজে মাবরুর (বুখারি)।

হজে মাবরুর হলো কবুল হজ। রসুল (সা.) বলেছেন, হজে মাবরুরে প্রতিদান একমাত্র জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ ও ওমরাহ পালন কর’ (সুরা বাকারা-১৯৬)। ‘অতঃপর তারা যেন এখানে এসে তাদের যাবতীয় ময়লা, কালিমা দূর করে, নিজেদের মানতসমূহ পুরো করে, বিশেষ করে তারা যেন এ প্রাচীন ঘরটির তাওয়াফ করে’ (সুরা হাজ-২৯)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) কীভাবে তালবিয়া পাঠ করতেন তা আমি অবশ্যই জানি। তাঁর তালবিয়ার অর্থ ছিল, লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ানি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ হজের ফরজ তিনটি। ১. মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।

২. ৯ জিলহজ তারিখে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা। ৩. ১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়ে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফে জিয়ারত করা। হজের ওয়াজিব ৬টি। ১. ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা। ২. সাফা মারওয়ায় সায়ি করা (সাতবার)। ৩. মিনায় শয়তানকে কঙ্কর মারা। ৪. ইহরাম খোলার জন্য মাথা মুণ্ডানো ৫. বিদায়ী তাওয়াফ করা। ৬. কোরবানি করা। আল্লাহর ঘর কাবাকে তাওয়াফকারীদের জন্য পবিত্র রাখার জন্য আল্লাহ বলেন, ‘আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলন কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং আদেশ দিলাম তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাহকারীদের জন্য পবিত্র কর (সুরা বাকারা-১২৫)।

লেখক : মো.আমিনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার,
১০ জুন ২০২৩