সড়ক পরিবহন আইন গেজেট আকারে পাস হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর। এরপর তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গলেও এখনো আইনটি কার্যকর হয়নি। এখনো নিরাপদ হয়নি সড়ক, বেপরোয়া গতিতে চলছে গাড়ি, প্রতিনিয়ত মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না।
সড়ক পরিবহন আইনে জামিন অযোগ্য ধারা, সাজা ও জরিমানা বৃদ্ধির বিধান থাকায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা শুরু থেকেই আইনটি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছেন। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, বরং আইনটি কার্যকরের আগেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপে সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘এই আইনের ৩৪টি ধারা আমরা সংশোধনের জন্য বলেছিলাম। আইনে শাস্তির বিধানের ক্ষেত্রে আমরা কোনো আপত্তি জানাইনি।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ইউছুব আলী মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের বিষয় আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে মন্ত্রিসভায় সুপারিশ পাঠিয়েছি। তবে কবে থেকে এই আইন কার্যকর হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
বুয়েটের সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মোট ৩ হাজার ৬৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ হাজার ৫৫৮ জন নিহত ও ৪ হাজার ৪৫০ জন আহত হয়েছে। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২ হাজার ৪৫৬টি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৯২৬ জন নিহত ও ৩ হাজার ১২৮ জন আহত হয়েছে। চলতি বছর করোনায় যানবাহন বন্ধ থাকলেও দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বেড়েছে।
এআরআইয়ের দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে আরও উঠে এসেছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দেশের মহাসড়কে প্রায় ৮৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। সোজা মহাসড়কে ৬৩ শতাংশ এবং সড়কের বাঁকে ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে।
এআরআইয়ের পরামর্শ, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পর্যাপ্ত বাঁক রাখতে হবে, তাতে দুর্ঘটনা কমবে। মহাসড়কে দুর্ঘটনায় গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে প্রতি ১০০ জনে ৪৯ পথচারী এবং ৫১ জন গাড়িরচালক, যাত্রীসহ অন্যরা মারা যায়। ঢাকা নগরে দুর্ঘটনায় ৭১ দশমিক ৭২ শতাংশ পথচারী নিহত হয়। বাকি ২৯ শতাংশের মধ্যে আছেন মোটরসাইকেলচালক, যাত্রীসহ অন্যরা। রাজধানীতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয় ৪৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ শুক্রবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি’।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কে রাম্বল স্ট্রিপ, সিসি ক্যামেরা বা স্পিড ক্যামেরা বসানো যেতে পারে। মহাসড়কে নির্ধারিত ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে কেউ গাড়ি চালালে সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী তাঁকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ জন্য অবশ্যই আগে সড়ক পরিবহন আইনের বাস্তবায়ন জরুরি।’
যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত ৬ বছরে ৩১ হাজার ৭৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন নিহত ও ৯১ হাজার ৩৫৮ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২১ সালকে সড়ক নিরাপত্তা দশক ঘোষণা করেছিল। সদস্য দেশগুলো সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনলেও বাংলাদেশ পারেনি।